সম্প্রতি “দেশে ফিরে গ্রেপ্তার হিরো আলম”- শিরোনামে একটি খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, মূলধারার গণমাধ্যমে আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের গ্রেপ্তারের কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। এছাড়া তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকেও এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। জানা যায়, তিনি সম্প্রতি দুবাই থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার হওয়ার একটি শঙ্কা প্রকাশ করেন। ভাইরাল এসব খবরের বিস্তারিত অংশেও এই কথাটিই বলা হচ্ছে। মূলত “দেশে ফিরে ‘গ্রেপ্তার আতঙ্কে’ হিরো আলম” শিরোনামে অন্য একটি খবরকে হুবহু নকল করে শুধু শিরোনামের “আতঙ্ক” শব্দটি বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে।
“Daily News Live 24” নামে একটি ওয়েবপোর্টালের মাধ্যমে খবরটি ছড়াচ্ছে। ভাইরাল প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
ভাইরাল এই প্রতিবেদনের বিভিন্ন কি-ওয়ার্ডের সাহায্যে অনুসন্ধান করা হলে, ১৯ মার্চ, ২০২৩ এ ভোরের ডাক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের বিস্তারিত অংশের সাথে ভাইরাল প্রতিবেদনের শতভাগ মিল দেখতে পাওয়া যায়। নিম্নোক্ত ছবি দুইটি লক্ষ্য করলে বিষয়টি পরিষ্কার বুঝা যাবে-
ভাইরাল খবরভোরের ডাকের প্রতিবেদন
প্রতিবেদন দুইটির বিস্তারিত অংশে হিরো আলমকে গ্রেপ্তারের কোনো উল্লেখ নেই। এখানে বলা হচ্ছে, “হিরো আলমের কাছে জানতে চাওয়া হয়, গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন কি না? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছি। বাসায় না পৌঁছানো পর্যন্ত আতঙ্ক কাটবে না”। অর্থ্যাৎ, এখানে হিরো আলম নিজে গ্রেপ্তার হওয়ার এক ধরণের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। ভোরের ডাকের মূল প্রতিবেদনের শিরোনামেও একই কথাই বলা হচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি ভাইরাল এই প্রতিবেদনে উক্ত শিরোনামকে বদলে দেওয়া হয়েছে। “দেশে ফিরে ‘গ্রেপ্তার আতঙ্কে’ হিরো আলম”- এই লাইনটি বদলে শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, “দেশে ফিরে ‘গ্রেপ্তার’ হিরো আলম”। অর্থ্যাৎ, এখানে “আতঙ্কে” শব্দটি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যমে অনুসন্ধান করে তার গ্রেপ্তার হওয়ার কোনো খবর খুঁজে পাওয়া যায় নি। গণমাধ্যমগুলোতে এই খবরটিই পাওয়া যাচ্ছে যে, হিরো আলম নিজের গ্রেপ্তার হওয়ার আতঙ্কে আছেন বলে জানিয়েছেন। জানা যায়, তিনি ১৯ মার্চ রোববার দুবাই থেকে ঢাকা এসে পৌঁছান।
পরবর্তীতে, হিরো আলমের ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে ১৯ তারিখের পর থেকে বিভিন্ন পোস্ট পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি পোস্টে তাকে দুবাই সফর নিয়ে বিস্তারিত কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। অর্থ্যাৎ, তিনি যদি ১৯ তারিখ গ্রেপ্তারই হতেন তবে কিভাবে নিজ ফেসবুক পেজ থেকে তার দুবাই সফর নিয়ে কথা বলবেন? তাই পরিষ্কার ভাবেই বুঝা যাচ্ছে, তিনি গ্রেপ্তার হন নি।
উল্লেখ্য, হিরো আলম সম্প্রতি আলোচিত আরাভ খানের একটি স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করতে দুবাই গিয়েছিলেন। এর পর থেকেই গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা লক্ষ করা যায়। এর প্রেক্ষিতে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ থেকে জানানো হয়, আরাভ খান প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রয়োজনে সাকিব আল হাসান এবং হিরো আলমকে ডাকা হতে পারে।
অতএব, নিশ্চিতভাবেই বুঝা যাচ্ছে হিরো আলম গ্রেপ্তার হন নি। দুবাই এর এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার শঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন। মূলত এই খবরটিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় এই খবরটিকে “মিথ্যা” চিহ্নিত করা হচ্ছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?