যা ছড়িয়েছে: নেতার বাসায় হঠাৎ অভিযানে টাকার পাহাড় মিলেছে। ঘটনাটি বাংলাদেশে ঘটেছে।
ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত: দাবিটি বিভ্রান্তিকর। নেতার বাসায় অভিযানের ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়। মূল ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচিতে। কিন্তু ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এসব সংবাদের শিরোনামে নির্দিষ্ট কোনো দেশ বা স্থানের উল্লেখ নেই। যে কারণে সংবাদটি দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি হয়তো বাংলাদেশের ঘটনা। যার ফলে সাধারণ ব্যবহারকারীদের অনেকে বিষয়টি বাংলাদেশের ঘটনা ভেবেছেন। অনেকেই আবার ঘটনাটির জন্য বাংলাদেশ সরকারকে দায়ী করেছেন।
ফেসবুকে আলোচিত সংবাদটি বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমে “নেতার বাসায় হঠাৎ অভিযানে মিললো টাকার পাহাড়!”, “রাঁচি থেকে ২৫ কোটি রুপি উদ্ধার” বা “মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিবের গৃহকর্মীর বাসায় টাকার পাহাড়” ইত্যাদি শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদটির সাথে একটি ফটোকার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। ফটোকার্ডটিতে টাকার বাণ্ডিলের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। উক্ত সংবাদটির বিস্তারিত অংশে দেখা যায়, ঘটনাটি ভারতের ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচিতে ঘটেছে। লক্ষনীয় যে, প্রতিবেদনের শিরোনামে যখন স্থানের নাম রাঁচি বা দেশের নাম ভারত উল্লেখ করা হয়েছে, তখন তা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি হয় নি। অথচ “নেতার বাসায় হঠাৎ অভিযানে মিললো টাকার পাহাড়!” এ জাতীয় শিরোনাম বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। তাছাড়া এটি বাংলাদেশের কোনো ঘটনা ভেবে অনেকেই সংবাদটি শেয়ার করেছেন।
উল্লেখ্য, ভারতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে যে সকল প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে সেখানে সংবাদের শিরোনামেই ঘটনাস্থল এবং কে গ্রেফতার হয়েছেন তা উল্লেখ আছে। অথচ বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমের শিরোনামে স্থানে বা ব্যক্তির পরিচয় উল্লেখ নেই। যার ফলে স্বভাবতই জনসাধারণ বিভ্রান্ত হয়েছেন। বিভ্রান্তির নমুনা নিচে দেখানো হলো:
প্রসঙ্গত যে, ভারতের এই সংবাদটি বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমে কিভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রথম আলো, মানবজমিন এ বিষয়ে যেই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেখানে শিরোনাম অংশে পরিষ্কারভাবে স্থান বা ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছে। অপরদিকে যায়যায়দিন থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম হলো “মন্ত্রীর সচিবের বাসায় মিলল ২৫ কোটি রুপি” শিরোনামের শেষ শব্দে রুপি উল্লেখ থাকায় বোঝা যাচ্ছে এটি বাংলাদেশের কোনো ঘটনা না। যদিও কিছু গণমাধ্যমের শিরোনাম থেকে বোঝার উপায় নেই এটি কোন স্থানের ঘটনা। ফেসবুক ভাইরাল এমন কিছু লিংক বাছাই করা হয়েছে। যা দেখতে পাবেন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
উল্লেখ্য, এই ঘটনাটির মূল বিষয়বস্তু হলো ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ডের রাজধানী রাঁচির বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে দেশটির কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এই অভিযানের মাধ্যমে রাঁচি থেকে ২৫ কোটি বেহিসাবি রুপি উদ্ধার হয়েছে । ঝাড়খন্ডের গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী আলমগীর আলমের ব্যক্তিগত সচিব সঞ্জীব লালের গৃহ সহকারীর বাড়িতে এই অর্থ পাওয়া যায়।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া সংবাদটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।