“খালেদা জিয়া প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা আমরা একই শিবিরে যুদ্ধ করেছিলাম” শিরোনামে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছবি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের লোগো সম্বলিত একটি স্ক্রিনশট সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে ফটোকার্ডটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন থেকে প্রচারিত হয়নি । মির্জা ফখরুল ইসলাম পূর্বে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করলেও, নির্দিষ্ট কোথাও কোনো সেক্টরে বা শিবিরে নিজেকে সহযোদ্ধা হিসেবে দাবি করেননি । একারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছবি সম্বলিত ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের (Independent Television) ফটোকার্ডটির শিরোনাম ছিলো “খালেদা জিয়া প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা আমরা একই শিবিরে যুদ্ধ করেছিলাম।”
২২ আগস্ট, ২০২৩ তারিখে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ independent24.tv থেকে প্রকাশিত কোলাজ ছবির বাম অংশে ফটোকার্ডটিকে ফেইক হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং ডান অংশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছবি সম্বলিত মূল সংবাদের ছবি দেওয়া হয়।
কমেন্টে পিন করা মূল সংবাদের লিংকে প্রবেশ করলে দেখা যায় ১৯ আগস্ট, ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত সংবাদটির শিরোনাম ছিলো “বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়: ফখরুল।”
মূল সংবাদ থেকে জানা যায় ১৯ আগস্ট, ২০২৩ তারিখে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন “ভারত দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে, এটা কখনোই কাম্য নয়।”
তিনি আরো বলেন “ভারত আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে মার্কিন দপ্তরে চিঠি দিয়েছে বলে শুনেছি। যদি এটি সত্য হয় তাহলে তা দেশের জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবে। দেশে কোন মৌলবাদী দল কখনো ক্ষমতায় আসেনি, ভবিষ্যতেও আসতে পারবে না। জনগণের অধিকার রক্ষায় দেশের মানুষ জেগে উঠেছে, কোন শক্তিই এ গণজোয়ার ঠেকাতে পারবে না।”
“খালেদা জিয়া প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা” এমন কোন মন্তব্য উক্ত নিউজের কোথাও তিনি করেন নি।
ওয়েবসাইট ছাড়াও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে একটি ফটোকার্ড আকারে এই সংবাদটি প্রকাশ করা হয় ১৯শে আগস্ট দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে।
তবে এই ফটোকার্ড থেকে নয়, বরং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিয়ে মূল খবরের স্ক্রিনশট থেকেই মির্জা ফখরুলের ভুয়া উক্তি সম্বলিত স্ক্রিনশট তৈরি করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
মির্জা ফখরুলের উক্ত বক্তব্যটি বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদ মাধ্যম যেমন কালের কণ্ঠ, জাগো নিউজ, পূর্বপশ্চিমে প্রকাশ করা হয়েছিলো। সেগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।
তবে “ খালেদা জিয়া প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা ” এমন বক্তব্য মির্জা ফখরুল ইসলাম পূর্বে দিয়েছেন।
১৪ই ডিসেম্বর, ২০২১ সালে “খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা: মির্জা ফখরুল” শিরোনামে টিবিএস প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মির্জা ফকরুল বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ‘দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ বলে মন্তব্য করেন। তবে কেন খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা তা তিনি ব্যাখ্যা করেননি।
২৫ শে মার্চ, ২০২২ সালে “খালেদা জিয়া প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা: মির্জা ফখরুল” শিরোনামে যুগান্তরে আরো একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। মূল সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে ২৫ শে মার্চ রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন “আমি সবসময় বলার চেষ্টা করেছি আপনাদেরকে যে, দেশে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা কেউ যদি থাকেন তিনি হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাকে (খালেদা জিয়া) আজকে মিথ্যা মামলায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। ৪০ বছর ধরে যিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করলেন তাকে আজকে এই সরকার আটক করে রেখেছে। অসুস্থাবস্থায় তাকে চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না তারা।”
তিনি আরো বলেন “নেত্রী একজন গৃহবধূ ছিলেন। প্রথম জিয়াউর রহমান সাহেবের বিদ্রোহের পরে তার স্ত্রী তিনি সেদিন যখন সোয়াত জাহাজের দিকে এগোচ্ছিলেন, তখন পাকিস্তানি কমান্ডার আমাদের অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডার সোহরাব হোসেন সেনাবাহিনীর সৈনিকদের নিরাস্ত্র করবার চেষ্টা করছিলেন, সেই সময়ে কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রথম বলেছিলেন, তোমরা অস্ত্র সমর্পণ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না জিয়াউর রহমান ফিরে আসেন। এই দিয়ে তার (যুদ্ধ) শুরু। আমাদের দলের নেতা তারেক রহমান সাহেবও ওই সময় কিন্তু তার ছোট ভাইসহ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বন্দি ছিলেন। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধে ওই ছোট মানুষটির অবদানও কেউ অস্বীকার করার উপায় নেই। এই নেতাকে আজকে দেশে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না।”
যুগান্তর ছাড়াও প্রথম আলো, সমকালেও উক্ত সংবাদটি পাওয়া যাচ্ছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলামকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি।
সারমর্ম
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ফটোকার্ডে থাকা “খালেদা জিয়া প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা আমরা একই শিবিরে যুদ্ধ করেছিলাম” শিরোনামটি ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এডিট করে তৈরি করা হয়েছে। তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম পূর্বে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে বেগম খালেদা জিয়া তার তার শিবিরে থেকে যুদ্ধ করেছেন এমন মন্তব্য কোথাও করেন নি। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোন বক্তব্য তিনি দেননি। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।