‘বিশ্বকাপ খেলার মাঠে ভয়াবহ আগুন’ শিরোনামে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, চলতি বিশ্বকাপে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।যে ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে, সেটি ২০১৮ সালের জার্মানির ঘরোয়া লীগের একটি ম্যাচের ভিডিও।
গুজবের উৎস
Viral Viv নামক একটি পেজ থেকে ৭ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি প্রথম আপলোড করা হয় ২৩শে নভেম্বর সন্ধ্যা ৭ টা ৩১ মিনিটে । এই ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, বিশ্বকাপ খেলার মাঠে ভয়াবহ আগুন!!আগুনের ভয়াবহতা বেড়ে ভয়ংকর আকার ধারণ,কাতার জুড়ে রেট এলার্ট।
২৩শে নভেম্বর এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চলতি কাতার বিশ্বকাপে ১১টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে কোনো ম্যাচেই আগুন লাগার মত কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ইমেজ সার্চে দেখা যাচ্ছে, মাঠে আগুন ও ধোঁয়ার এই ঘটনাটি ২০১৮ সালের ১২ই মে তারিখের। সেদিন জার্মানির ফুটবল লীগ -বুন্দেসলীগার প্রতিযোগিতা থেকে হামবুর্গ নামক ক্লাবটি বাদ পড়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে হামবুর্গ সমর্থকরা মাঠের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বাজি পটকা এবং স্মোক বোম্ব ছুড়ে মারেন। সেই সময়কার ঘটনাবলীই দেখা যাচ্ছে এই ভিডিওতে।
সেই দিনের খবর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাদ্গ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। যেমন দেখুন – এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে ।
বাংলাদেশের প্রথম আলোতেও এই খবর প্রকাশিত হয়েছিল , যেখানে বলা হয়েছিল – বুন্দেসলিগায় নিজেদের ইতিহাসে প্রথম অবনমনের জ্বালা সইতে না পেরে কাল স্টেডিয়ামে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন হামবুর্গ–সমর্থকেরা।
বরুসিয়া মুনশেনগ্লাডবাখের বিপক্ষে হামবুর্গকে শুধু জিতলেই চলত না, অন্য ম্যাচে কোলনের বিপক্ষে ভলফসবুর্গকে হারতেও হতো। কিন্তু ২-১ গোলের জয়ে নিজেদের কাজটা ঠিকমতো সারলেও ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি। কোলনকে ৪-১ গোলে হারিয়ে হামবুর্গ–সমর্থকদের হৃদয় ভেঙে দেয় ভলফসবুর্গ। এই ম্যাচ শেষ হয়েছে হামবুর্গ-মুনশেনগ্লাডবাখ ম্যাচের আগে। অর্থাৎ গ্যালারিতে বসেই হামবুর্গ–সমর্থকেরা জানতে পারেন, আগামী মৌসুমে আর বুন্দেসলিগায় থাকা হচ্ছে না। ব্যস, এরপরই শুরু হয় নরক গুলজার!
গোলপোস্টের সামনে বড় বড় অগ্নিকুণ্ড ছুড়ে মারেন সমর্থকেরা। এতে কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় স্টেডিয়ামের এক পাশ। মাঠে নেমে পড়ে পুলিশ। ম্যাচটা তাই শেষ হয়েছে নির্ধারিত সময়ের চেয়েও ১৬ মিনিট দেরিতে। রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর পর অনেক হামবুর্গ–সমর্থকই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বিভিন্ন এ্যাঙ্গেল থেকে সেই সময়ের মাঠের কিছু ভিডিও দেখতে পাবেন – এখানে , এখানে ।
উক্ত ভিডিও ,এবং ঘটনার সাথে আজ ভাইরাল হওয়া ভিডিওর সম্পূর্ণ মিল আছে। অর্থাৎ এটা পরিষ্কার যে ভিডিওগুলো চলতি কাতার বিশ্বকাপের নয়।
তাই ফ্যাক্টওয়াচ এ সংক্রান্ত সকল ফেসবুক পোস্টকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?