যা দাবি করা হচ্ছেঃ এটা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে গ্রেফতার করার ভিডিও।
অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ দাবিটি মিথ্যা। ভাইরাল ভিডিওতে এই দাবিটির সমর্থনে প্রমাণ হিসেবে যে আলাদা আলাদা ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে তাদের গ্রেফতার সংক্রন্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বরং, ফুটেজগুলোকে নানান কায়দায় জোড়া লাগিয়ে আলোচিত ভিডিওটি বানানো হয়েছে। অন্যদিকে, মূলধারার সংবাদমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য কোনো উৎস থেকে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি যার মাধ্যমে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সম্প্রতি জি এম কাদের এবং মুজিবুল হক চুন্নু গ্রেফতার হয়েছেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি সত্যিই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে গ্রেফতার করা সংক্রান্ত কি না — এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুরুতেই ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। সেখানে তিনটি আলাদা আলাদা ভিডিও ফুটেজ খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথম ফুটেজে পুলিশের সাথে কিছু আইনজীবীদের হাতাহাতি করতে দেখা যায় এবং যার ব্যাকগ্রাউন্ডে একজনকে বলতে শোনা যায় যে, জি এম কাদের এবং মুজিবুল হক চুন্নু এইমাত্র গ্রেফতার হয়েছেন। দ্বিতীয় ফুটেজে গণঅধিকার পরিষদের নেতা মো. তারেক রহমানকে ভোটাধিকার, নিরাপদ নির্বাচনে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি করতে দেখা যায়। এবং তৃতীয় ফুটেজে নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. জাহেদ উর রহমানকে জাতীয় পার্টির আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্তর সমালোচনা করতে দেখা যায়। অর্থাৎ প্রাথমিক ভাবে দেখা যাচ্ছে যে, প্রথম ফুটেজটি ভাইরাল ভিডিওর দাবিটিকে সমর্থন করলেও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ফুটেজটির ক্ষেত্রে তা নায়।
তাই এ ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরবর্তিতে প্রাসঙ্গিক কিছু কী-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে ইউটিউব এবং ফেসবুক থেকে ভিডিও ফুটেজগুলোর উৎস খুঁজে পায় ফ্যাক্টওয়াচ টিম।
চ্যানেল আই এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে গত ১০ ডিসেম্বর আপলোড করা প্রথম ফুটেজটির পূর্বসংস্করনের একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ছিল মূলত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গত ১০ ডিসেম্বর বরিশাল শহরে বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও দলীয় নেতা-কর্মীদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা দেয়া সংক্রান্ত।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে, মূল ভিডিওর ৭ থেকে ৩২ সেকেন্ড অংশটুকু ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে এডিট করে ভাইরাল ভিডিওতে ব্যবহার করে হয়েছে।
পরবর্তিতে, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ফুটেজটি যথাক্রমে এই সময় টিভি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল এবং Zahed’s Take নামের একটি ফেসবুক পেইজে খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানেও দেখা যাচ্ছে যে, মূল ভিডিওগুলো থেকে কিছু অংশ কেটে ভাইরাল ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।
অন্যদিকে, নির্ভরযোগ্য কোনো সোর্স বা মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমে জি এম কাদের এবং মুজিবুল হক চুন্নুর গ্রেফতার সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।