“হামজা বেনদেলাজ একজন আলজেরিয়ান হ্যাকার যিনি বিশ্বের ২১৭টি ব্যাংক থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার চুরি করেন এবং আফ্রিকা ও ফিলিস্তিনের দরিদ্র জনগণের কাছে দান করেন!” এমন তথ্য সংবলিত একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এই দাবির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ২০১৩ সালে ব্যাংককে গ্রেফতার হওয়ার পরে বেনদেলাজ স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তার সৌখিন জীবনযাত্রাকে চলমান রাখার জন্য ব্যবহার করতেন। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া তথ্যটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ আলজেরিয়ান নাগরিক হামজা বেন্ডেলাদজের বিরুদ্ধে ব্যাংক এবং আর্থিক সংস্থার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার অভিযোগ এনেছে। হ্যাক করার ফলে মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। এই অপরাধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) হামজা বেন্ডেলাদজকে তিন বছর ধরে ট্র্যাক করার চেষ্টা করে। এরপর ২০১৩ সালের ৬ জানুয়ারি মালয়েশিয়া থেকে ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দর দিয়ে ট্রানজিট করার চেষ্টা করার সময় হামোজাকে গ্রেফতার করে থাই পুলিশ। এ সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে।
গ্রেফতার করার পরে তৎকালীন থাই ইমিগ্রেশন পুলিশ প্রধান ফার্নু কেরডলারফন সাংবাদিকদের জানান, হামজা বেন্ডেলাদজ বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে যেই বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরি করতেন তা দিয়ে তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। যেমন বিমানের প্রথম শ্রেণীর সিটে ভ্রমন, বিলাসবহুল জায়গায় থাকা ইত্যাদি। গ্রেফতার হওয়ার পর বেন্ডেলাদজ এ কথা স্বীকার করেছিলেন।
উল্লেখ্য, সাইবার অপরাধ থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার উপার্জনের অভিযোগে এফবিআই দ্বারা চিহ্নিত ওয়ান্টেড একজন আসামি ছিলেন বেন্ডেলাদজ। তিনি ২০০৮ সালে আলজেরিয়াতে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক হয়েছিলেন। বিশ্বব্যাপী ২১৭ টি ব্যাংক এবং আর্থিক সংস্থার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অনেক অবৈধ অর্থ উপার্জন করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মাত্র একটি অবৈধ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে ১০ থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করতে পারতেন এই হ্যাকার। বেন্ডেলাদজ ২০১৫ সালে দোষী সাব্যস্ত হন এবং এক বছর পরে ১৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।
তবে, তিনি বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে যেই বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরি করতেন সেগুলো আফ্রিকা ও ফিলিস্তিনের দরিদ্র জনগণেকে দান করেছিলেন কি না এ সংক্রান্ত প্রমাণ নির্ভরযোগ্য কোনো উৎস থেকে পাওয়া যায়নি।
বিশ্বের অন্যতম তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান এএফপি ফ্যাক্টচেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ প্রকাশিত হামজা বেন্ডেলাদজকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, এই হ্যাকার তার ‘বিলাসী’ জীবনযাপনের অর্থায়নের জন্য কোটি কোটি টাকা চুরি করেছে, দরিদ্রদের দান করার জন্য নয়। পাশাপাশি, তার বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত আদালতের কিছু নথি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে চুরির টাকা দিয়ে বেন্ডেলাদজ কী করতেন তার কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায় না। এএফপি ফ্যাক্টচেকে উল্লেখ করা নথিগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে।
অতএব, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া তথ্যটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?