নারী কোটা বাতিল বা মাদ্রাসার জন্য ৩০% কোটা চাইছে জামায়াতে ইসলামী?

134
নারী কোটা বাতিল বা মাদ্রাসার জন্য ৩০% কোটা চাইছে জামায়াতে ইসলামী?
নারী কোটা বাতিল বা মাদ্রাসার জন্য ৩০% কোটা চাইছে জামায়াতে ইসলামী?

Published on: [post_published]

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নাম এবং লোগো সম্বলিত কয়েকটি বিভ্রান্তিকর পোস্টার অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব পোস্টারে বর্ণিত দাবির সাথে একই দিনে জামায়াতে ইসলামীর মূল ওয়েবসাইট এবং ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে বর্ণিত দাবিদাওয়ার মিল নেই। তদুপরি, এসব পোস্টারে দলের নামের বানানেই ভুল দেখা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এ সকল পোস্টার এবং সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পোস্টকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

গুজবের উৎস

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখতে পাবেন এখানে,এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

মূলত, এ ধরনের দু’টি পোস্টার খুজে পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম পোস্টারে দাবি করা হচ্ছে, মাদ্রাসা ছাত্রদের জন্যে ৩০% কোটা দাবি জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান-এর । দ্বিতীয় পোস্টারে দাবি করা হচ্ছে, নারী কোটা বাতিলসহ চাকরিরত নারীদের চাকরি প্রত্যাহার চেয়ে জামায়াতের এক দফা দাবি।

এই দু’টি পোস্টই করা হয়েছে ১৮ই জুলাই তারিখে। একই দিনে নারী কোটা বাতিল চেয়ে ১ দফা দাবি দেওয়া, এবার একই দিনে ভিন্ন দাবি (মাদ্রাসা ছাত্রদের জন্য ৩০% কোটা) উপস্থাপন কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এছাড়া, কোটার সুবিধাপ্রাপ্ত চাকরিরত নারীদেরকে চাকরি হতে অব্যাহতি দেওয়ার দাবিটাও বাস্তবধর্মী নয়।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, গত ১৮ই জুলাই তারিখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিকভাবে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল।

একই সময়ে, ‘দেশের বিদ্যমান এই পরিস্থিতিতে’ তারা ৫ দফা দাবি জানিয়েছিল, যে দাবিগুলো হল-

১। এ পর্যন্ত নিহত সকল ছাত্র হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট খুনিদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২। আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের দাবিসমূহ বিবেচনায় নিয়ে অবিলম্বে তার যৌক্তিক সমাধান করতে হবে।

৩। অবিলম্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মের শিক্ষাজীবন রক্ষা করতে হবে।

৪। যারা সশস্ত্র হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে ও হাজার হাজার ছাত্রকে আহত করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৫। নিহতদের পরিবারকে উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।


অর্থাৎ, ভাইরাল পোসে্ট থাকা দুটি দাবির (নারী কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে এবং মাদ্রাসা ছাত্রদের জন্য ৩০% কোটা রাখতে হবে)সাথে জামায়াতের মূল দাবি-দাওয়ার কোনো মিল দেখা যাচ্ছে না। তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপিত ৫ দফা দাবির মধ্যে নারী কোটা বাতিল বা মাদ্রাসা কোটা ৩০% এর মত কোনো দাবি ছিল না।

                                                       নকল পোস্টারে ব্যবহৃত নাম ও লোগো

এছাড়া, আলোচ্য পোস্টারগুলোর নিচের অংশে হৃস্ব ‘ই’কার ব্যবহার করে সংগঠনের নামের বানান লেখা হয়েছে- ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি’ এবং লোগোর মধ্যে দীর্ঘ ‘ঈ’ কার ব্যবহার করে বানান লেখা রয়েছে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ ।

                                                        মূল পোস্টারে ব্যবহৃত নাম ও লোগো

ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বিভিন্ন পোস্টার পর্যালোচনা করে দেখা গেল, তারা সংগঠনের নাম এবং লোগো উভয় জায়গাতেই দীর্ঘ ‘ঈ’ কার ব্যবহার করে। অর্থাৎ ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ বানানটা লিখে থাকে।

এছাড়া, মূল পেজের পোস্টারের সাথে এই সকল পোস্টারে ব্যবহৃত ফন্টের পার্থক্যও লক্ষনীয়।

সুতরাং প্রতিপাদিত হয় যে, জামায়াতের নামযুক্ত আলোচ্য পোস্টারগুলো ভুয়া, এবং এগুলো মূল জামায়াতে ইসলামীর পোস্টার নয়। এখানে উল্লেখিত দাবিগুলোও জামায়াতে ইসলামীর নয়।

সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এই সকল পোস্টকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

No Factcheck schema data available.