দৈনিক প্রথম আলো এর একটি ফটোকার্ডকে কেন্দ্র করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে উক্ত পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা এবং সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেফতারের পরিপ্রেক্ষিতে দ্য ডেইলি স্টার এর সম্পাদক মাহফুজ আনাম “সাংবাদিকেরাই কেবল সাংবাদিকতাকে বাঁচাতে পারেন” শিরোনামে প্রথম আলো তে একটি কলাম প্রকাশ করেন। উক্ত কলামটি থেকে তৈরি বেশকিছু ফটোকার্ড প্রথম আলো এর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেইজে গত ৮ই এপ্রিল ২০২৩ এ শেয়ার করা হয়। উক্ত ফটোকার্ডগুলোর মন্তব্যকে বিকৃত করে বিএনপি এবং তারেক জিয়ার নাম ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে কিছু পেইজ যা থেকে মনে হতে পারে যে, মাহফুজ আনাম প্রকৃতই এসব কথা বলেছেন। সঙ্গত কারণেই ফ্যাক্টওয়াচ ঐসকল পেইজ থেকে শেয়ারকৃত পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
বিভিন্ন পেজ থেকে শেয়ারকৃত ফটোকার্ডগুলোর উৎস অনুসন্ধান করতে আমরা প্রথম আলোরসোশ্যাল মিডিয়া পেইজ এবং ওয়েবসাইট অনুসন্ধান করি। এই সুবাদে প্রথম আলোর সোশ্যাল মিডিয়া পেজ থেকে গত ৮ই এপ্রিল ২০২৩ এ শেয়ারকৃত কিছু ফটোকার্ড খুঁজে পাই। এই ফটোকার্ডগুলোর মন্তব্যকেই বিকৃত করে বিএনপি এবং তারেক জিয়ার নাম ব্যবহার করে শেয়ার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রথম আলো এর ফটোকার্ডগুলো মাহফুজ আনাম এর “সাংবাদিকেরাই কেবল সাংবাদিকতাকে বাঁচাতে পারেন” শিরোনামের কলাম থেকে তৈরি করা হয়েছে। এখন দেখা যাক প্রথম আলো এর সামাজিক মাধ্যমের পেইজ থেকে শেয়ারকৃত ফটোকার্ডগুলোর মন্তব্যের সাথে বিকৃত করা ফটোকার্ডগুলোর মন্তব্যের কি পার্থক্য রয়েছে।
বিকৃত ফটোকার্ড এক:
Hash Tag BNP নামক সামাজিক মাধ্যমের একটি পেইজে একটি ফটোকার্ড দেখতে পাওয়া যায় যেখানে দেখা যাচ্ছে দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলছেন,
“স্বাধীনতার পূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে তারেক জিয়াকে দেশে এনে রাজনীতি করতে দেওয়া প্রয়োজন।”
উক্ত ফটোকার্ডটির নিচের অংশে লেখা কলাম এবং প্রকাশের তারিখ নির্দেশ করছে যে মন্তব্যটি ৭ই এপ্রিল ২০২৩ এ প্রকাশিত একটি কলাম থেকে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা প্রথম আলো এর সামাজিক মাধ্যম পেইজ থেকে ৮ই এপ্রিল ২০২৩ এ প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড এবং ঐ ফটোকার্ডের সাথে যুক্ত একটি লিংক খুঁজে পাই যা আমাদের মাহফুজ আনামের লেখা কলামটির সন্ধান দেয়। উক্ত কলামটিতে আমরা একটি বাক্য খুঁজে পাই যা ব্যবহার করে প্রথম আলো ফটোকার্ডটি তৈরি করেছিলো। বাক্যটি ছিলো এরকম:
“স্বাধীনতার পূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে একটি সমাজে মুক্ত সাংবাদিকতা প্রয়োজন।”
উক্ত বাক্যটিকেই বিকৃত করে “মুক্ত সাংবাদিকতার প্রয়োজনকে” পরিবর্তন করে “তারেক জিয়াকে দেশে এনে রাজনীতি করতে দেওয়া প্রয়োজন” লিখে শেয়ার করা হয়েছে। তাছাড়া, প্রথম আলো এর আসল ফটোকার্ডটি এবং বিকৃত করে শেয়ার করা ফটোকার্ডটির বাংলা ফন্ট ডিজাইনের মধ্যেও অসামঞ্জস্য লক্ষ্য করা গেছে।
Image: Edited Photocard
Image: Original Photocard
বিকৃত ফটোকার্ড দুই:
Fans of Elias Hossain নামক সামাজিক মাধ্যমের একটি পেইজ থেকে আরেকটি ফটোকার্ড দেখতে পাওয়া যায় যেখানে মাহফুজ আনাম মন্তব্য করেছেন,
“বিএনপির সিনিয়র নেতারাই কেবল প্রথম আলোকে বাঁচাতে পারে।”
আমরা মাহফুজ আনামের ঐ কলামটির একদম শেষ অনুচ্ছেদে একটি বাক্য খুঁজে পাই যা ব্যবহার করে প্রথম আলো একটি ফটোকার্ড তৈরি করে। বাক্যটিতে বলা আছে:
“সাংবাদিকতাকে শুধু সাংবাদিকেরাই বাঁচাতে পারেন।”
উক্ত বাক্যটিকে বিকৃত করে “সাংবাদিকরা” এবং “সাংবাদিকতা” শব্দ দুটো পরিবর্তন করে “বিএনপির সিনিয়র নেতারা” এবং “প্রথম আলো” ব্যবহার করে বিভিন্ন পেইজে শেয়ার করা হয়েছে। তাছাড়া, প্রথম আলো–র আসল ফটোকার্ডটিতে মাহফুজ আনামের উক্ত কলামটি থেকে আরও কিছু মন্তব্য ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন:
“একটি মুক্ত গণমাধ্যম হিসেবে যে ভূমিকা পালন করার কথা, প্রথম আলো তা–ই করেছে। পত্রিকাটি ক্ষমতাসীনদের ‘ওয়াচডগ’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।”
অন্যদিকে, বিকৃত করা ফটোকার্ডটিতে বলা হয়েছে,
“বিএনপি ছাড়া আর কেউ চায় না আমরা সাংবাদিকতা করি। আমরাই দেশবিরোধী সংবাদ এবং গুজব ছড়াই। এখানেই আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ এবং বাজেট কম দিলেও আমাদের সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে।”
এখানেও দুটো ফটোকার্ডের মাঝে বাংলা ফন্ট ডিজাইনের অসামঞ্জস্য দেখা গেছে।
Image: Edited Photocard
Image: Original Photocard
বিকৃত ফটোকার্ড তিন:
Hash Tag BNP নামক সামাজিক মাধ্যম পেইজটিতে আরও একটি ফটোকার্ড দেখতে পাওয়া গেছে যেখানে মাহফুজ আনামেরনামে উদ্ধৃতি আছে, “সাংবাদিকদের মনে প্রশ্ন ওঠা উচিৎ, জনমানুষের কাছে ধিকৃত ও বর্জনযোগ্য পলাতক তারেক জিয়াকে দেশে আনার জন্য প্রথম আলো সম্পাদক কেন এত উঠেপড়ে লাগলেন?” অথচ মাহফুজ আনামের কলাম থেকে প্রথম আলোযেফটোকার্ড তৈরি করেছে, সেখানে বাক্যটি ছিলো “সাংবাদিকদের মনে প্রশ্ন ওঠা উচিত, জনমানুষের কাছে সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য বাংলা দৈনিকটিকে হেয় করার জন্য আমাদেরই অনেকে কেন এত উঠেপড়ে লাগলেন?” উক্ত বাক্যটিকে বিকৃত করে “সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য বাংলা দৈনিকটি” পরিবর্তন করে “ধিকৃত ও বর্জনযোগ্য পলাতক তারেক জিয়াকে দেশে আনার জন্য প্রথম আলো সম্পাদক কেন এত উঠেপড়ে লাগলেন” ব্যবহার করে শেয়ার করা হয়েছে। এখানেও দুটো ফটোকার্ডের মাঝে বাংলা ফন্ট ডিজাইনের অসামঞ্জস্যতা দেখা গেছে।
Image: Edited Photocard
Image: Original Photocard
অতএব, দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের লেখা একটি কলাম ব্যবহার করে তৈরি কিছু ফটোকার্ড এর মন্তব্যকে বিকৃত করে সেখানে বিএনপি এবং তারেক জিয়ার নাম ব্যবহার করে সেগুলো সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন পেইজে শেয়ার করা হয়েছে যা আদতে মাহফুজ আনাম বলেননি।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?