পাকিস্তানী সৈন্যটি কি হিন্দু/মুসলমান পরখ করছে এই ছবিতে?

23
পাকিস্তানী সৈন্যটি কি হিন্দু/মুসলমান পরখ করছে এই ছবিতে?
পাকিস্তানী সৈন্যটি কি হিন্দু/মুসলমান পরখ করছে এই ছবিতে?

Published on: [post_published]

সামাজিক মাধ্যমে প্রায়ই একটি ছবি শেয়ার হতে দেখা যায়, যেখানে দাবি করা হয় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা এভাবেই মানুষদের দাঁড় করিয়ে তাদের খৎনা হয়েছে কিনা যাচাই করতো এবং তারা হিন্দু বা মুসলমান কিনা তা নির্ধারণ করতো। তবে, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে যে ছবিটি কিশোর পারেখ নামক একজন ভারতীয় ফটোজার্নালিস্ট এর তোলা এবং ছবিটির সৈন্যটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন সদস্য, যিনি পাকিস্তানি গুপ্তচর সন্দেহে মানুষদের দাঁড় করিয়ে তল্লাশি করে দেখছেন তারা লুঙ্গির আড়ালে অস্ত্র বহন করছেন কিনা। আশিক পারেখ তাঁর “Bangladesh: A Brutal Birth” শীর্ষক শিরোনামের একটি বইয়ে আলোচিত ছবিটি ক্যাপশনসহ সংযুক্ত করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত ছবিটির সাথে করা দাবিকে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করছে।

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত এমন কিছু পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

শেয়ারকৃত পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে পাকিস্তানি মিলিটারি সদস্যের মানুষদের দাঁড় করিয়ে খৎনা হয়েছে কিনা তা যাচাই করার কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা যাচাই করতে আমরা উক্ত ছবিটি গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করে জানতে পেরেছি যে, ছবিটি কিশোর পারেখ নামক একজন ভারতীয় ফটোজার্নালিস্ট এর তোলা এবং ছবিটির সৈন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন সদস্য, যিনি গুপ্তচর সন্দেহে মানুষদের দাঁড় করিয়ে তল্লাশি করছেন তারা কোন অস্ত্র বহন করছে কিনা। কিশোর পারেখ ১৯৭২ সালে “Bangladesh: A Brutal Birth” নামক একটি বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করেন। উক্ত বইটির ২১ নং পৃষ্ঠায় শেয়ারকৃত পোস্টে ব্যবহৃত ছবিটির অবিকল একটি ছবি দেখা যায় যার ক্যাপশনে ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে লেখা আছে, “INDIAN TROOPS GRIMLY ROUND UP VILLAGERS SUSPECTED TO BE PAKISTANI SPIES. THEY PEER INTO LUNGIS IN SEARCH OF WEAPONS.” অর্থাৎ, পাকিস্তানি গুপ্তচর সন্দেহে গ্রামবাসীদের একত্র করে অস্ত্রের সন্ধানে তাদের লুঙ্গিগুলো তল্লাশি করছে ভারতীয় সেনারা। কিশোর পারেখের সম্পূর্ণ বইটি পড়তে পারেন এখানে

কিশোর পারেখের তোলা ছবিটি নিয়ে বিতর্কের সূচনা হয় ১৯৭২ সালে যখন দৈনিক বাংলা পত্রিকার ডিসেম্বর মাসের গণহত্যা সংখ্যায় অধ্যাপক গোলাম জিলানী নজরে মোরশেদ এর লিখা “হানাদারদের ঘাঁটি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ” শীর্ষক একটি নিবন্ধ প্রকাশ করা হয় এবং কিশোর পারেখ এর তোলা ছবিটি ব্যবহার করা হয়। উক্ত নিবন্ধে ব্যবহৃত কিশোর পারেখের ছবিটিতে ক্যাপশন হিসেবে লিখা হয়, “ওরা মানুষ বর্বরদের কাছে সেটা বড় কথা নয় – বড় কথাটি ছিলো ওরা হিন্দু না মুসলমান। তাই উলঙ্গ করে দেখছে।” এখানেই সূচনা হয় বিভ্রান্তির।

২০১২ সালে প্রকাশিত ”The absent piece of skin: Gendered, racialized and territorial inscriptions of sexual violence during the Bangladesh war’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্রের ২৪ নং পৃষ্ঠায় নয়নিকা মুখার্জি নামক একজন গবেষক কিশোর পারেখের ছেলে স্বপন পারেখের সাক্ষাৎকার এর বরাত দিয়ে জানান, উক্ত ছবিটি একজন ভারতীয় সেনার যিনি অস্ত্রের সন্ধানে তল্লাশি করছেন। “Bangladesh: A Brutal Birth” নামক বইয়ের ২১ নং পৃষ্ঠায় কিশোর পারেখের তোলা ছবিটির ক্যাপশন স্বপন পারেখের বক্তব্যটিকে সমর্থন করে। তাছাড়া, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা নিশ্চিত করেছেন যে ছবিটির সৈন্য একজন ভারতীয়, কারণ তাঁদের মতে ১৯৭১ সালে এসএলআর (SLR) রাইফেল ছিলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি বৈশিষ্ট্যসূচক অস্ত্র এবং পাকিস্তানি সৈন্যরা চাইনিজ রাইফেল, একে ৪৭, জি৩ জার্মান রাইফেল বহন করতো।

উল্লেখ্য, কিশোর পারেখ নিজস্ব উদ্যোগ এবং অর্থায়নে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধের একদম শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশে আসেন যুদ্ধের ছবি ধারণ করতে এবং নিজের তোলা ছবিগুলো নিয়ে ১৯৭২ সালে প্রকাশ করেন “বাংলাদেশ: অ্যা ব্রুটাল বার্থ” নামক বইটি। বইটির ভিডিও সংস্করণ দেখতে পারেন এখানে

অতএব, এই বিষয়টি স্পষ্ট যে কিশোর পারেখের তোলা ছবিটির সাথে পাকিস্তানি মিলিটারির কোন সম্পর্ক নেই এবং কিশোর পারেখের বই এবং তাঁর ছেলের বক্তব্য অনুযায়ী ছবিটির সৈন্য একজন ভারতীয়, যিনি পাকিস্তানি গুপ্তচর সন্দেহে গ্রামবাসীদের ধরে লুঙ্গি তল্লাশি করে দেখছেন তারা কোন অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে কিনা।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে আমরা এই সিদ্ধান্তে এসেছি যে শেয়ারকৃত পোস্টগুলোর দাবি মিথ্যা।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.