যা দাবি করা হচ্ছেঃ সময় টিভি, বিবিসি বাংলা এবং যমুনা টিভির নামে “বাংলাদেশের নারীদের ভারতের যৌনপল্লীতে বিক্রি” শীর্ষক কিছু ফটোকার্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। সময় টিভি এবং যমুনা টিভির নামে প্রচার করা ফটোকার্ডের শিরোনাম হচ্ছে “বাংলাদেশের ৬৮ হাজার নারীকে ভারতের যৌনপল্লীতে বিক্রি”। কিন্তু বিবিসি বাংলার নামে প্রচার হওয়া ফটোকার্ডে এই সংখ্যা হচ্ছে ১৪ হাজার। সেখানে এই তথ্যের উৎস হিসেবে ৮ ডিসেম্বর ২০২২-এ প্রকাশিত বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়।
অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ দাবিটি মিথ্যা। সময় টিভি বিবিসি বাংলা এবং যমুনা টিভির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে অনুসন্ধান করে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, এই সংবাদমাধ্যম সহ অন্য কোনো মূলধারার সংবাদমাধ্যমের এমন কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে বিবিসি বাংলার যে প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটা মূলত বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ভারতে পাচার হওয়া ১৪ হাজার নারীদের নিয়ে যৌন ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া একটি অপরাধী চক্রের ভারতে গ্রেফতার হওয়া বিষয়ে। সেই প্রতিবেদনে পাচার হওয়া ১৪ হাজার নারীদের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন বাংলাদেশি বলে প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়।`
সময় টিভি, যমুনা টিভি এবং বিবিসি বাংলার নামে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডগুলো খেয়াল করে দেখলে শুরুতেই কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যাবে। সংবাদমাধ্যমগুলোর আসল ফটোকার্ডের লেআউট, টেক্সটের ফন্ট এবং ডিজাইনের সাথে ভাইরাল ফটোকার্ডগুলোর অনেক ভিন্নতা রয়েছে। আবার, বিবিসি বাংলা ছাড়া বাকি দুইটি ফটোকার্ডে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২২ এপ্রিল ২০২৪। কিন্তু এই তারিখে সংবাদমাধ্যম দুইটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে “বাংলাদেশের ৬৮ হাজার নারীকে ভারতের যৌনপল্লীতে বিক্রি” শিরোনামের কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, বিবিসি নিউজ বাংলা নামে প্রচার হওয়া ফটোকার্ডে দাবি করা হয় যে, ১৪ হাজার বাংলাদেশি নারীকে ভারতের যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। সেখানে এই তথ্যের উৎস হিসেবে বিবিসি বাংলার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ৮ ডিসেম্বর ২০২২-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়। প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে বিবিসি বাংলার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ৮ ডিসেম্বর ২০২২-এ প্রকাশিত “ভারতে পাচারের শিকার ১৪ হাজার নারীকে দিয়ে যেভাবে চলছিল যৌন ব্যবসা” শীর্ষক একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে সাইবারাবাদ পুলিশের অপরাধ দমন শাখার প্রধান কভিথা দারার বরাত দিয়ে জানানো হয় যে, এই ১৪ হাজার নারী বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ভারতে পাচারের শিকার, যাদেরকে নিয়ে যৌন ব্যবসা পরিচালনা করত ভারতের একটি অপরাধী চক্র। এই ১৪ হাজার নারীদের মধ্যে বাংলাদেশি ছিল প্রায় ৪০০ জন।
তাছাড়া, মূলধারার সংবাদমাধ্যমের এমন কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি যার মাধ্যমে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বাংলাদেশের ৬৮ হাজার নারীকে ভারতের যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। যদিও, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বহু মেয়েকে উন্নত জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারতে যৌনকর্মী হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই সংখ্যা আসলে কত তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম থেকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের নারীদের ভারতের যৌন পল্লীতে বিক্রি হওয়া সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোষ্টগুলোকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।