সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে “জুলাই স্মৃতি জাদুঘর” দাবিতে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ২১ সেকেন্ডের ভিডিওটি গণভবনে ধারণ করা হয়েছে বলে প্রচার হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায় ভিডিওটি গণভবনে নয়, বরং ধারণ করা হয়েছে পাঁচতারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের কনসিয়ার্স লাউঞ্জে। তাছাড়া এটি কোনো জুলাই স্মৃতি জাদুঘর নয় এবং ভিডিওতে দেখতে পাওয়া জায়গাটির এখনো কোনো নির্দিষ্ট নামকরণ হয়নি।
বিভিন্ন ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট, পেজ এবং গ্রুপে ভিডিওটি “জুলাই স্মৃতি জাদুঘর, গণভবন” উল্লেখ করে পোস্ট করা হয়েছে। একটি পেজ থেকেই ভিডিওটি এখন পর্যন্ত ৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ দেখেছেন।
বিস্তারিত:
ভিডিওটির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হয়। সেখান থেকে একই ভিডিও ভিন্ন-ভিন্ন ক্যাপশনে পাওয়া যায়। ‘আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কাউট গ্রুপ’ নামের একটি পেজ থেকে উক্ত ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ঢাকা।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে দুটি ফেসবুক প্রোফাইলে একই স্থানে পোস্টকৃত কিছু ছবি পাওয়া গেছে। উক্ত পোস্টগুলোতে ছবি তোলার স্থান হিসেবে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের নাম উল্লেখ রয়েছে। ১৫ নভেম্বরে ২০২৪ তারিখে একই স্থানের কিছু ছবি পোস্ট করে ক্যাপশন দেওয়া হয় এই মর্মে যে- ছবিটি তোলা হয়েছে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের ভিআইপি লাউঞ্জে। এছাড়া ১৯ নভেম্বর আরেক ব্যবহারকারী একই স্থানে নিজের ছবি পোস্ট করে ইংরেজি ক্যাপশন লিখেছেন “New Bangladesh. Hotel Intercontinental Dhaka”। প্রসঙ্গত, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া দৃশ্য এবং ব্যক্তিগত একাউন্টে পোস্টকৃত ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায় একই স্থানে ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হয়েছে।
এ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে একই লোকেশনে ধারণকৃত ছবি বা ভিডিও ভিন্ন ভিন্ন লোকেশন হিসেবে দাবি করা হয়েছে। অর্থাৎ, কিছু পেজে গণভবন আর ব্যক্তিগত একাউন্টে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বলা হচ্ছে। যদিও ব্যক্তিগত একাউন্টে পোস্ট করা দাবিগুলোকে যথার্থ মনে হয়েছে। কেননা ব্যক্তি নিজেই উক্ত লোকেশনে উপস্থিত ছিলেন। ছবি থেকে সেই প্রমাণই পাওয়া যাচ্ছে।
বলাই বাহুল্য, অধিকতর নিশ্চিত হবার জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হয়। ভাইরাল ভিডিওটির বিষয়ে তাদেরকে অবহিত করা হয়। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভিডিওটি তাদের হোটেলেই ধারণ করা হয়েছে। জুলাই-আগস্টের স্মরণে এই লাউঞ্জটি তৈরি করা হয়েছে। যে কেউ এখানে আসতে পারেন। অনেকে এসে এখানে ছবি তোলেন, ভিডিও করেন। তবে জায়গাটির কোনো অফিসিয়াল নামকরণ করা হয়নি। এটিকে সাধারণত “জুলাই কর্নার” বলা হয়ে থাকে।
লক্ষণীয় যে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিতে গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একাধিক উপদেষ্টা। আবার ২৮ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে গণভবন পরিদর্শনে গিয়ে জাদুঘর নির্মানের জন্য নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাই ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ধারণকৃত ভিডিও এবং সেখানে থাকা ক্যাপশন দেখে অনেকেই ভেবেছেন এটি হয়তো গণভবনেরই কোনো ভিডিও।
যদিও তথ্য-প্রমাণ থেকে এটি পরিষ্কার যে, ভাইরাল ভিডিওর সাথে গণভবনের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই উক্ত দাবিকে বিভ্রান্তিকর চিহ্নিত করা হয়েছে।
No Factcheck schema data available.
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh