সম্প্রতি ফেসবুকে বাংলাদেশে দিনে-দুপুরে হিন্দু মেয়েদের বোরকা না পরে বের হওয়ার কারণে মুখে এসিড ছুড়ে মারা হচ্ছে দাবিতে একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক তরুণী রিকশায় ব্যাগ দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করছেন এবং তাকে ঘিরে কয়েকজন যুবক পানি চেয়ে চিৎকার করছেন। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হিন্দু মেয়েদের বোরকা না পরে বের হওয়ার কারণে মুখে এসিড ছুড়ে মারা হচ্ছে দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার। মূলত, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নরসিংদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সচিবালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।এ সময় আহত হন এ তরুণী।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চে নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ভিডিওটি পাওয়া যায়। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে সাড়ে ৩টার দিকে পেজটিতে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টের ক্যাপশন অনুযায়ী, রাজধানীর সচিবালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় ধারণকৃত ভিডিও এটি।
৩ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড দীর্ঘ ভিডিওটির শুরুতেই পুলিশকে জল কামান থেকে পানি ছুড়তে এবং কিছু একটা ফোটাতে দেখা যায়। ঢাকা পোস্টের সাংবাদিক এ সময় জানান, এটি সাউন্ড গ্রেনেড। ভিডিওটির ২ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডে ভাইরাল ফুটেজটি রয়েছে। এ ফুটেজ দেখানোর সময় সাংবাদিককে বলতে শোনা যায়, পুলিশের ধাওয়ায় এ মুহুর্তে একজন শিক্ষার্থী আহত। তখনই ক্যামেরায় ভাইরাল ফুটেজটি দেখানো হয়। এ সময় ওই তরুণীর আশপাশে থাকা যুবকদের পানি চেয়ে চিৎকার করতে শোনা যায় এবং তরুণীটি ছাই রঙের একটি ব্যাগ দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেন।
ফুটেজটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, যুবকদের পানি চেয়ে চিৎকারের সময় পাশ থেকে একজন বলে ওঠেন ‘এই চোখে টিয়ারশেল লাগছে?।’ রিকশায় তরুণীর পাশে বসে থাকা যুবক সম্মতিসূচক উত্তর দিয়ে লাইটার বা আগুনের উৎস খুঁজতে থাকেন। পাশ থেকে আরেকজন লাইটার এগিয়ে দেন এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে বলতে শোনা যায়, টিয়ারশেল লাগলে পানি না, আগুনের সামনে নেন। এ সময় ফুটেজটিতে উপস্থিত ব্যক্তিদের কেউ তরুণীর মুখের সামনে থেকে ক্যামেরা সরিয়ে নিতে বলেন। এরপরই সাংবাদিক তার ক্যামেরা সরিয়ে নেন।ফুটেজটিতে তরুণীটিকে লাল রঙের জামা ও এর ওপরে কটি পরিহিত অবস্থায় দেখা গেছে।
ঢাকা পোস্টের ভিডিওটি বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, এর ৪০ সেকেন্ড সময়ে একই রঙের জামা, কটি ও ছাই রঙের ব্যাগ নিয়ে এক তরুণী পুলিশের ধাওয়া খেয়ে দৌড়াচ্ছেন। ফ্যাক্টওয়াচের বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয়, রিকশায় মুখ ঢেকে রাখা তরুণী ও এই তরুণী একজন।
পরে আরও খুঁজে দৈনিক প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা একটি ভিডিও প্রতিবেদনেও ভাইরাল ফুটেজটি পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, নরসিংদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সচিবালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়েছে পুলিশ। ভাইরাল ফুটেজটি ওই সময়ের।
যদিও ফ্যাক্টওয়াচ তরুণীটির ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে অনুসন্ধানে প্রাপ্ত এসব তথ্যের ভিত্তিতে এটি নিশ্চিত, হিন্দু মেয়েদের বোরকা না পরে বের হওয়ার কারণে মুখে এসিড ছুড়ে মারা হচ্ছে দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার। এর সঙ্গে সাম্প্রদায়িক হামলার কোনো সম্পর্ক নেই। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বোরকা না পরায় কোনো হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীর ওপর এসিড হামলা হওয়ার ব্যাপারেও কোনো তথ্য মূলধারার সংবাদমাধ্যম সূত্রে পাওয়া যায়নি।
তাই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এ দাবি সম্পর্কিত ভিডিওগুলোকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
Claim: সম্প্রতি ফেসবুকে বাংলাদেশে দিনে-দুপুরে হিন্দু মেয়েদের বোরকা না পরে বের হওয়ার কারণে মুখে এসিড ছুড়ে মারা হচ্ছে দাবিতে একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক তরুণী রিকশায় ব্যাগ দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করছেন এবং তাকে ঘিরে কয়েকজন যুবক পানি চেয়ে চিৎকার করছেন।
Claimed By: Facebook Users
Rating: False
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh