পুলিশ বাহিনীতে ভারতীয় নাগরিক — এমন কোন খবর প্রকাশ করেনি প্রথম আলো

91
পুলিশ বাহিনীতে ভারতীয় নাগরিক — এমন কোন খবর প্রকাশ করেনি প্রথম আলো
পুলিশ বাহিনীতে ভারতীয় নাগরিক — এমন কোন খবর প্রকাশ করেনি প্রথম আলো

জহিরুল ইসলাম

Published on: [post_published]

যা দাবি করা হচ্ছে : দৈনিক প্রথম আলোর বরাতে দাবি করা হচ্ছে, বহু পুলিশ চাকুরিতে যোগদান করেননি! কারণ তারা ছিলো ভারতীয় নাগরিক!

যা পাওয়া যাচ্ছে : দৈনিক প্রথম আলোতে এমন কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি। অন্য কিছু সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে যে ৫ই আগস্টে-পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে থানা ছেড়ে চলে যাওয়া এবং পরবর্তীতে কর্মবিরতি পালন করার  পরে এখনো অনেক পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে ফিরে আসেননি। তবে এদের কাজে যোগ না দেওয়ার সাথে ভারতীয় কোনো সংযোগ কোনো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি।

গুজবের উৎস

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখতে পাবেন এখানে , এখানে ,এখানে ,এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে, এখানে , এখানে , এখানে, এখানে



অনুসন্ধান

১৭ই আগস্ট তারিখে দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত কর্মস্থলে ফেরেনি অনেক পুলিশ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে,

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার জেরে আত্মগোপনে থাকা পুলিশের কর্মবিরতির পর দেশের সব থানায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে পুলিশের অনেক সদস্য এখনো কর্মস্থলে যোগ দেননি। অনেকে এখনো ট্রমায় ভুগছেন।………

ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সদর দপ্তরের ক্রাইম বিভাগ ও প্রশাসন বিভাগসহ দু-একটি ইউনিটের সদস্যরা পুরোদমে অফিস করছেন। তবে আরো বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ থানা পুলিশের অনেক সদস্য এখনো ঠিকমতো কাজে যোগদান করেননি। তাদের মধ্যে অনেক সদস্য এরই মধ্যে মামলার আসামি হয়েছেন। সহিংসতার ঘটনায় অনেকে মানসিক আঘাত বা ট্রমায় ভুগছেন। ……………………………

পুলিশ সূত্র জানায়, থানাগুলোতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দিয়েছেন।

১৯শে আগস্ট তারিখে দৈনিক কালবেলাতে প্রকাশিত কাজে ফিরলেও মনোবল ফেরেনি পুলিশের শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যুত্থানের পর গত ১২ আগস্ট থেকে থানায় ফিরতে থাকে পুলিশ। প্রথম দিন কেউ কেউ ফিরলেও অধিকাংশ কাজে যোগদান করেন ১৫ আগস্ট, বৃহস্পতিবার।

২০শে আগস্ট তারিখে দৈনিক ইত্তেফাক এ প্রকাশিত গতি নেই পুলিশের কার্যক্রমে শীর্ষক প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, ডিএমপির ৫০টি থানার মধ্যে সবগুলো থানার অপারেশনাল কাজ বাদে যানবাহন ছাড়াই কার্যক্রম স্বল্প পরিসরে শুরু হয়েছে। থানায় কর্মরত কনস্টেবল, এএসআই, এসআই, পরিদর্শকসহ যোগদান করেছেন। তবে এখনো স্বল্পসংখ্যক পুলিশ সদস্য অনুপস্থিত রয়েছেন। কিছু পুলিশ সদস্য আহতও রয়েছে।

অর্থাৎ, এ সকল প্রতিবেদন থেকে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে অধিকাংশ পুলিশ সদস্য চাকরিতে যোগদান করেছেন । কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কাজে যোগদান করেছেন। যারা অনুপস্থিত রয়েছেন, তাদের অনুপস্থিতির কারন হিসেবে শারীরিক ও মানসিক অসূস্থতা, এবং মামলার কারণে পালিয়ে থাকাকে অনেকে দাবি করছেন। এবং এসব অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে ভারতের কোনো সংশ্লিষ্টতার কথা কোনো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি।

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ৮০ হাজার ভারতীয় পুলিশ সদস্য চাকরি করেন- এমন একটা গুজব জনমনে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত আছে। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। ২০২৩ সালের ১৩ই জুন তারিখে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছিলেন , বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্বের ১১৫টি দেশের ২০,৯৮৮ জন বিদেশি নাগরিক ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ করছেন। এর মধ্যে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি চীনের নাগরিক। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারতীয়রা। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিরা শিল্পকারখানা, উন্নয়ন প্রকল্প, এনজিও, আইএনজিও এবং বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করছেন বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তবে পুলিশ বিভাগে, বা কোনো সরকারী দপ্তরে কোনো বিদেশী নাগরিক কাজ করছেন- এমন কোনো তথ্য স্বরাষ্টমন্ত্রী দেননি।

বাংলাদেশ পুলিশ এর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো লক্ষ করে দেখা গিয়েছে, এখানে  বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিকদের কাছ থেকেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আহবান করা হয়েছে। ফলে কোনো বিদেশী নাগরিকের এখানে আবেদন করার, বা চাকরিপ্রাপ্তির সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে ফ্যাক্টওয়াচ এর পুরনো প্রতিবেদনটি পড়তে পারবেন এখান থেকে- বাংলাদেশ পুলিশে ভারতীয় নাগরিক নিয়োগের ভুয়া দাবি

প্রথম আলোকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ‘বহু পুলিশ চাকুরিতে যোগদান করেননি! কারণ তারা ছিলো ভারতীয় নাগরিক’ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে, প্রথম আলোর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে ২০শে আগস্ট দুপুর ২ টা ৩৭ মিনিটে প্রকাশিত একটি পোস্টে জানানো হয়, প্রথম আলোর নামে ছড়ানো এই তথ্যটি ভুয়া। আমাদের প্রকাশিত নয়।

সঙ্গত কারনে ফেসবুকে প্রথম আলোর বরাতে ছড়িয়ে পড়া এ সকল পোস্টকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh