সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি শেয়ার হতে দেখা যাচ্ছে যা থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে উক্ত ছবিতে উপস্থিত নারীটি ভ্যালেন্টিনা ভাসিলিয়েভ, যিনি ৬৯ জন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এবং পাশের (ডান) ছবিটি তার সেই ৬৯ জন সন্তান এবং স্বামীকে নিয়ে তোলা একটি পারিবারিক ছবি। তবে, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে যে উক্ত ছবিটিতে দেখতে পাওয়া নারীটি ভ্যালেন্টিনা ভাসিলিয়াভ নন এবং যে ছবিটিকে তাদের পারিবারিক ছবি বলে দাবি করা হচ্ছে সেটি আসলে বহুবিবাহ নিয়ে ২০০৫ সালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ থেকে নেয়া। সেখানে Church of Jesus Christ of Latter-Day Saints এর ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট যোসেফ এফ. স্মিথ এবং তার একাধিক স্ত্রী এবং সন্তানদের দেখা যাচ্ছে। ছবিটি ১৯০৪ সালে তোলা হয়েছিলো। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত ছবিতে ব্যবহৃত দুটো ছবিকে বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করছে।
উক্ত ছবিতে যে নারীটিকে দেখা যাচ্ছে তিনি ৬৯ জন সন্তান জন্ম দেওয়া রাশিয়ান কৃষক ভ্যালেন্টিনা ভাসিলিয়াভ কিনা তা যাচাই করতে আমরা ছবিটি নিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি এবং বেশ কয়েকটি উৎস খুঁজে পাই। উক্ত উৎসগুলোর মাঝে আমরা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল অনলাইন এ প্রকাশিত দুটো নিবন্ধ খুঁজে পাই যেখানে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিতে উপস্থিত নারীটির অনুরূপ একজন নারীর ছবি দেখতে পাওয়া যায় এবং দুটো নিবন্ধেই উল্লেখ করা হয়েছে যে এই নিবন্ধগুলোতে প্রকাশিত ছবিগুলো ১৮৪০ এর দশকে তোলা এবং ছবির ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই নিউ ইয়র্ক এর অধিবাসী ছিলেন। ডেইলি মেইল অনলাইন এর নিবন্ধ দুটো দেখুন এখানে এবং এখানে। অন্য দুটো স্বতন্ত্র নিবন্ধ দেখুন এখানে এবং এখানে। সুতরাং, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিটিতে যে নারীকে ৬৯ জন সন্তানের জননী রাশিয়ান কৃষক ভ্যালেন্টিনা ভাসিলিয়ভ বলে দাবি করা হচ্ছে, তিনি আসলে তা নন। বরং তিনি নিউ ইয়র্ক অধিবাসী একজন নারী যিনি ১৮৪০ এর দশকে নতুন উদ্ভাবন হওয়া দাগোরিওটাইপ (daguerreotype) ক্যামেরার সামনে মডেল হয়েছিলেন।
(২) ছবির মানুষগুলো কি ভ্যালেন্টিনা ভাসিলিয়াভ এর স্বামী এবং তার সন্তানদের?
সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিটিতে যে পারিবারিক ছবিটি দেখা যাচ্ছে সেটি ভ্যালেন্টিনা ভাসিলিয়াভের পারিবারিক ছবি কিনা তা যাচাই করতে আমরা ছবিটি নিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি এবং জানতে পেরেছি যে উক্ত পারিবারিক ছবিটি Church of Jesus Christ of Latter-Day of Saints এর ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট যোসেফ এফ. স্মিথ এবং তার একাধিক স্ত্রী এবং সন্তানদের যা ১৯০৪ সালে তোলা হয়েছিলো। যোসেফ এফ. স্মিথ এবং তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তোলা ছবিটি বহুবিবাহ (polygamy) নিয়ে ২০০৫ সালে Utah Historical Quarterly তে প্রকাশিত B. Carmon Hardy এর লেখা “That ”Same Old Question of Polygamy and Polygamous Living:” Some Recent Findings Regarding Nineteenth and Early Twentieth-Century Mormon Polygamy” শীর্ষক একটি নিবন্ধে দেখতে পাওয়া যায়। উক্ত নিবন্ধটি দেখতে পারবেন এখানে। সুতরাং, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিটিতে যে ছবিকে ভ্যালেন্টিনা ভাসিলিয়াভের পারিবারিক ছবি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে সেটি আসলে তার পারিবারিক ছবি নয় বরং এটি যোসেফ এফ. স্মিথ নামক একজন চার্চ প্রেসিডেন্টের পারিবারিক ছবি।
অন্যান্য ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইটের অনুসন্ধান:
দুটো জনপ্রিয় ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট স্নোপেস এবং ইন্ডিয়া টুডে ভ্যালেন্টিনা ভাসিলিয়াভ এর পারিবারিক ছবিটির ব্যাপারে অনুসন্ধান করে জানিয়েছে যে উক্ত ছবিটি ২০০৫ সালে Utah Historical Quarterly তে প্রকাশিত বহুববিবাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ থেকে নেওয়া এবং ছবিটিতে যোসেফ এফ. স্মিথ নামক একজন চার্চ প্রেসিডেন্ট এবং তার একাধিক স্ত্রী এবং সন্তানদের দেখা যাচ্ছে। তাদের অনুসন্ধান থেকে আরও জানা যায় যে, Top 10 List নামক একটি ওয়েবসাইট পৃথিবীর সেরা দশটি বৃহত্তম পরিবার নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করতে গিয়ে ভাসিলিয়াভ পরিবারের জায়গায় যোসেফ এফ. স্মিথ এর পারিবারিক ছবিটি ভুলভাবে ব্যবহার করে এবং পরবর্তীতে উক্ত ছবিটিকেই ভ্যালেন্টিনা ভাসিলিয়াভের ৬৯ জন সন্তানের ছবি বলে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। স্নোপেস এবং ইন্ডিয়া টুডে এর ফ্যাক্ট-চেকিং রিপোর্ট দুটো পড়ুন এখানে এবং এখানে।
উল্লেখ্য, ভ্যালেন্টিনা ভাসিলিয়াভ একজন রাশিয়ান কৃষক এবং কথিত আছে যে তিনি তার জীবদ্দশায় ৬৯ জন সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন এবং তাকে ১৭ বার সন্তান জন্মদানের ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো। প্রত্যেকবার সন্তান জন্মদানের সময় তিনি দুইজন বা তার অধিক সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। যদিও ভ্যালেন্টিনা ভাসিলিয়াভ এতসংখ্যক সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন কিনা বা কোন নারীর পক্ষে এতজন সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
অতএব, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিদুটো ভ্যালেন্টিনা ভাসিলিয়াভ এবং তার স্বামী-সন্তানদের নয়।
সুতরাং, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিটিতে ভিন্ন প্রসঙ্গে ভুল ছবি ব্যবহার করায় ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত ছবিটিকে বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?