সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে ঢাকায় হোলি উদযাপনের সময় রঙ মাখানোর নামে মুসলিম নারীদের যৌন হয়রানি করা হচ্ছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে, ঘটনাটি সাম্প্রতিক নয়। ২০১৭ সালে পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজার থেকে ছবিটি তোলা হয়েছিল। রঙ হাতে তিন যুবকের নাম আকাশ (১৯), মো. সিফাত (২০) ও মো. মামুন (১৮)। তারা পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
‘হোলির নামে যৌন হয়রানি’র অভিযোগ করা এ ধরণের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
“বাংলাদেশে এই হোলি নামের যৌনহয়রানী বন্ধ করা উচিৎ।” – এমন ক্যাপশনে ভাইরাল হচ্ছে ছবিটি। ছবিতে দুইজন নারীকে দেখা যাচ্ছে। তাদের মুখে রঙ দিতে দেখা যাচ্ছে একজন যুবককে।
কিছু পোস্টের ক্যাপশন হিসেবে বলা হচ্ছে, “ঢাকায় হোলি”। পোস্টগুলোর কমেন্টবক্সে বিভিন্নজনের মন্তব্য থেকে অভিযোগ আকারে ‘হিন্দু যুবকেরা মুসলিম নারীদের রঙ মাখানোর নামে হেনস্তা করছে’ এ ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ আবহ তৈরি হচ্ছে।
ছবিটির সাহায্যে রিভার্স ইমেজ সার্চে ফেসবুকে এবং এক্সে বেশকিছু পোস্ট পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে মূলধারার সংবাদমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদনও পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের বরাতে জানা যায়, রিকশায় বসা দুইজন নারীকে রঙ মাখিয়ে দেওয়া যুবকদের নাম আকাশ, মো. সিফাত ও মো. মামুন। প্রতিবেদনের কোথাও তাদের হিন্দু বলে উল্লেখ করা হয়নি। ২০১৭ সালের ১২ মার্চ প্রকাশিত ঐ প্রতিবেদনে সে সময়ের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম মশিউর রহমানের বক্তব্য পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘গত ১২ মার্চ পুরান ঢাকায় শাঁখারীবাজারে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হোলি উৎসবের সময় দুই বোনের মুখে জোর করে কিছু বখাটে রঙ মেখে দেয়। এমনকি তাদের গায়েও হাত দেওয়ার চেষ্টা করে। বখাটেরা হোলি খেলায় ঢুকে গিয়ে পথচারী ও অফিসগামী বিভিন্নজনকে রঙ মাখিয়ে লাঞ্ছিত করে। বখাটেদের গ্রুপটি সেদিন রিকশায় চলমান নারীদের গায়ে ও মুখে রঙ লাগিয়ে নানা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও অঙ্গভঙ্গি করে। এ কারণে সেখানে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।‘ ভুক্তভোগী দুইবোনের বড়ভাই আহাদ ফেরদৌস এই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় বখাটেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের ১০ (৩০) ধারায় একটি মামলা করেন। পরে হেনস্তাকারি তিন যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই প্রতিবেদনের সঙ্গে ব্যবহৃত ছবিটির সঙ্গে ফেসবুকে শেয়ার হওয়া ছবিটির সাদৃশ্য রয়েছে।
২০১৭ সালের ১৬ মার্চ বাংলা ট্রিবিউন আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনটিতে ভুক্তভোগী দুই বোনের জবানবন্দীর দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। ঢাকা মহানগর হাকিম এস এম মাসুদ জামান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় দুই বোনের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এই প্রতিবেদনেও রিকশা থামিয়ে জোর করে রঙ মাখার সময়ের ছবিটি যুক্ত করা হয়েছে।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চে আরও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ২০১৭ সালের ১৫ মার্চে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনেও ওসি মশিউর রহমানের বরাতে বলা হয়, ‘১২ মার্চ শাঁখারীবাজারে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হোলি উৎসব চলাকালীন দুই বোনের মুখে জোর করে বখাটেরা রঙ মেখে দেয়। বখাটের তাদের গায়ে হাত দেয়ারও চেষ্টা করে। আমরা জেনেছি, বখাটেরা হোলি খেলার নাম করে পথচারী এবং অফিসগামী অনেককে রঙ দিয়ে লাঞ্ছিত করে।’ এই প্রতিবেদনেও বখাটের নাম হিসেবে আকাশ, সিফাত ও মামুনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই দুই প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্ট যে, ফেসবুকে যে ছবি ছড়াচ্ছে, সেই ছবিটি ২০১৭ সালের এই ঘটনার।
উল্লেখ্য, এ বছরের (২০২৫) হোলি উদযাপিত হয়েছে ১৪ মার্চ। এ বছর এমন ঘটনার প্রমাণ নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে খুঁজে পাওয়া যায় নি।
ফলে সঙ্গত কারণে বলা যায়, ফেসবুকে ছড়ানো ছবিটি এ বছরের নয়, ২০১৭ সালের। এবং হেনস্তাকারি যুবকেরা হিন্দু ; এ ধরনের তথ্যও কোন সূত্রে পাওয়া যায় নি। কাজেই ছবি ও ক্যাপশসহ পোস্টগুলোকে ‘বিভ্রান্তিকর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হলো।
Claim: সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে ঢাকায় হোলি উদযাপনের সময় রঙ মাখানোর নামে মুসলিম নারীদের যৌন হয়রানি করা হচ্ছে।
Claimed By: Facebook Users
Rating: Mostly false
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh