অগ্নিকাণ্ডের পুরানো ভিডিওকে হিন্দুদের দোকানে আগুন দেয়ার ঘটনা বলে দাবি

181
অগ্নিকাণ্ডের পুরানো ভিডিওকে হিন্দুদের দোকানে আগুন দেয়ার ঘটনা বলে দাবি
অগ্নিকাণ্ডের পুরানো ভিডিওকে হিন্দুদের দোকানে আগুন দেয়ার ঘটনা বলে দাবি

মোহাম্মদ আরাফাত

Published on: [post_published]

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও দেখিয়ে দাবি করা হচ্ছে, লক্ষ্মীপুরে মজু চৌধুরীর হাটে হিন্দুদের দোকানে আগুন দেয়া হয়েছে। ভিডিওর সাথে সংশ্লিষ্ট ক্যাপশন পড়ে মনে হচ্ছে এটি সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা। তবে ফ্যাক্টওয়াচ টিম অনুসন্ধান করে দেখেছে, এটি গত ১১ জুলাই ২০২৪ এ লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাটে আগুন লাগার ঘটনার ভিডিও। সেই সময় প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম মারফত জানা গেছে গত ১১ জুলাই ২০২৪ এ লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাটে আগুন লেগেছিল। ইউটিউব থেকে প্রাপ্ত একটি ভিডিও এবং আমাদের আলোচিত ভিডিওটি ভালোভাবে পর্যালোচনা করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। উল্লেখ্য, আমাদের আলোচিত ভিডিওটির অনুরূপ অনেকগুলো ভিডিও ইউটিউবে পাওয়া গেছে যেগুলো ১১ জুলাই বা তারপরে প্রকাশিত হয়েছিল। ১১ জুলাইয়ের আগে এরকম ভিডিওর কোন অস্তিত্ব ইন্টারনেটে পাওয়া যায়নি। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে। 

অনুসন্ধান:

মজু চৌধুরীর হাটে আগুন লাগার ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের কিনা তা যাচাই করতে আমরা আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করেছি। আমাদের অনুসন্ধানে “Uk sifat 007” নামক একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে গত ১১ জুলাই ২০২৪ এ প্রকাশিত “লক্ষ্মীপুর মজু চৌধুরীর হাট জিরো পয়েন্ট রোড মার্কেটে আগুন লেগে সব জইলা ছাই হয়ে গেছে”  – শিরোনাম সংবলিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া গেছে। পুরো ভিডিওটি দেখে বুঝা গেছে এটি যে স্থানে ধারণ করা হয়েছিল তার সাথে আমাদের আলোচিত ভিডিওটিতে দৃশ্যমান স্থানের পারিপার্শ্বিক অবস্থার বেশ মিল রয়েছে। ইউটিউবে প্রাপ্ত লক্ষ্মীপুর মজু চৌধুরীর হাট জিরো পয়েন্ট রোড মার্কেটে আগুন লাগার ভিডিওটিতে দৃশ্যমান মার্কেটের যে পাশটি অক্ষত রয়েছিল বা ভিডিও ধারণকারীর বামপাশের কয়েকটি দোকানের সাইনবোর্ড থেকে আমরা সেই দোকানের নামগুলো উদ্ধার করতে পেরেছি। এমন দুটো নাম হলো: আবির ফ্যাশন এবং সুমাইয়া কসমেটিকস। 

এখন, সামাজিক মাধ্যমে যে ভিডিওটি সম্প্রতি ছড়িয়েছে সেই ভিডিওটির একপর্যায়ে আমরা ভিডিও ধারণকারীর বামপাশে “আবির ফ্যাশন” এবং “সুমাইয়া কসমেটিকস” নামক দুটো দোকানের সাইনবোর্ড উদ্ধার করতে পেরেছি।


তাছাড়া, দুটো ভিডিওটিতেই মার্কেটের যে পাশটিতে আগুন লেগেছিল সেখানে একটি বৈদ্যুতিক তারের পিলারে সাদা রঙের সিসিটিভি ক্যামেরা দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অর্থাৎ, দুটো ভিডিওই একই সময়ে এবং স্থানে আলাদা ব্যক্তি ধারণ করেছিল।


সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত আলোচিত ভিডিওটির অনুরূপ বেশকিছু ভিডিও ( ) আমরা ইউটিউবে খুঁজে পেয়েছি। যদিও সেগুলোতে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাটে আগুন লাগার ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি, তবু ভিডিওগুলোর প্রকাশের তারিখ থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি সেগুলো গত ১১ জুলাইয়ের অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও। কেননা সবগুলো ভিডিওই ১১ জুলাই বা তারপরে প্রকাশিত হয়েছিল। ১১ জুলাইয়ের আগে এরকম ভিডিওর কোন অস্তিত্ব ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

গত ১১ জুলাই ২০২৪ এ লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাটে আসলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছিল কিনা তা নিশ্চিত হতে আমরা সেদিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল কিনা সেটি খুঁজে দেখি। ১১ জুলাই ২০২৪, বৃহস্পতিবারে প্রকাশিত ডিবিসি নিউজ, একুশে ইটিভি, নয়া দিগন্ত, যুগান্তর, দৈনিক রূপসী লক্ষ্মীপুর, আজকের দৈনিক, বাংলাদেশ বুলেটিন প্রভৃতি সংবাদমাধ্যমে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাটে আগুন লাগার ঘটনার সংবাদ পাওয়া গেছে। সংবাদমাধ্যমগুলোতে আগুনের প্রাথমিক সূত্রপাত হিসেবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং অনেকগুলো দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের দেরি করে আসাকে দায়ী করেছেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।


অতএব, উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, সামাজিক মাধ্যমে যে ভিডিওটিকে সাম্প্রতিক সময়ের বলে প্রচার করা হচ্ছে সেটি আসলে প্রায় একমাসের পুরানো একটি ভিডিও। 

সামাজিক মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ের ভিডিও বলে প্রচারিত এমন কয়েকটি ভিডিওর নমুনা দেখবেন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটিকে বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করছে। 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.