সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে “সাকিব তোর মেয়ের সাথে তামিমের ছেলের বিয়ে দে, ঝামেলা মিটমাট! হাসতে হাসতে শেষ সাকিব-তামিম” – শিরোনাম সংবলিত একটি ভিডিও শেয়ার হতে দেখা গেছে। উক্ত শিরোনামটি পড়ে মনে হচ্ছে, ভিডিওতে মাশরাফি তামিমের ছেলের সাথে সাকিবের মেয়ের বিয়ে দিয়ে তাদের মাঝে যে “ঝামেলা” আছে সেটা মিটমাট করে ফেলতে বলছেন! তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলোচিত ভিডিওটি সম্পাদিত। মূল ভিডিওতে তামিম, মাশরাফি, এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একজন কম্পিউটার অ্যানালিস্ট ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না। অন্যদিকে, আলোচিত ভিডিওটিতে সাকিবের অংশটুকু অন্য একটি ভিডিও থেকে কেটে এনে জুড়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, তামিম এবং মাশরাফির আড্ডায় সাকিব উপস্থিতই ছিলেন না এবং মাশরাফি তামিমকে তার ছেলের সাথে সাকিবের মেয়ের বিয়ে দিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলার কথাও বলেননি। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
আমাদের আলোচিত ভিডিওটির এক পর্যায়ে তামিম মাশরাফিকে বলেন, সে এমন একজনকে এই আড্ডায় যুক্ত করতে যাচ্ছেন যার সাথে তারা দুজনই বেশ পরিচিত এবং অনেক আড্ডা দিয়েছেন। পরমুহূর্তেই ভিডিওটিতে সাকিব আল হাসান উপস্থিত হন। এই সময় মাশরাফিকে “আসসালামু আলাইকুম কাপ্তান সাহেব” বলতে শোনা যায়। তখন তামিম জবাব দেন, “ক্যাপ্টেন হলেন একজনই। সেটা হলো মাশরাফি মর্তুজা।” আলোচিত ভিডিওটির আরেক পর্যায়ে মাশরাফি তামিমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তুই সবাইকে সরি বল। আমি তো এই বিষয়ে এক্সপার্ট। সব ঝামেলা তো তুই-ই বাঁধাইছিস।” এরপর মাশরাফি এবং তামিম একে অপরের পরিবারের খোঁজ-খবর নেন এবং মাশরাফি তামিমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তোদের কিন্তু ভালো চান্স আছে!” মূলত এই শেষ লাইনটির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির শিরোনাম তৈরি করা হয়েছে, যেখানে তামিমের ছেলের সাথে সাকিবের মেয়ের বিয়ে দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা!
এবার সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির সাথে সংশ্লিষ্ট দাবিটি যথাযথ কিনা তা যাচাই করতে আমরা উক্ত ভিডিওটির উৎস অনুসন্ধান করি। আমাদের অনুসন্ধানে তামিম ইকবালের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল থেকে গত ০৪ এবং ০৫ মে ২০২০ এ প্রকাশিত দুটো ভিডিও পাওয়া গেছে। “Tamim Iqbal Live with Mashrafe Bin Mortaza” – শিরোনামের ঐ ভিডিওটিতে তামিম এবং মাশরাফি একটি অনলাইন আড্ডায় যুক্ত ছিলেন। টেকনিক্যাল ইস্যুর কারণে মাশরাফি আড্ডায় যুক্ত হতে বিলম্ব করেন এবং আড্ডার এক পর্যায়ে তিনি ঠাট্টা করে তামিমকে বলেন, “তুই সবাইকে সরি বল। আমি তো এই বিষয়ে খুব এক্সপার্ট। দুইটা ফোনে ট্রাই করে ক্যামেরা অন হচ্ছিলো না। সব ঝামেলা তো তুই-ই বাঁধায় দিস।” তখন তামিম বলেন, “আমি বাঁধাইছি ভাই? ভালো মোবাইল কিনেন। আজেবাজে ব্রিটিশ আমলের মোবাইল ব্যবহার করলে তো এমন হবেই!” আড্ডার আরেক পর্যায়ে তামিম মাশরাফিকে বলেন সে এমন একজনকে এই আড্ডায় যুক্ত করতে যাচ্ছেন যার সাথে তারা দুজনই বেশ পরিচিত। এর কিছুক্ষণ পরেই ভিডিওতে একজন ব্যক্তি উপস্থিত হন, যাকে তামিম ভারতের একজন কম্পিউটার অ্যানালিস্ট হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন এবং যিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাথে কাজ করেছিলেন। ঐ ব্যক্তির নামটি পুরো ভিডিওতে স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করা হয়নি বিধায় আমরা সেটি উল্লেখ করছি না। তবে তামিম এবং মাশরাফি তাকে “শ্রী” বলে সম্বোধন করছিলেন। মূল ভিডিওতে আড্ডার একদম শেষদিকে তামিম এবং মাশরাফি একে অপরের পরিবারের খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন এবং ঐ সময় মাশরাফি তামিমকে ঠাট্টাচ্ছলে বলেন, “তোদের কিন্তু ভালো চান্স আছে!” – যা অন্য একটি ব্যাপারের দিকে ইঙ্গিত করছিল।
অন্যদিকে, আলোচিত ভিডিওটিতে সাকিবের অংশটুকু কোথা নেয়া হয়েছিল তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা দারাজ বাংলাদেশ এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে একটি ভিডিও খুঁজে পেয়েছি। “Shakib Al Hasan Live Adda | Daraz Bangladesh” – শিরোনামের এই ভিডিওতে দৃশ্যমান সাকিবের বেশভূষার সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল লক্ষ্য করা গেছে। অর্থাৎ, দারাজের সাথে সাকিবের আড্ডার ভিডিওটি থেকে কিছু অংশ কেটে আলোচিত ভিডিওটিতে জুড়ে দেয়া হয়েছিল।
অতএব, উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, মাশরাফি তামিমের ছেলের সাথে সাকিবের মেয়ের বিয়ে দিয়ে তাদের মাঝে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে বলেছেন – শীর্ষক যে দাবিটি করা হচ্ছে সেটি সঠিক নয়। তাছাড়া, তামিম এবং মাশরাফির আড্ডায় সাকিব সেদিন উপস্থিতই ছিলেন না।
উল্লেখ্য, গতবছর ২০২৩ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পূ্র্বে দল ঘোষণা করা হয় এবং দলে তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে গুঞ্জন শুরু হয় যে, তামিম এবং সাকিবের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব চলছে! মূলত সেই ব্যাপারটিকে পুঁজি করে সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির সাথে সংশ্লিষ্ট দাবিকে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।