সাম্প্রতিক সময়ে একটি ভিডিও পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভাইরাল পোস্টে বলা হয় রাতের আঁধারে ৮টি হিন্দুদের বাড়িঘর এবং দোকানে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয়। কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে ভিডিওকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে প্রচার করছে, সেটি আসলে নরসিংদীর ঘোড়াশালের একটি বাজারে লাগা আগুনের ভিডিও। তাছাড়া ভৈরবে যে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, সেটি সাম্প্রদায়িক হামলা নয় বলে জানা গেছে মূলধারার সংবাদমাধ্যম থেকে।
গুজবের উৎস
গত ২৩ আগস্ট, ২০২২ তারিখ থেকে ফেসবুকে ৪ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে এবং দমকল বাহিনী তা নেভানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। ভাইরাল ভিডিওগুলোর ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মুসলমানরা হিন্দুদের উপর এবং তাদের বাড়িঘরের উপর হামলা চালিয়েছে। পোস্টে আরো বলা হয় কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার চণ্ডিবেড় গ্রামে রাতের আঁধারে হিন্দুদের ৮টি বাড়ি এবং দোকানে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয়।
ইমেজ সার্চ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায় একই ধরণের ভিডিও Narsingdir Konthosor নামক ফেসবুক পেজ থেকে ২২ আগস্ট আপলোড করা হয়েছে। সেখানে দাবি করা হচ্ছে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি নরসিংদীর ঘোড়াশালে ঘটেছে।
অন্য কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারীও এই ভিডিও আপলোড করেছিলেন, এবং তারাও ক্যাপশনে নরসিংদীর ঘোড়াশালের কথাই লিখেছেন। যেমন- দেখুন এখানে , এখানে ।
নরসিংদীর ঘোড়াশালে আগুন লাগার সত্যতা পাওয়া যায় ২২ আগস্ট, ২০২২ তারিখে প্রকাশিত প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার একটি অনলাইন প্রতিবেদনের মাধ্যমে। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয় নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে আগুনে ৪টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ২১ আগস্ট রবিবার রাত সোয়া তিনটার দিকে ধলাদিয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্র জানা যায়, রাতে বাজারের একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। খবর পেয়ে পলাশ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট সেখানে আসে এবং প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
উপরোক্ত তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে বলা যায় ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কোন সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার ভিডিও না। এটা নরসিংদীর ঘোড়াশালে আগুনে দোকান পুড়ে যাওয়ার ভিডিও।
কিশোরগঞ্জে অগ্নিকান্ড
একই দিনে , অর্থাৎ ২৩শে আগস্ট সোমবার কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার চন্ডিবেড় এলাকায় সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
তবে এ সংক্রান্ত যে ছবি এবং ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে, তার সাথে ভাইরাল ভিডিও’র মিল নেই।
জনৈক Md Alamin এর আপলোড করা ভিডিও থেকে জানা যাচ্ছে, কিশোরকে মারধোরের জেরে সোমবার পলতাকান্দা ও চন্ডিবের এই দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বসতঘর ও ৩ টি দোকানে অগ্নিসংযোগ সহ ভাংচুর শুরু হয়।
এন টিভি’র এই খবরে জানানো হচ্ছে, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে স্কুলশিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষের ৩০ জন আহত হয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকটি দোকান ও বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় ওই সব দোকান ও বাড়িঘরে।
পুলিশ ওএলাকাবাসীজানায়, পলতাকান্দাগ্রামেরস্কুলপড়ুয়াএকশিক্ষার্থীকেআসা–যাওয়ারপথেচণ্ডীবেরগ্রামেরবখাটেকয়েকযুবকউত্ত্যক্তকরেআসছিল।এরইজেরধরেগতকালরাতেসংঘর্ষবাধে।এসময়উভয়পক্ষেরলোকজনেরমধ্যেধাওয়া–পাল্টাধাওয়ারঘটনাঘটে।একপর্যায়েপলতাকান্দাগ্রামেরলোকজনচণ্ডীবেরগ্রামেরলোকজনেরব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেঅগ্নিসংযোগসহবাড়িঘরেভাঙচুরওলুটপাটশুরুকরে।সংঘর্ষেরঘটনায়আজমঙ্গলবারসকালেরাস্তাআটকেদেয়চণ্ডীবেরগ্রামেরলোকজন।ফলেভোগান্তিতেপড়েনএপথেচলাচলকারীযানসহপলতাকান্দাওকালীপুরগ্রামেরলোকজন।পৌরমেয়রেরনির্দেশেপরেরাস্তাটিখুলেদেওয়াহয়।
একই রকম খবর দিচ্ছে আর টিভি , বাংলাদেশ প্রতিদিন , দৈনিক শিক্ষা ইত্যাদি সংবাদমাধ্যম । এসব খবরে কোথাও এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে অভিহিত করা হয়নি।
প্রথম আলো’র ময়মনসিংহ সংস্করণে প্রকাশিত এই খবরে দেখা যাচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্থ দোকানীদের মধ্যে রয়েছে সুমন বর্মণ, সুবল বর্মণ, ইলিয়াস কাজী, উজ্জ্বল মোল্লা প্রমুখ । অর্থাৎ এ সংঘর্ষে উভয় সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কেবলমাত্র নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়ের বাড়ি বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি, যেমনটা দাবি করা হয়েছে ভাইরাল পোস্টগুলোতে।
সারমর্ম
নরসিংদীর ঘোড়াশালে দোকানে আগুন লাগার ঘটনার ভিডিওকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের সাম্প্রদায়িক হামলা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে অনুরূপ একটি ঘটনা ঘটলেও সেটি সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?