দাদী-নাতনির পুরনো ছবিসহ বিভ্রান্তিকর সংবাদ ভাইরাল

12
দাদী-নাতনির পুরনো ছবিসহ বিভ্রান্তিকর সংবাদ ভাইরাল দাদী-নাতনির পুরনো ছবিসহ বিভ্রান্তিকর সংবাদ ভাইরাল

Published on: [post_published]

সম্প্রতি একটি মেয়ে বৃদ্ধাশ্রমে তার হারানো দাদীকে খুঁজে পেয়েছে — এই দাবিতেকথিত দাদী এবং নাতনির ছবিসহ একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অনুসন্ধানে ছবি এবং প্রতিবেদনের একাধিক অসংগতি সনাক্ত হয়েছে। প্রথমত ছবিটি ২০০৭ সালের এবং “হারানো দাদী” এই কথাটিও সঠিক নয়।দ্বিতীয়ত সেখানে উল্লেখ্য নাতনির নামটি ভুল, এবং তৃতীয়ত, উক্ত বৃদ্ধ মহিলা তার ছেলে বা বৌমার অত্যাচারে নয় বরং স্বেচ্ছায় সেখানে থাকেন বলে বিবিসির একটি প্রতিবেদনে তিনি নিজেই বলেছেন। এসকল অসংগতি বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এই প্রতিবেদনসহ পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” চিহ্নিত করছে।

 

এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

“Viralnews.com” এবং “TCRB NEWS” নামক দুইটি ওয়েবপোর্টালের বরাতে খবরটি ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে।

প্রতিবেদন দুইটির আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এবং এখানে

ভাইরাল এই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, দিতি নামের এক স্কুলছাত্রী একটি বৃদ্ধাশ্রম পরিদর্শনে গিয়ে তার হারিয়ে যাওয়া দাদীকে খুঁজে পেয়েছেন। তবে সেখানে নির্দিষ্ট কোনো তারিখের উল্লেখ নেই। প্রতিবেদনে থাকা ছবিতে উল্লেখিত দাদী এবং তার নাতনিকে একসাথে কাঁদতে দেখা যাচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই বাসায় তার দাদীর ছবি দেখলেও কখনো দাদীর সাথে দেখা করতে পারেনি। তাই বৃদ্ধাশ্রমে চেহারার মিল খুঁজে পেয়ে তার দাদীকে সে চিনতে পারে। এছাড়াও বৃদ্ধাশ্রমে আসার কারণ এই প্রতিবেদনে তার ছেলের স্ত্রীকে দায়ী করা হয়। সেখানে বলা হয়, “আমার ছেলের এতো বড় আলিশান ফ্লাটে আমার জায়গা হয়নি। বৌমাও আমাকে সহ্য করতে পারতো না। আমি তো বুড়িয়ে গেছি তাইনা!তোর বাবাকে আমি কত কষ্ট করে মানুষ করেছি, কখনও বিন্দুমাত্র অভাবের আচড় লাগতে দেয়নি। নিজে কষ্টে থেকে তাকে সবসময় ভাল জায়গায় রেখেছি। তাকে বলেছিলাম বড় হয়ে আমাকে ভুলে যাসনে। কিন্তু বুঝতে পারিনি সে এতো বড় হয়ে যাবে”

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভাইরাল ছবির সাহায্যে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে, ভারতীয় গণমাধ্যম ‘News 18’ এর একটি প্রতিবেদনে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ২৩ আগস্ট, ২০১৮ এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায় প্রায় একই দাবিতে ভারতেও বিভিন্ন সময় এই ছবিটি ভাইরাল হয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে ঘটনাটির সত্যতা যাচাই করে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। সেখানে বিবিসি প্রকাশিত একটি ইন্টারভিউ পাওয়া যায়।

ইন্টারভিউতে বলা হচ্ছে, মূল ছবিটি ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ এ  ভারতের আহমেদাবাদ শহরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে তোলা হয়। কালপিত ভাছেক (Kalpit Bhachech) নামে গুজরাটের একজন ফটোগ্রাফার ছবিটি তুলেছিলেন। পরদিন দিব্য ভাস্কর নামে গুজরাটের একটি পত্রিকায় ছবিসহ খবরটি ছাপা হয়। এরপর থেকেই ছবিটি অনেক প্রশংসা পায়। কিন্তু পরবর্তীতে তা নিয়ে ব্যপক গুজবও ছড়াতে শুরু করে।

 

মূল ঘটনা

ভাইরাল ছবিতে থাকা দাদীর নাম দামায়ন্তি এবং তার নাতনির নাম ভক্তি। ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ এ আহমেদাবাদের জিএনসি নামে একটি স্কুল মনিলাল গান্ধী নামক একটি বৃদ্ধাশ্রম পরিদর্শনে যায়। স্কুলের প্রিন্সিপাল তখন কালপিত ভাছেক নামে একজন ফটোসাংবাদিককে অনুষ্ঠানটি কাভার করতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর একসময় তিনি দেখেন,একজন বৃদ্ধাকে দেখে ওই স্কুলের এক ছাত্রী কেঁদে উঠে। সাথে সাথে সেই বৃদ্ধাও কান্না শুরু করে এবং তাকে জড়িয়ে ধরে। এই মূহুর্তটিই ক্যামেরা বন্দি করেন এই ফটোসাংবাদিক। পরবর্তীতে জানা যায়, এই মেয়েটি বৃদ্ধ মহিলার নাতনি। এ ব্যাপারে ভক্তি বলেন, তিনি জানতেন যে তার দাদী অন্য কোথাও থাকেন কিন্তু এই বৃদ্ধাশ্রমেই যে থাকেন তা জানতেন না। তাই যখন হঠাৎ দেখা হলো তখন আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। এ বিষয়ে উপরোক্ত ইন্টারভিউতে ভক্তি এবং দায়মায়ন্তি দুজনেই জানান, তিনি স্বইচ্ছায় বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে পারিবারিক কোনো কলহ নেই। তিনি আরোও বলেন তার পরিবারের সাথে প্রায়শই দেখা হয় এবং আসা-যাওয়াও হয়।

 

একই বিষয়ে ২২ আগস্ট ২০১৮ এ প্রকাশিত বিবিসির একটি প্রতিবেদনে এই বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে

মূল ঘটনার সাপেক্ষে বর্তমানে ভাইরাল দাবিতে কয়েকটি অসংগতি চিহ্নিত করা যাচ্ছে। প্রথমত, মূল ঘটনাটি প্রায় পনেরো বছর আগের। দ্বিতীয়ত উল্লেখিত নাতনির নাম দিতি নয় বরং ভক্তি এবং বৃদ্ধ মহিলা তার হারানো দাদী নয়। তৃতীয়ত, তিনি নিজেই বলেছেন কোনো পারিবারিক কলহ নয় সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন। এইসব অসংগতি বিবেচনায় নিয়ে ফ্যাক্টওয়াচ এমন ফেসবুক পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” দাবি করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.