ফেসবুকে যা ছড়াচ্ছেঃ “ঘুষ নিতে কিস্তি ব্যবস্থা চালু সরকারি কর্মকর্তাদের” এই শিরোনামে দৈনিক কালবেলার ফেসবুক পেজ থেকে একটি ফটোকার্ড আপলোড করা হয়। এছাড়াও ফেসবুক পেজটি থেকে “কিস্তিতে ঘুষ নেন সরকারি কর্মকর্তারা” শিরোনামে একটি একটি ভিডিও প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়। দুই জায়গার কমেন্ট সেকশনে এই কিস্তি ব্যবস্থা চালু করার ঘটনাটি বাংলাদেশের মনে করে অনেকেই কমেন্ট করে। পাশাপাশি এই ঘটনাটি বাংলাদেশের দাবি করে কালবেলার ফটোকার্ডটি ব্যবহার করে ফেসবুকে আলাদা আলাদ পোষ্টও করা হয়।
আসল ঘটনাঃ দাবিটি বিভ্রান্তিকর। সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ নিতে কিস্তি ব্যবস্থা চালু করার ঘটনাটি ভারতের গুজরাটের, বাংলাদেশের নয়। যদিও দৈনিক কালবেলার ভিডিও প্রতিবেদন এবং ফটোকার্ডের কমেন্ট সেকশনে যুক্ত বিস্তারিত অংশে উল্লেখ আছে যে, গুজরাটে যেসব নাগরিক আর্থিক ভাবে পিছিয়ে রয়েছেন তাদের জন্য মাসে মাসে ঘুষের টাকা পরিশোধের পদক্ষেপ নিয়েছেন সেখানকার কিছু সরকারি কর্মকর্তা। কিন্তু গুজরাটের নাম উল্লেখ না থাকায় অনেকেই একে বাংলাদেশের ঘটনা বলে বিশ্বাস করছেন।
ঘুষ নিতে কিস্তি ব্যবস্থা চালু করার ঘটনাটি কোন স্থানের এ ব্যাপারে জানার জন্য শুরুতেই দৈনিক কালবেলার ফেসবুক পেজ থেকে আপলোড করা ফটোকার্ডটির কমেন্ট সেকশনে যুক্ত করা বিস্তারিত প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। সেখানে উল্লেখ করা হয় ভারতের গুজরাটের কিছু সরকারি কর্মকর্তারা ঘুষ নেয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে কিস্তি ব্যবস্থা চালু করেছেন। দৈনিক কালবেলার প্রতিবেদনে এই তথ্যের উৎস হিসেবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে এনডিটিভির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ৬ জুন ২০২৪-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে ভারতের দুর্নিতি দমন ব্যুরো (ACB) এর কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানানো হয়, এই বছর গুজরাটে অন্তত দশটি কেস রিপোর্ট করা হয়েছে যেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি তাদের মধ্যস্থতাকারীরা কিস্তিতে ঘুষের টাকা দাবি করেছে। কিস্তিতে ঘুষ নেওয়ার এই প্রথা সেখানে নতুন নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।
কালবেলার ভিডিও প্রতিবেদনে শুরু থেকে ৫৬ সেকেন্ড পর্যন্ত সরাসরি কোথাও উল্লেখ করা হয়নি যে ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়। ভিডিওর এই অংশজুড়ে বাংলাদেশি টাকার বান্ডিল দেখানো হয়েছে। যা দেখে যে কেউ মনে করতে পারে ঘটনাটি বাংলাদেশের। ৫৬ সেকেন্ডের পরে উল্লেখ করা হয় ঘটনাটি ভারতের গুজরাটের। এই ভিডিওর কমেন্ট সেকশন দেখলে এ ব্যাপারে ধারণা পাওয়া যাবে।
দেখা যাচ্ছে যে, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ফটোকার্ড এবং ভিডিওর বিস্তারিত অংশের বলা আছে যে, ঘুষ নিতে কিস্তি ব্যবস্থা চালু করার ঘটনাটি গুজরাটের। কিন্তু শিরোনামে সুনির্দিষ্ট কোনো স্থানের উল্লেখ না থাকায় অনেকেই একে বাংলাদেশের ঘটনা বলে মনে করছে। ফ্যাক্টওয়াচ এই কারণে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।