১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জানাজায় মানুষের উপস্থিতি, এবং ২০২৩ সালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় উপস্থিতির তুলনা দেখিয়ে একটি কোলাজ ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, সাঈদীর তুলনায় শেখ মুজিবুর রহমানের জানাজায় খুব অল্প মানুষ হাজির ছিল। এখানে শেখ মুজিবের জানাজার ছবি হিসেবে যেটি শেয়ার করা হয়েছে, তা একটি চলচ্চিত্র থেকে নেয়া। ফলে কোনোভাবেই বাস্তবের চিত্র নয়। তাছাড়া ১৯৭৫ এর ১৬ই আগস্ট টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর জানাজা সম্পন্ন হলেও পোস্টে ১৫ই আগস্ট দাবি করা হয়েছে। এসব বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বঙ্গবন্ধুর দাফনের অজানা গল্প শীর্ষক এই নিবন্ধে টুঙ্গিপাড়ার স্থানীয় মসজিদের ইমাম মৌলভী শেখ আব্দুল হালিম এর বয়ানে বঙ্গবন্ধুর দাফন এবং জানাজা সম্পর্কে জানা যায়। ১৬ই আগস্ট দুপুর ২ টার পরে জনা পচিশেক লোক নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মরদেহের জানাজা ও পরে দাফন হয় বলে এই নিবন্ধে জানা যাচ্ছে।
টুঙ্গিপাড়া থানার সেসময়কার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও বঙ্গবন্ধুর মরদেহ দাফনকারী পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল জলিল শেখ সম্প্রতি এক স্মৃতিচারণায় দাবি করেছেন, লেবার (শ্রমিক), পুলিশের লোক মিলে ২৪/২৫ জন মিলে জানাজা করা হয়।
তৎকালীন পুলিশ সদস্য (কনস্টেবল) নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাজী সিরাজুল ইসলাম আরেক স্মৃতিচারণায় দাবি করেছেন, জানাজায় ২০-২৫ জন লোক ছিলাম পুলিশ স্টাফ আর হাসপাতালের লোক জানাজায় অংশ নিলেন। জনসাধারণকে জানাজায় অংশ নিতে দেয়া হয়নি।
বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রতিবেদনে, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল বাশার খায়ের কে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে ,বঙ্গবন্ধুকে দাফনের জন্য আগে থেকেই টুঙ্গিপাড়ায় কবর খুঁড়ে রাখা হয়। বঙ্গবন্ধুকে দাফনে গ্রামের মানুষ অংশ নিতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু পথেই পুলিশ,সেনা সদস্যরা তাদের বাধা দিয়ে আটকে দেন। তারা দাফনে অংশ নিতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুর গোসল, জানাজা ও দাফনে টুঙ্গিপাড়া, পাঁচ কাহনিয়া ও পাটগাতী গ্রামের ৩০/৩৫ জন অংশ নেন।
সবগুলো বর্ণনা থেকেই জানা যাচ্ছে, শেখ মুজিবুর রহমানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৬ই আগস্ট, এবং ২০ থেকে ২৫ জন এই জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন।
ছড়িয়ে পড়া কোলাজ ছবিটির উপরের অংশে বঙ্গবন্ধুর জানাজার তারিখ হিসেবে ১৫/৮/১৯৭৫ লেখা রয়েছে, যা প্রকৃতপক্ষে ১৬/৮/১৯৭৫ হওয়া উচিত। এছাড়া ছবিতে জানাজা নামাজে ১৫ জনকে সনাক্ত করা যাচ্ছে।
১৯৭৫ সালের ১৬ই আগস্ট কোনো ছবি তোলার কথা কারো বর্ণনায় পাওয়া যায়নি। ভাইরাল ছবিটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে পাওয়া গেল এটি শামীম আহমেদ রনি’র পরিচালনায় নির্মিত ‘আগস্ট ১৯৭৫’ নামক চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য। জেলা তথ্য অফিস ঝালকাঠি’র ইউটিউব চ্যানেলে আপলোডকৃত এই চলচ্চিত্রের ১ ঘন্টা ২৮ তম মিনিটে ভাইরাল হওয়া দৃশ্যটি দেখানো হয়েছে।
কোলাজ ছবিটির দ্বিতীয় ছবিটি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’র সাম্প্রতিক জানাজার ছবি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এম. হাসিবুর রহমান রহমান নামক এই ইউটিউব একাউন্ট থেকে আপলোডকৃত এই ভিডিওর সাথে আলোচ্য ছবিটির সাদৃশ্য পাওয়া যাচ্ছে।
দৈনিক প্রথম আলোতে ১৫ই আগস্ট ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত পিরোজপুরে জানাজা শেষে সাঈদীর দাফন সম্পন্ন শীর্ষক খবর থেকে জানা যাচ্ছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটায় পিরোজপুর শহরের বাইপাস সড়কে সাঈদী ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে অবস্থিত বায়তুল হামদ জামে মসজিদের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।
অর্থাৎ, কোলাজ ছবিতে দেয়া সাঈদীর জানাজার তারিখে কোনো ভুল তথ্য নেই।
তবে শেখ মুজিবুর রহমানের জানাজার তারিখ এখানে ভুল উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া সেই জানাজায় অংশ নিতে ইচ্ছুক সাধারণ জনতাকে জানাজায় আসতে বাধা দেয়ার তথ্যটাও উল্লেখ করা হয়নি। সর্বোপরি, শেয়ার করা ছবিটা যে একটি চলচ্চিত্রের দৃশ্য — এই তথ্যটাও জানানো হয়নি এখানে।
সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।