যা দাবি করা হচ্ছে: “হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কোর্স গুলোর পজিশন”- শিরোনামে কয়েকটি ছবি সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে।
ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত: দাবিটি বিভ্রান্তিকর। পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কোর্স নিয়ে কোনো তালিকা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশ করেনি। মূলত ২০১৭ সালে আমেরিকার ছাত্রদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত সংবাদপত্র “দ্যা ট্যাব (The Tab)” কর্তৃক একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকাটি কোর্স নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের মেজর বা প্রধান বিষয় নিয়ে করা হয়। সেখানে ছাত্রদের জরিপের ভিত্তিতে কোন মেজরটি সবচেয়ে কঠিন এ নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করে তারা। এই তালিকাটিকেই হার্ভার্ডের বলে প্রচার করা হচ্ছে ভাইরাল পোস্টগুলোতে।
ফেসবুকে শেয়ারকৃত ভিডিওটির সত্যতা ও যথার্থতা যাচাইয়ে কিছু প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড ধরে ফ্যাক্টওয়াচ টিম অনুসন্ধান শুরু করে। উক্ত পোস্টগুলোতে যে ছবিগুলো ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো গুগল রিভার্স ইমেজে সার্চ এর মাধ্যমে অনুসন্ধান করা হয়। সেখানে ২০১৭ সালের আমেরিকার ছাত্রদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত “দ্যা ট্যাব (The Tab)” নামে একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত “The most difficult majors in America” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
মূল প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের উপর করা একটি জরিপের ফলাফল হচ্ছে এই তালিকা। সংবাদপত্রটির ডাটা বিশেষজ্ঞ ম্যাট পেন্সার তাদের কাজ করার পদ্ধতিটিকে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, একটি সমীক্ষায় শিক্ষার্থীদের দেয়া বিভিন্ন তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই তালিকাটি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে তারা জানার চেষ্টা করেছেন যে, শিক্ষার্থীরা কোন বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য কত ঘন্টা সময় কাটায়, কত ঘন্টা ঘুমায়, জিপিএ কি কিংবা মেজরগুলোতে তারা কেমন চাপ অনুভব করে ইত্যাদি।
মূল প্রতিবেদনটিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বিস্তৃত ডাটা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তারা খুঁজে পেয়েছেন যে, আর্কিটেকচার সবচেয়ে কঠিন মেজর। যারা এই মেজরটি অধ্যয়ন করে তারা গড়ে সবচেয়ে বেশি ঘন্টা কাজ করে, সবচেয়ে বেশি রাত জাগে ও সবচেয়ে কম ঘুমায় এবং অন্যান্য যেকোনো ডিগ্রির চেয়ে বেশি চাপ অনুভব করে।
এছাড়া, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে অনুসন্ধান করা হলে এমন কোনো তালিকা খুঁজে পাওয়া যায় নি কিংবা হার্ভার্ড এমন তালিকা কখনো প্রকাশ করেছে কি না এ বিষয়েও নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য-প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় নি।
অতএব, পরিষ্কারভাবেই বুঝা যাচ্ছে, ভাইরাল তালিকাটি হার্ভার্ডের নয়। তাই হার্ভার্ড দাবিতে প্রকাশিত পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে সাব্যস্ত করা হলো।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।