আগামী ২৮শে অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ একাধিক রাজনৈতিক দল মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে। এই মহাসমাবেশের পটভূমিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির অফিসিয়াল প্রেস বিজ্ঞপ্তির আদলে কিছু ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে। বিএনপি’র প্রকৃত প্রেস বিজ্ঞপ্তির সাথে এসব বিজ্ঞপ্তির আঙ্গিকগত মিল থাকলেও সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য দেয়া হচ্ছে এখানে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এগুলোকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে ।
এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ২৮ অক্টোবর ২০২৩, শনিবার রাজধানী ঢাকায় বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে যোগদানের আগে যেসকল নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসবেন, তারা তাদের পরিবারের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে আসবেন।
আমাদের প্রতিজ্ঞা হবে এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করার জন্যে প্রয়োজনে নিজের জীবন বিলিয়ে দিবো। আমাদের মৃত্যু হলেও দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো ইনশাআল্লাহ । ঢাকার মহাসমাবেশে দেশব্যাপী সর্বস্তরের মানুষসহ দলের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ীদের যোগদান করে ১ দফা দাবি আদায়ে দলের পক্ষ থেকে সোচ্চার আওয়াজ তোলার জন্য উদাত্ত আহবান জানানো হলো।
এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এর নয়াপল্টনের সমাবেশে যোগদান করার লক্ষ্যে সারাদেশ থেকে যেসকল নেতাকর্মীরা আগের রাতে ঢাকায় আসবেন, তারা ঢাকার নতুন বাজারে অবস্থিত আমেরিকান দূতাবাসের পাশের মাঠে অবস্থান নিতে পারবেন । নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার লক্ষে উক্ত স্থান নিরাপদ বিবেচনায় এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাই কমান্ড ৷ উক্ত মহাসমাবেশ থেকে ঘোষিত পরবর্তী কর্মসূচি সমূহ সফল করার জন্য দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ২৮ অক্টোবরের পরে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করবেন ।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
গত ২৫শে অক্টোবর মধ্যরাতের একটু পরে Bangladesh Nationalist Party-BNP এবং BNP Media Cell নামক দুইটা ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে ২৪শে অক্টোবরের তারিখ যুক্ত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়, আগামী ২৮ অক্টোবর ২০২৩, শনিবার রাজধানী ঢাকায় বিএনপি’র উদ্যোগে আয়োজিত মহাসমাবেশ সফল করার জন্য ঢাকাসহ দেশব্যাপী সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা স্বত:স্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করবেন।
উক্ত মহাসমাবেশ থেকে ঘোষিত পরবর্তী কর্মসূচি সমূহ সফল করার জন্য দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ২৮ অক্টোবরের পরে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করবেন।
ঢাকার মহাসমাবেশে দেশব্যাপী সর্বস্তরের মানুষসহ দলের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ীদের যোগদান করে ১ দফা দাবি আদায়ে দলের পক্ষ থেকে সোচ্চার আওয়াজ তোলার জন্য উদাত্ত আহবান জানানো হলো।
এই প্রেস বিজ্ঞপ্তির শেষে স্বাক্ষর করেছিলেন এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী , সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব , বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি ।
তবে এই ভেরিফাইড পেজগুলোয় ২৫শে অক্টোবর এ নেতাকর্মীদের পরিবার থেকে চিরবিদায় নিয়ে আসার পরামর্শ সম্বলিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি, কিংবা ২৬শে অক্টোবর আমেরিকান দূতাবাসের পাশে অবস্থানের পরামর্শ সম্বলিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেখা যাচ্ছে না।
মূলধারার গণমাধ্যমেও বিএনপি’র এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি ( আমেরিকান দূতাবাসের পাশে অবস্থান কিংবা নেতাকর্মীদের পরিবার থেকে চিরবিদায়) সম্পর্কিত কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি।
২৪শে অক্টোবর এর প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকেই ২৫ ও ২৬শে অক্টোবর এর প্রেস বিজ্ঞপ্তি তৈরি করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
BNP Media Cell থেকে ইতিমধ্যে ২৫শে অক্টোবর এর প্রেস বিজ্ঞপ্তি (যেখানে নেতাকর্মীদের পরিবার থেকে বিদায় নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে) কে বানোয়াট ও ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এর আগেও, গত ১১ই জুলাই তারিখে বিএনপি’র দাপ্তরিক প্যাড ব্যবহার করে ১২ই জুলাই অনুষ্ঠিতব্য সমাবেশ পেছানোর একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া ২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ‘বিএনপি অফিস’ নামক একটি ইমেইল থেকে রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষর করা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয় । বিএনপি’র পক্ষ থেকে এই দুটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিকেই ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ।
সার্বিক বিবেচনায়, ২৮শে অক্টোবর এর সমাবেশকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া এই দুটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।