সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া কিছু পোস্টে দাবি করা হচ্ছে দৈনিক দেশ রূপান্তর “বিএনপির সমাবেশে ভাড়াটে কর্মীর রেট পুরুষ ৪০০ নারী ৬০০” এমন শিরোনাম যুক্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, দেশ রূপান্তর এমন শিরোনাম যুক্ত কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। পত্রিকাটির গত ৪ আগস্ট প্রকাশিত সংখ্যার প্রথম পাতায় “সভা সমাবেশে ভাড়াটে কর্মী রেট পুরুষ ৪০০ নারী ৬০০” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। মূলত সেই শিরোনামের ‘সভা’ অংশটুকুর স্থানে ‘বিএনপির’ শব্দটি জুড়ে দিয়ে বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “বিকৃত” বলে সাব্যস্ত করছে।
দেশ রূপান্তর “বিএনপির সমাবেশে ভাড়াটে কর্মীর রেট পুরুষ ৪০০ নারী ৬০০” এমন শিরোনাম যুক্ত কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কি না এ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কী-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে সরাসরি এমন শিরোনাম যুক্ত প্রতিবেদন না পাওয়া গেলেও দেশ রুপান্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গত ৪ আগষ্ট প্রকাশিত “সভা সমাবেশে ভাড়াটে কর্মী রেট পুরুষ ৪০০ নারী ৬০০” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এগুলোর জনসমাগম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে আনা কর্মীদের চাহিদা এখন অনেক বেশি। এছাড়াও, প্রতিবেদনটিতে মো. হেলাল নামের জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকার ভাড়াটে কর্মীদের একজন নিয়ন্ত্রকের বরাত দিয়ে জানানো হয় যে, ভাড়াটে কর্মীদের এক থেকে দেড় ঘণ্টার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করানোর জন্য জনপ্রতি ১৫০ টাকা দেয়া হয়। দিনব্যাপী প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে পুরুষদের জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৪০০ টাকা এবং নারীদের চাহিদা বেশি থাকায় জনপ্রতি তাদের ৬০০ টাকা করে দেওয়া হয়। তবে, এই প্রতিবেদনের কোথাও নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের সমাবেশে ভাড়াটে কর্মীদের অংশগ্রহণের ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়নি।
পরবর্তিতে, দেশ রূপান্তরের পত্রিকার গত ৪ আগষ্ট প্রকাশিত ই-পেপার ভার্সনে অনুসন্ধান করা হয়। কিন্তু সেখানেও “বিএনপির সমাবেশে ভাড়াটে কর্মী রেট পুরুষ ৪০০ নারী ৬০০” শীর্ষক শিরোনামে কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং, এই সংখ্যাটির প্রথম পাতায় “সভা সমাবেশে ভাড়াটে কর্মী রেট পুরুষ ৪০০ নারী ৬০০” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ভাইরাল পোস্টগুলোতে দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদন দাবিতে যেই ছবিটি শেয়ার করা হচ্ছে তার সাথে মূল প্রতিবেদনের তুলনা করে ফ্যাক্টওয়াচ টিম।
দেখা যাচ্ছে যে, ভাইরাল পোস্টগুলোতে দেশ রূপান্তরের ওয়াটারমার্ক, প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবি, প্রতিবেদকের নাম এবং সংবাদের বিস্তারিত অংশ ঠিক রেখে শিরোনামের একটি শব্দ পরিবর্তন করে প্রচার করা হচ্ছে। “সভা সমাবেশে ভাড়াটে কর্মী রেট পুরুষ ৪০০ নারী ৬০০” এই শিরোনামের ‘সভা’ শব্দটির স্থানে ‘বিএনপির’ শব্দটি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “বিকৃত” বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।