সম্প্রতি আয়েশা আক্তার আলভিয়া নামের একটি শিশুর চিকিৎসার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার একটি তহবিল সংগ্রহের আবেদন ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে জানা গিয়েছে, শিশুটির আসল নাম আশু সাইনি; বয়স- ৩ বছর এবং সে একজন ভারতীয়। “Millap.org” নামক ভারতের একটি তহবিল সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজ এবং টুইটার থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভুল শিরোনামে প্রকাশিত এইসব পোস্টগুলোকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।
ভাইরাল হওয়া এই ফেসবুক পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, আয়েশা আক্তার আলভিয়া নামক একটি শিশুর ফুসফুসে ছিদ্র এবং কিডনিতে সমস্যা রয়েছে। তাই ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হবে এবং চিকিৎসার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। আর সেই কারণেই মানুষের কাছে অর্থ সহায়তার অনুরোধ করছে। আরোও বলা হয়, এই শিশুর বাবার নাম মোঃ হাকিম মিয়া এবং তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরের স্থায়ী বাসিন্দা। বর্তমানে শিশুটি কিশোরগঞ্জের জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে বলেও দাবি করা হয়। ভাইরাল এই পোস্টগুলোর সম্পূর্ণ বিবরণ এক হলেও অনেকক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে সাহায্য পাঠানোর জন্য বিকাশ এবং নগদ নাম্বারটি ভিন্ন।
ফ্যাক্টওয়াচেরঅনুসন্ধান
ভাইরাল এই পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ছবিগুলো দিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে, ভারতের আর্থিক সহায়তার জন্য তহবিল সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান “milaap.org” এর একটি আবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। “3-Year-Old’s Kidneys and Liver Are Failing, He Needs Your Help” শিরোনামের এই আবেদনে ব্যবহৃত ছবির সাথে বর্তমানে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোর ছবির শতভাগ মিল পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে ওই শিশুটির নাম বলা হয়, আশু সাইনি এবং তার বয়স তিন বছর। এই আবেদন থেকে আরোও জানা যায়, এই শিশুর মায়ের নাম যশোদা (Yashoda) ও বাবার নাম রহিতোষ (Rohitash) এবং তারা সবাই ভারতীয় নাগরিক। এখানে বলা হয়, শিশুটি “,Acute Liver Failure, Stage 3 Acute Renal Failure and Hemolytic Uremic Syndrome (HUS)” সমস্যায় ভুগছে এবং তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ১০ লক্ষ রূপী।
এই আবেদনে সহযোগিতামূলক প্রমাণ হিসেবে গত ২৬/০৭/২১ তারিখে “Surya Mother & Child Care Jaipur Pvt. Ltd” এর একজন “Pediatric Nephrologist” ডাক্তার ইয়াশু সাইনির (Yashu Saini) স্বাক্ষরিত একটি বক্তব্যের ছবিও সেখানে যুক্ত করে দেয়া হয়।
গত ৩০ জুলাই, ০১ আগস্ট এবং ১২ আগস্ট ২০২১ তারিখে এ Milaap এর ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে তিনটি ফেসবুক পোস্ট এবং ভ্যারিফাইড টুইটার একাউন্ট থেকে ০২ আগস্ট ২০২১ তারিখে একটি পোস্টের মাধ্যমে এই আবেদনটি দেখতে পাওয়া যায়।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বর্তমানে ফেসবুকে ভাইরাল এই শিশুটির পরিচয় ভুলভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। শিশুটির নাম, তার পিতা-মাতার পরিচয় কিংবা তার অসুস্থতা প্রায় সবগুলো তথ্যই ভুল ব্যবহার করে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করা হচ্ছে। আবার আবেদনের জন্য ব্যবহৃত নাম্বারগুলোও একেক জায়গায় একেক রকম। এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেকিং সাইট রিউমার স্ক্যানার সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এটি পড়া যাবে এখান থেকে।
অতএব, উপরোল্লিখিত তথ্যগুলোর ভিত্তিতে ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে মিথ্যা চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?