রাসেলস ভাইপার উড়ে উড়ে ছড়িয়ে পড়ছে- বিকৃত ফটোকার্ড

57
রাসেলস ভাইপার উড়ে উড়ে ছড়িয়ে পড়ছে- বিকৃত ফটোকার্ড
রাসেলস ভাইপার উড়ে উড়ে ছড়িয়ে পড়ছে- বিকৃত ফটোকার্ড

Published on: [post_published]

যা দাবি করা হচ্ছে: “আকাশে উড়ে উড়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে রাসেলস ভাইপার!” শিরোনামে আরটিভির লোগো-সম্বলিত ফটোকার্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

যা পাওয়া যাচ্ছে: ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডটি আরটিভির অফিশিয়াল ফটোকার্ড নয়। ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবিটি আরব কিংবদন্তির কাল্পনিক সাপের। রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপটি উড়তে পারে না। তাই উড়ে উড়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার তথ্যটি ভুল। এ কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডগুলোকে “বিকৃত” হিসেবে চিহ্নিত করছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে নেটিজেনরা  উক্ত ফটোকার্ডটি পোস্ট করে আরটিভির সমালোচনা করছে।

Sanjay Kulu নামে একজন ইউজার লিখেছেন “”খবরের ধরনে আতঙ্ক আর ভয় সৃষ্টি হয়!”

দায়িত্বশীলরা যখন দায়িত্বহীন আচরণ করে তখন বলার কিছু থাকে না।

উড়ে উড়ে যদি রাসেল ভাইপার ছড়াবে তবে এটা বর্ডারের ওপারে যেতে পারেনি কেন!

নাকি সাপটি বর্ডারের সীমানা চেনে?

ভিউ বিজনেস বাদ দিয়ে মানুষকে সচেতন করতে এবং সমাজ পরিবর্তনে শিক্ষা সংস্কার জ্ঞান বিজ্ঞান আর বিনোদন প্রচার করুন।”

Samima Islam Samima Islam লিখেছেন “ সাংবাদিক হয়ে যদি এই ভাবে খবর প্রচার করে, আপনারা বলেন এদেরকে কি করা উচিত”।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া আরটিভির ফটোকার্ডটির তারিখ লেখা আছে ২২ জুন, ২০২৪। ফটোকার্ডটি আরটিভির কিনা সেই সত্যতা যাচাই করতে  Rtv । আরটিভি এবং Rtv News । সংবাদ নামক তাদের দুইটি অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে অনুসন্ধান চালানো হয়। তাদের এই দুই পেজে ২২ জুন, ২০২৪ তারিখে রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে মোট ১২টি পোস্ট করা হয়েছে। সেগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে। তবে এই নিউজগুলোর ভিতর কোথাও “আকাশে উড়ে উড়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে রাসেলস ভাইপার!” শিরোনামে কোন নিউজ পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া আরটিভির অফিশিয়াল ফটোকার্ডের সাথে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডের কোন মিল নেই। আরটিভির অফিশিয়াল ফটোকার্ডের লেখার ফন্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডের ফন্টের  থেকে বেশি গাঢ়। আরটিভির ফটোকার্ডে ব্যবহার করা ছবিগুলো ট্রাপিজিয়াম আকৃতির। অন্যদিকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবিটি আয়তাকৃতির।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডের ছবিটি মিথলজিক্যাল ক্রিয়েশন নামক একটি ওয়েবসাইটের নিবন্ধে পাওয়া যাচ্ছে। উক্ত নিবন্ধ থেকে দক্ষিণ আরবে প্রচলিত উড়ন্ত সাপের কিংবদন্তীর ব্যাপারে জানা যাচ্ছে। তবে এর সত্যতা সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে প্রকাশিত একটি আর্টিকেল থেকে উড়ন্ত সাপের ব্যাপারে জানা যাচ্ছে। উড়ন্ত সাপের বৈজ্ঞানিক নাম Chrysopelea। এই সাপগুলো দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জঙ্গলে দেখতে পাওয়া যায়। এই সাপগুলো পাখির মতো ডানা ব্যবহার করে ওড়ে না। তারা বাতাসের গতিকে কাজে লাগিয়ে গ্লাইডিং করে উড়ে।

তবে কোন সাপের ডানা থাকার ব্যাপারটা অবাস্তব। তাই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডটির ছবিটি একটি কাল্পনিক ছবি। এটি রাসেলস ভাইপারের ছবি না। তাছাড়া রাসেলস ভাইপার উড়তে পারার রেকর্ড নেই। বাংলাদেশে রাসেলস ভাইপার উড়ে উড়ে আসেনি। ২২ জুন, ২০২৪ তারিখে ভোরের কাগজে প্রকাশিত একটি সংবাদে বাংলাদেশে রাসেলস ভাইপার ছড়িয়ে পড়ার পেছনে দুটি কারণের কথা বলা হচ্ছে:

প্রথমত, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে রাসেলস ভাইপারের সংখ্যা বেড়েছে। যার অন্যতম কারণ একই জমিতে একাধিক ফসল ফলানো। আগে বছরে একবার বা দুইবার ফসল ফলানো হতো। আর বাকি সময় পানির অভাব থাকায় পরিত্যক্ত থাকতো। ’৯০ দশকে সেচ পদ্ধতির উন্নতিতে প্রতিবছর দুই থেকে তিনটি ফসল ফলানো শুরু করেন কৃষকরা। ফলে জমি কম সময় পরিত্যক্ত থাকে। তাতে সারা বছর খেতে ফসল থাকে। সঙ্গত কারণে জমিতে ইঁদুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যা রাসেল ভাইপারের প্রধান খাদ্য। ফলে বিষধর সাপের সংখ্যা বেড়ে যায়। মূলত, বেশিরভাগ সাপ ডিম পাড়ে। তবে রাসেল ভাইপার বাচ্চা দেয়। একটি স্ত্রী ভাইপার ২০ থেকে ৪০টি বাচ্চা দেয়। তবে ৮০টি পর্যন্ত দেয়ার রেকর্ডও রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বর্ষাকালে ভারতের নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। এসময় সেগুলো থেকে ভেসে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে রাসেল ভাইপার। সাধারণত, যেসব জায়গায় কচুরিপানা রয়েছে, সেসব স্থানে বাসা বাঁধে এটি। তাদের ধারণা, কচুরিপানার ওপরে ভেসে বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছেছে এই সাপ।

অর্থাৎ, এটা পরিষ্কার যে সম্পূর্ণ লৌকিক উপায়েই রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের আনাগোনা বেড়েছে। আকাশে উড়ে উড়ে এই সাপ ছড়িয়ে পড়ার মত কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং সেটা সম্ভবও নয়।

সিধান্ত:

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে আরটিভির নামে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডটি আরটিভির না। তাছাড়া উক্ত ফটোকার্ডটিতে ব্যবহৃত ছবিটি একটি কাল্পনিক ছবি। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডটিকে “বিকৃত” হিসেবে শনাক্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

No Factcheck schema data available.