১১ জুলাই ২০২১ তারিখে “বাঁশেরকেল্লা” নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে “আফগানিস্তানের কান্দাহারে ভারতীয় দূতাবাস বন্ধ করল ভারত এবং সেখানে দায়িত্বরতদের বিশেষ বিমানে করে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।”- এমন একটি তথ্য প্রকাশ করা হয়। এর পর থেকে বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে উঠে। এ বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য ফ্যাক্ট-ওয়াচ ভারতের পররাষ্ট্র-মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিটির শরণাপন্ন হয়। যেখানে পরিষ্কার বলা আছে যে, আফগানিস্তানের কান্দাহারে অবস্থিত ভারতের দূতাবাস বন্ধ করা হয়নি। তবে দূতাবাসে অবস্থিত ভারতীয় কর্মকর্তাদের সাময়িক সময়ের জন্য ভারতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দূতাবাসটির কার্যক্রম আপাতত দূতাবাসের স্থানীয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে চলছে। তাই এই তথ্যটুকুকে ফ্যাক্ট-ওয়াচ “অর্ধসত্য” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
গত ১১ জুলাই ২০২১ তারিখে “বাঁশেরকেল্লা” নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে “……ব্রেকিং নিউজ আফগানিস্তানের কান্দাহারে ভারতীয় দূতাবাস বন্ধ করল ভারত। এবং সেখানে দায়িত্বরতদের বিশেষ বিমানে করে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।” — এমন শিরোনামে একটি পোস্ট প্রকাশিত হয়। এর সাথে একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে এই তথ্যটি ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
“বাশেরকেল্লা” নামক ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত এই পোস্টে দুইটি তথ্য রয়েছে। প্রথমত সেখানে দাবি করা হচ্ছে, কান্দাহারে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস বন্ধ করা হয়েছে। এই বিষয়ে ফ্যাক্ট-ওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১১ জুলাই ২০২১ তারিখে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে পরিষ্কারভাবেই বলা হয়, কান্দাহারে অবস্থিত ভারতের দূতাবাসটি বন্ধ হয়নি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এই বিজ্ঞপ্তিটি নিজের অফিসিয়াল টুইটার আ্যাকাউন্টে প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি আরো জানান যে, আফগানিস্তানে নিরাপত্তার বিষয়টি ভারত পর্যবেক্ষণ করছে।
এর আগে গত ৬ জুলাই ২০২১ তারিখে, আফগানিস্তানে ভারতের দূতাবাস বন্ধের খবরটিকে “ভুল” হিসেবে উল্লেখ করেছে কাবুলে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস। সেখানে আরও বলা হয়, কান্দাহার এবং মাজারে দূতাবাসের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কাবুলে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের অফিসিয়াল টুইটার থেকে এই তথ্য দেওয়া হয়েছিল।
দ্বিতীয়ত, সেখানে দাবি করা হয় যে, দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বিশেষ বিমানে করে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এই বিষয়ে অরিন্দম বাগচি উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, শহরটিতে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসে কর্মরত ভারতীয় কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে সীমিত সময়ের জন্য ভারতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এই তথ্যটিকে আলাদাভাবে সঠিক বলা যায়।
উক্ত ফেসবুক পোস্টে একটি ছবিও ব্যবহার করা হয়। ছবিটি ভারতীয় গণমাধ্যম জি-নিউজ, কান্দাহারে ভারতীয় দূতাবাস নিয়ে একটি প্রতিবেদনে ব্যবহার করে। জি-নিউজ আবার ছবিটি রয়টার্সের বরাত দিয়ে ব্যবহার করে। সেখানে বলা হয়, গত শনিবারে কান্দাহারে কর্মরত ভারতীয় কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে আনতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমান কান্দাহারে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহ থেকে তালেবান এবং আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলমান রয়েছে। আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহারে এই যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এবং তালেবান বাহিনী ইতিমধ্যে সেখানকার কয়েকটি জেলা দখল করে নিয়েছে বলে জানা যায়।
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হিন্দুস্তান টাইমসের একটি প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যের ভিত্তিতে এই বিষয়টি পরিষ্কার যে, কান্দাহারে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস বন্ধ হয়নি। তবে সেখান থেকে স্বল্প সময়ের জন্য কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের ভারতে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সব তথ্য বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এই ভাইরাল খবরটিকে “অর্ধসত্য” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?