ফরিদপুরে মন্দির ভাঙচুর ও গ্রেফতারের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ের নয়

101
ফরিদপুরে মন্দির ভাঙচুর ও গ্রেফতারের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ের নয়
ফরিদপুরে মন্দির ভাঙচুর ও গ্রেফতারের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ের নয়

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এর মধ্যে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় এক রাতে তিনটি মন্দিরে ভাঙচুরের ঘটনায় এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ কিছু পোস্ট ছড়িয়ে পরছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে যে, "ভারতীয় মুসলমানেরা বাংলাদেশের অখণ্ডতা চায় না, কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুরা বেশিরভাগই অখণ্ড ভারত চায়। হাসিনার আমলে মন্দির ভাঙার ঘটনায় কারা জড়িত, তা বের করা হয়নি এবং হাসিনা ইচ্ছাকৃতভাবে এটি এড়িয়ে গেছেন। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা সবাই হিন্দু বা ইস্কনের সদস্য।" কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ে মন্দিরে ভাংচুরের ঘটনায় হিন্দু যুবক গ্রেফতারের নয় বরং ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের ভিন্ন ঘটনার। সুতরাং, ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় ভাইরাল পোষ্টগুলো বিভ্রান্তিকর।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, ও এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

আলোচিত তথ্যটি যাচাই করার জন্য শুরুতেই রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে পোস্টটির ছবির সত্যতা যাচাই করা হয়। অনুসন্ধানে গত ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ এ দৈনিক নয়াদিগন্তে “ফরিদপুরে ৩ মন্দিরে ভাংচুরের ঘটনায় হিন্দু যুবক গ্রেফতার” শিরোনামে করা একটি প্রতিবেদন খুজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সাথে আলোচিত পোস্টটির ছবির হুবাহু মিল রয়েছে।  

উল্লেখ্য, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ এ দ্য ডেইলি স্টারের করা একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “ফরিদপুরের ভাঙ্গায় দুটি মন্দিরের নির্মাণাধীন দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাঙ্গা বাজারের গুড়পট্টি এলাকায় অবস্থিত ‘ভাঙ্গা বাজার সার্বজনীন হরি মন্দির’ এবং ভাঙ্গা থানার সামনে অবস্থিত ‘ভাঙ্গা সার্বজনীন কালি মন্দির’-এ এই ঘটনা ঘটে।” 

পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে আরো অনুসন্ধান করে দেখা যায় গত এপ্রিলেও একই দাবি সম্পর্কিত কিছু পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

গত এপ্রিলের সেই সকল পোস্টগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, ও এখানে। 

মুলত, গত ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নে একটি মন্দিরের প্রতিমায় অগ্নিসংযোগ এবং সন্দেহজনক কারণে দুজন শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর দশজনকে আটক করা হয়েছে। এই নিয়ে প্রথম আলোর করা একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এর প্রেক্ষিতে, ‘ফরিদপুরে আলফাডাঙ্গায় এক রাতে ৩ মন্দিরে ভাঙচুরের ঘটনায় হিন্দু যুবক’ শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে  ছড়িয়ে পড়ে।

গত এপ্রিল এবং এই অক্টোবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পরা আলোচিত পোস্টটির ব্যবহৃত পোষ্টের বা ফটোকার্ড গত ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ এ DOAM – Documenting Oppression Against Muslims – Bangla নামক ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করা হয়। 

সুতরাং, নিশ্চিতভাবেই দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে প্রচারিত আলোচিত পোস্টগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের ভিন্ন ঘটনার ছবি, যাকে সাম্প্রতিক ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

No Factcheck schema data available.

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে

এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে
ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh