সম্প্রতি মুফতি গিয়াস উদ্দিন তাহেরি গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ভাইরাল ভিডিওটি মূলত ৮ এপ্রিল, ২০২২ এ প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে তাকে কুমিল্লার নূরজাহান নামে একটি হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করতে দেখা যায়। মূল ভিডিওর ক্যাপশনেও তাই লেখা রয়েছে। তবে পুরনো এই ভিডিওটিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে দাবি করা হয় যে, সম্প্রতি ইসলামী বক্তার জিহবা কেটে ফেলার আসামি হিসেবে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা বাংলাদেশ পুলিশের অফিসিয়াল কোনো মাধ্যম থেকে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি।
“অবশেষে ফেঁসে গেলেন মাওলানা তাহেরী”- শিরোনামে ২ মিনিট ৫ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, গিয়াসউদ্দিন তাহেরী গ্রেফতার হয়েছেন। ধর্মীয় বক্তা শরীফুল ইসলামের জিহবা কাটার অপরাধে সম্প্রতি চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারই প্রেক্ষিতে এই ভিডিওতে দাবি করা হয়, এই চারজন রিমান্ডে উক্ত ঘটনার মূল হোতা হিসেবে তাহেরীর কথা বলেছেন। তবে ভিডিওর শেষে আবার এটিও বলা হয় যে, নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে কিছু বলা যাচ্ছে না। অর্থ্যাৎ, অনেকগুলো দাবির সাথে সেই দাবিগুলোর সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
ভাইরাল ভিডিওটি সরাসরি অনুসন্ধান করা হলে তেমন কোনো ফলাফল পাওয়া যায় নি। নিম্নোক্ত ছবিটি ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, ভিডিওটি উল্টে দেয়া হয়েছে যার কারণে ভিডিওতে থাকা বিভিন্ন লেখা এবং লোগো উল্টো দেথা যায়।
এই লেখা এবং লোগোগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বুঝা যায়, এটি “ST TV 24” নামে কোনো চ্যানেল থেকে প্রকাশিত হয়ে থাকতে পারে। এই কি-ওয়ার্ডের সূত্র ধরে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে অনুসন্ধানের পর ইউটিউবে এই নামে একটি চ্যানেল পাওয়া যায় এবং মূল ভিডিওটিও খুঁজে পাওয়া যায়।নিম্নোক্ত ছবিটি লক্ষ্য করলে মূল লেখা এবং লোগোটি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
৮ এপ্রিল, ২০২২ এ প্রকাশিত এই ভিডিওটি কুমিল্লার নূরজাহান নামে একটি হোটেল থেকে নেয়া। মূল ভিডিও থেকে নেয়া নিম্নোক্ত স্ক্রিনশট থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়।
গত ৫ মার্চ, ২০২৩ এ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শরীফুল ইসলাম নুরী নামে এক ধর্মীয় বক্তার মুখে আঘাত করে তার জিহবার একাংশ কেটে দেয়া হয়। এ ঘটনায় উপরোক্ত ভাইরাল ভিডিওটিকে তাহেরীর গ্রেফতার হওয়ার ভিডিও বলে দাবি করা হয়। কিন্তু তাহেরীর মূল ভিডিওটি প্রকাশের তারিখ দেখলে বুঝা যায়, ভিডিওটি উক্ত ঘটনার প্রায় ১১ মাস আগের একটি ঘটনা। তাছাড়া সেই ভিডিওতে তাহেরীকে গ্রেফতার নয় বরং তার সাথে কয়েকজন পুলিশকে একসাথে খাওয়া-দাওয়া করতে দেখা যাচ্ছে।
অর্থাৎ, সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ঘটনার পুরনো ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটা অন্য এক ঘটনা বলে প্রচার করা হচ্ছে।
৫ মার্চের ওই ঘটনায় পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তাহেরী নামের কেউ নেই। এছাড়া এ বিষয়ে র্যাবের সংবাদ সম্মেলনেও তাহেরীকে নিয়ে এ ধরণের কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমে তাহেরীর জড়িত থাকা বা গ্রেফতার হওয়ার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। সর্বোপরি ভাইরাল এই ভিডিওর শেষাংশে বলতে শোনা যায় যে, দাবিগুলোর সত্যতা নিয়ে তারা নিশ্চিত নয়। অতএব, পরিষ্কার যে, এই দাবির পিছনে নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই।
অতএব, বিষয়টি পরিষ্কার যে, ভাইরাল ভিডিওটি তাহেরীর গ্রেফতার হওয়ার কোনো ভিডিও নয়। এছাড়া তাহেরী গ্রেফতার হয়েছে — এ ধরণের তথ্য নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম থেকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘটনার ১১ মাস পুরনো একটি ভিডিওকে ভিত্তিহীন একটি দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় এই ভিডিওটিকে “মিথ্যা” চিহ্নিত করা হলো।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?