বেলুনাকৃতির বিশেষ একটি জলযান বিশ্বের যেখানে যায়, সেখানেই ভূমিকম্প হয়-এমন একটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইনে। সাম্প্রতিক তুরস্কের ভূমিকম্পের সাথেও এই জাহাজের যোগসূত্র রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রথমত, এটি জাহাজ নয়, বরং ভাসমান একটি রাডার। এবং এর সাথে হার্প প্রকল্পের কোনো সম্পর্ক নেই।
যে জাহাজটির কারণে ভূমিকম্প হচ্ছে এটি হলো আমেরিকার সংস্থা_হার্প এর জাহাজ। ডিমের আকার জাহাজটি সুমদ্রে যে প্রান্তে যায় সেখানে ভূমিকম্প হয়।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে দেখা গেল বিশাল বেলুনাকার স্থাপনাটা একটা রাডার, যার নাম Sea-Based X-Band Radar (SBX-1) । মূল রাডারকে রক্ষা করার জন্য তাকে ঘিরে বেলুনের মত প্লাস্টিকের আবরণ রয়েছে, তাই একে দূর থেকে দেখে বেলুনের মতই লাগে। এখানে মূল রাডারটি একটি ভাসমান প্লাটফর্মের উপর থাকে। এর এই ভাসমান প্লাটফর্মকে কোনো জাহাজ বহন করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেতে পারে। এটি একটি শক্তিশালী রাডার। ২৫০০ মাইল দূর থেকেও এই রাডারটি বেজবল আকৃতির কোনো ক্ষুদ্র বস্তু সণাক্ত করতে পারে। এই রাডারটি আমেরিকার Missile Defense Agency(MDA) এর একটি অংশ ।
২০০৬ সালে এটির কার্যক্রম শুরু হয়। আমেরিকার আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের আদাক দ্বীপে (adak island) একে স্থাপন করা হলেও হাওয়াই দ্বীপে মেরামতের জন্য বেশ অনেক দিন রাখা হয়েছিল। পুরো প্রশান্ত মহাসাগরেই এটি বিচরণ করতে সক্ষম বলে জানা গেছে। মূলত উত্তর কোরিয়ার বিভিন্ন ব্যালেস্টিক মিসাইল উৎক্ষেপণ তদারকি করার জন্যই এটিকে প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তরাংশে বেশি সময় রাখা হয় । বিশ্বের অন্যান্য অংশে একে দেখা গেছে – এমন কোনো সংবাদ জানা যায়নি।
অন্যদিকে, হার্পের পূর্ণরূপ হচ্ছে “দ্য হাই-ফ্রিকুয়েন্সি একটিভ অরোরাল রিসার্চ প্রোগ্রাম”। এই প্রোগ্রামের লক্ষ্য হচ্ছে আয়নোস্ফিয়ার বা আয়নমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য এবং আচরণ নিয়ে গবেষণা করা। আয়নোস্ফিয়ার হচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪৮ কিমি থেকে ৯৬৫ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুমণ্ডলীয় এলাকা। এটি নিয়েই হার্প গবেষণা করে। সহজভাবে বললে, আয়নোস্ফিয়ারে উচ্চ কম্পাঙ্কের রেডিও তরঙ্গ পাঠানো হয় এবং এর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা হয়। হার্প এর অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায়। এই প্রজেক্টের যন্ত্রপাতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল Ionospheric Research Instrument (IRI), যেটি আসলে ১৮০ টি বিশালাকৃতির এ্যান্টেনার একটি সেট। এই এ্যান্টেনার সেট দিয়েই আয়নমণ্ডলে সিগনাল পাঠানো হয়।
প্রতি বছর নির্দিষ্ট দিনে দর্শনার্থীদের জন্য হার্প কম্পাউন্ড খুলে দেওয়া হয়। দর্শনার্থীরা এ সময় এ্যান্টেনার সেট সহ বিভিন্ন স্থাপনা দেখতে পান। এমন একটি ভিডিও ভ্লগ দেখতে পাবেন এখানে।
হার্পের গবেষণা প্রকল্পে বিশালাকৃতির SBX-1 এর মত ভাসমান রাডার বা, বিশালাকৃতির কোনো রাডারই নেই। ভিডিও ভ্লগেও এমন কিছু দেখা যায়নি।
কয়েক বছর আগে তুরস্কের উপকূলে SBX-1 রাডারটি দেখতে পাওয়ার গুজব উঠেছিল । তুরস্কের ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা teyit এই দাবি খন্ডন করেছিল। এছাড়া হার্প প্রকল্পের সাথে এই জাহাজের সম্পর্কও নাকচ করেছিল।
এবার তুরস্ক-সিরিয়ার সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পরে এই অদ্ভূত জলযানের সাথে হার্প প্রকল্পের সম্পর্ক নিয়ে আবারো গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এসব দাবিকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।