সেন্টমার্টিন যাওয়ার নৌরুট ইনানী জেটি ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে ফেলা হয় নি

70
সেন্টমার্টিন যাওয়ার নৌরুট ইনানী জেটি ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে ফেলা হয় নি
সেন্টমার্টিন যাওয়ার নৌরুট ইনানী জেটি ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে ফেলা হয় নি

সাম্প্রতিক সময়ে থ্রেডসে একটি বার্তা ছড়িয়েছে যে, সেন্টমার্টিন যাওয়ার একমাত্র নৌরুট ইনানী জেটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। তবে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যাচ্ছ, সেন্টমার্টিন যাবার একমাত্র নৌরুট ইনানী জেটি নয়। বরং ২০২৪ সালের শুরুতে এই জেটি থেকে সেন্টমার্টিনগামী বাণিজ্যিক পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। এর আগে কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি থেকে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস চলাচল করত। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকেও সেন্টমার্টিন যাবার জাহাজ চলাচল করে। বলাই বাহুল্য, সেন্টমার্টিন যাবার বহুল ব্যবহৃত নৌরুটটি হলো কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদীতে অবস্থিত বিআইডব্লিউটিএ জেটি। লক্ষণীয় যে, কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী সৈকতের নৌবাহিনীর জেটিটি তীব্র টেউয়ের কারণে বার্জের ধাক্কায় ভেঙে গেছে, এই মর্মে একাধিক জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সুতরাং এটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে ফেলার দাবিটি মিথ্যা।

বিস্তারিত:

উপরে বর্ণিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যাচ্ছে, ইনানী জেটি ছাড়াও আরও একাধিক জেটি ব্যবহার করে সেন্টমার্টিন যাবার জাহাজ চলাচল করে। মূলত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ইনানীতে (রয়েল টিউলিপের সামনে) আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ (আইএফআর)-২০২২ উপলক্ষে বাংলাদেশ নৌবাহিনী জেটিটি নির্মাণ করে। আর ইনানী সমুদ্র সৈকতের জেটি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটক জাহাজ চলাচল শুরু জানুয়ারি মাসের ২০২৪ তারিখ থেকে। তবে শুরু থেকে এই জেটি নির্মাণের বিরোধিতা করেছে পরিবেশবাদীরা। পরিবেশগতভাবে সংকটপূর্ণ (ইসিএ) এলাকা ইনানীতে এ ধরনের জেটি কেন ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট ২০২২ সালে একটি রুলও জারি করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কর্মীরা।

এ পর্যায়ে ইনানী জেটি ভাঙার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে কি বলা হয়েছে তা জেনে নেওয়া যাক:

এ বিষয়ে bdnews24.com থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম হলো- “ঘূর্ণিঝড় দানা: কক্সবাজারে বার্জের ধাক্কায় ভেঙে গেছে নৌবাহিনীর জেটি” আর jugantor.com থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম “ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে ভেঙে দুই খণ্ড ইনানীর জেটি”। দুটি গণমাধ্যমেই বিস্তারিত অংশে বলা হয়েছে, জেটির সাথে বাঁধা ছিলো ছোট বার্জ। যা কিনা জেটি সংস্কার কাজে ব্যবহৃত হয়। মধ্যরাত থেকে উত্তাল বাতাসের ধাক্কায় বড় বড় আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। আওয়াজ থেকে এটি পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিলো জেটির সাথে বাঁধা থাকা বার্জের আঘাত লাগছে। এক পর্যায়ে জেটিটি ভেঙে যায়।

এ বিষয়ে prothomalo.com থেকে “কক্সবাজারে সাগর উত্তাল, ভেঙে গেছে নৌবাহিনীর জেটি” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটির বিস্তারিত অংশের একসাথে বলা হয়েছে, “কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানীতে ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙে গেছে নৌবাহিনীর জেটি”।

প্রসঙ্গত যে, বিভিন্ন কারণবশত নানা সময়ে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ চলাচলের উপরে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে ১২ মাসেই সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা বঙ্গোপসাগর হয়ে যাতায়াত করে ট্রলার এবং স্পিডবোটে। দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী বা অন্যান্য উপকরণ পাঠানোর জন্যও ট্রলার এবং স্পিডবোট চালু থাকে।

থ্রেডসে ভাইরাল কিছু পোস্ট দেখা যাবে এখানেএখানেএখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির মূল বক্তব্য হলো সেন্টমার্টিন যাওয়ার একমাত্র নৌরুট ইনানী জেটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এর মাধ্যমে সেন্টমার্টিন যাওয়ার অধিকার হারাবে বাংলাদেশের জনগণ। সেন্টমার্টিন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অংশ থাকবে না। অথচ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যাচ্ছে, উত্তাল সাগরের তীব্র ঢেউরের ফলে সৃষ্ট দূর্ঘটনার কারণে ইনানী জেটিটি ভেঙে গেছে। আর এই রুটটি ছাড়াও বিকল্প একাধিক রুট দিয়ে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ চলাচল করে থাকে।

সঙ্গত কারণে ইনানী জেটিকে একমাত্র নৌরুট দাবি করা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে ফেলার দাবিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

No Factcheck schema data available.

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে

এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে
ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh