গণ অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট ২০২৪ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগের মত ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও, ছবি ও সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে মূলত বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। ভারতীদের বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি এই উদ্বেগের পাল্টা জবাব হিসেবে ফেসবুকে একজন ব্যক্তিকে মারধর করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। সেখানে দাবি করা হয় এই ব্যাক্তি একজন ভারতীয় মুসলিম, যাকে মারধর করে “জয় শ্রী রাম” বলার জন্য বাধ্য করা হয়। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে বাস্তবে ভিডিওটি ২০২২ সালের। এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১৩ বছরের একটি মেয়েকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল যার প্রেক্ষিতে স্থানীয়রা তাকে মারধর করে। আসল ভিডিওতে কোথাও “জয় শ্রী রাম” বলতে শোনা যায়নি। অন্য একটি ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডের শব্দ এই ভিডিওতে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং, ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় ভাইরাল পোষ্টগুলো বিকৃত।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির উৎস সম্পর্কে জানার জন্য শুরুতেই এর বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে, ऋतुराज पिपरिया (ঋতুরাজ পিপারিয়া) নামের একটি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে ভাইরাল ভিডিওটির পূর্ব সংস্করণের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি ১০ মে ২০২২ এ আপলোড করা হয়েছিল। কিন্তু এই ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে “জয় শ্রী রাম” বলতে বাধ্য করা জাতীয় কিছু শোনা যায়নি। কিন্তু ভিডিওর ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, ভিডিওতে যাকে মারধর করতে দেখা যাচ্ছে তিনি দিল্লির শাহদারায় নাথু কলোনি চক এলাকায় একটি মেয়ের শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করেছিল। এই অভিযোগের কারণে তাকে মারধর করা হয়েছিল।
दिल्ली शाहदरा स्थित नत्थू कॉलोनी चौक पर मुसलमान समुदाय का व्यक्ति 40 से 45 उम्र का व्यक्ति मात्र 14 साल की उम्र के बच्ची से कर रहा था 5 दिन से छेड़छाड़ आज उसे रंगे हाथों पकड़ा गया नत्थू कॉलोनी चौक पर बच्ची के मां-बाप और उसके परिवार वालों के द्वारा pic.twitter.com/34jbznZiUQ
— ऋतुराज पिपरिया (मोदी का परिवार) (@durg_BJP) May 10, 2022
পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে ১২ মে, ২০২২ এ ANI এর অফিসিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করা একটি পোষ্ট খুঁজে পাওয়া যায়। সেখান থেকে জানা যায়, দিল্লি পুলিশ ১৩ বছর বয়সী এক মেয়েকে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগে ইরফান খান নামের ৩৭ বছর বয়সী একজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে দিল্লীর শাহদারা থানায় 354D IPC এবং 12 POCSO আইনে মামলা দায়ের করা হয়। ইন্ডিয়া টুডে এবং দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এই একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কিন্তু কোথাও এই লোকটিকে “জয় শ্রী রাম” বলতে বাধ্য করার কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। সেখানে কেবল উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভিডিওতে থাকা লোকটিকে দিল্লির শাহদারা এলাকায় ১৩ বছর বয়সী একটি মেয়েকে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগে স্থানীয় জনগণ ধরে মারধর করেছিল। পরে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
অন্যদিকে, ভাইরাল ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডের শব্দ সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে জানা যায় ২৯ আগস্ট ২০২১ এ ভারতের মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িন জেলার পুলিশ একজন মুসলিম ব্যক্তিকে “জয় শ্রী রাম” স্লোগান দিতে এবং তাকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করার জন্য দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। ইন্ডিয়া টুডের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে এই মুসলিম ব্যক্তিকে “জয় শ্রী রাম” স্লোগান দিতে বাধ্য করার ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডের আওয়াজই সম্পাদনা করে ভাইরাল ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে।
অর্থাৎ, এতটুকু নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে যে, দিল্লীতে একটি মেয়েকে হেনস্থা করার অভিযোগে আলোচিত মুসলিম ব্যাক্তিকে মারধর করা হয়েছিল। এটা মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোনো সাম্প্রদায়িক আক্রমণ নয়। সুতরাং, এই সকল পোষ্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “বিকৃত” হিসেবে চিহ্নির করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।