আর্থিক সাহায্যের নামে প্রতারণা: নেপালের শিশুর ছবিকে মৌলভীবাজারের শিশু বলে প্রচার

33
আর্থিক সাহায্যের নামে প্রতারণা: নেপালের শিশুর ছবিকে মৌলভীবাজারের শিশু বলে প্রচার
আর্থিক সাহায্যের নামে প্রতারণা: নেপালের শিশুর ছবিকে মৌলভীবাজারের শিশু বলে প্রচার

Published on: [September 29,2021]

মৌলভীবাজার এর ৮ মাস বয়সী রুমান নামে অসূস্থ একটি শিশুর ছবি শেয়ার করে শিশুটির জন্য আর্থিক সাহায্য চাওয়া হচ্ছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এটি মৌলভীবাজারের কোনো সাম্প্রতিক ছবি নয়, বরং এটি নেপালের একটি অসূস্থ শিশুর ছবি।

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরনঃ এই নিবন্ধে একটি অসূস্থ শিশুর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এই বিষয়ে সংবেদনশীল পাঠকদের এই নিবন্ধটি এড়িয়ে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

বিভ্রান্তির উৎস

সাম্প্রতিক সময়ে এই ছবিসহ ভাইরাল হওয়া কয়েকটি পোস্ট দেখতে পাবেন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রথমবারের মত এই ছবিসহ পোস্ট বাংলাদেশের ফেসবুক কমিউনিটিতে দেখা গেছে।  ডিসেম্বরের পরে বিভিন্ন সময়েই এই ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে অর্থ সাহায্য চেয়ে পোস্ট করা হয়েছে।

এসব পোস্টে বলা হয়েছে, আসুন আমরা যতটুকু পারি ততটুকু দিয়ে এই ছোট্ট বাচ্চা রুমান কে সুস্থ করে তুলি, অনেক টাকাই আমরা বিভিন্ন আমোদ ফুর্তিতে নষ্ট করে ফেলি। আসুন আমরা ১০০০/৫০০০/ টাকা দিয়ে মনে করবেন আপনার ছেলে বা ছোট্ট ভাই কে দিচ্ছেন সুস্থ হওয়ার জন্য। কিন্তু টাকার অভাবে রুমানের চিকিৎসা করাতে পারছেন না রুমানের বাবা মা। কিন্তু রুমানের অবস্থান দেখে ডাক্তার বলেছেন দ্রুত অপারেশন করালে রুমান পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবে কিন্তু অপারেশন করাতে টাকা লাগবে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার মতো। আসুন আমরা সবাই মিলে সহযোগিতা করি রুমানকে বাঁচানোর জন্য সাহায্য করি। যদি কোন স্বহৃদয় বান ব্যাক্তি সাহায্য পাঠাতে চান তাহলে আপনারা সাহায্য পাঠাতে পারেন।

(রুমানের বাবা মোঃ রুবেল হোসেনের-

নিজ বিকাশ পার্সোনাল নাম্বার  – 01792062536

নিজ বিকাশ পার্সোনাল নাম্বার 01315964822

ঠিকানা-

পিতা মোঃ রুবেল হোসেন

গ্রাম গিয়াস নগর ইউনিনিয়ন গিয়াসনগর –

থানা – সদর- মৌলভীবাজার -জেলা -মৌলভীবাজার

 ছবিটির মূল উৎস

২০২০ সালের ১১শে আগস্ট তারিখে Namaskar United Foundaion এর ফেসবুক পেজে এই ছবিটা পাওয়া যায়।

আন্তর্জাতিক ফান্ড রেইজার সংস্থা ,’গো ফান্ড মি’ তে এই বাচ্চার ছবি এবং বিস্তারিত বর্ণনাও পাওয়া যাচ্ছে।  দেখা যাচ্ছে, এই বাচ্চাটা নেপালের কাঠমুন্ডুর বাসিন্দা। তার নাম Siwansh Awashti । হেপাটিক ফেইলিওর নিয়ে সে ভারতের চেন্নাইয়ের রেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এই পোস্টে তার জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানানো হয়েছে।

অর্থাৎ, প্রমাণিত হচ্ছে যে এই শিশুটি বাংলাদেশের রুমান নয় ,বরং নেপালের Siwansh Awashti

ফোন নাম্বার নিয়ে বিভ্রান্তি

বিকাশ এ সাহায্য পাঠানোর জন্য একেক পোস্টে একেক নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে। 01306313164 , 01315964822 , 01792062536—এই ৩ টি নাম্বার বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

তথ্য যাচাই এর জন্য ফ্যাক্টওয়াচের পক্ষ থেকে এই ৩ টি নাম্বারে কল দেওয়া হলে প্রতিটি নাম্বারই বন্ধ পাওয়া যায়।

অনুসন্ধানে দেখা গেল, 01306313164 নাম্বারটি অতীতেও অন্য একটি বাচ্চার কথিত ‘সাহায্য’ এর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ এর রূপগঞ্জ উপজেলার উত্তর রূপসী তারাব পৌরসভা এলাকার ৫ মাস বয়সী শিশু আরাফাত এর অসূস্থতার দাবি করে এই নাম্বারে সাহায্য চেয়ে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছিল কিছুদিন আগে। সেখানে 01306313164 নাম্বারটিকে আরাফাত এর বাবা জুবায়ের হোসেন এর পার্সনাল বিকাশ নাম্বার বলে দাবি করা হয়েছিল।

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে আরাফাত এর এই অসূস্থতা ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছিল । প্রকৃতপক্ষে আমেরিকার একটি শিশুর ছবি ব্যবহার করে এই সাহায্যের আবেদন জানানো হয়েছিল।

বিভিন্ন সময়ে এমন বেশ কয়েকটি ভুয়া সাহায্যের আবেদনকে ফ্যাক্টওয়াচ সনাক্ত করেছে। এমন কয়েকটি পোস্ট দেখতে পাবেন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে ।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত

মৌলভীবাজারের রুমান এর কথিত ছবিটি বাংলাদেশের কোনো শিশুর নয়, বরং নেপালের একটি শিশুর ছবি এটি। বিদেশী একটি ছবিকে ব্যবহার করে মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে একটি চক্র সাধারন ফেসবুক ব্যবহারকারীর অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এই গুজব তৈরি করেছে বলে ফ্যাক্টওয়াচ মনে করে। সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এ সংক্রান্ত পোস্টকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.