ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতীয়দের ধরে ধরে জবাই করছে সেনারা- এমন ক্যাপশনযুক্ত একটি ভিডিও ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ থেকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওর থাম্বনেইলে জানানো হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধে ৩০ হাজার ভারতীয়কে ধরে ধরে জবাই করা হয়েছে। তবে ভিডিও মূল অংশে এই শিরোনামের সপক্ষে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। অন্য কোনো উৎস থেকেও কোনো প্রবাসী ভারতীয়কে ইউক্রেন সীমান্তে জবাই করে হত্যার খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদশ সংবাদ সংস্থা-বাসস এর এই খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে আনুমানিক ২০ হাজার ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন ।
কিন্তু ভাইরাল এই ভিডিওর থাম্বনেইলে দাবি করা হচ্ছে-৩০ হাজার ভারতীয় নিহত; যে সংখ্যাটা ইউক্রেনে থাকা মোট ভারতীয়দের সংখ্যার চেয়েও বেশি হয়ে যায়।
যুদ্ধ শুরুর আগেই গত ২০শে ফেব্রুয়ারি ভারতীয় দূতাবাস থেকে ভারতীয় নাগরিকদের ইউক্রেন ত্যাগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। অনেকেই সে সময়ে বিমান যোগে ইউক্রেন থেকে অন্যান্য দেশে পাড়ি জমান। তবে ২৪শে ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করলে আকাশপথ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ভারতীয়রা সড়কপথে প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশের সীমান্ত অতিক্রম করে ইউক্রেন ত্যাগ করা শুরু করেন।
গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি পোল্যান্ড সীমান্তে ইউক্রেন ত্যাগে ইচ্ছুক হাজার হাজার জনতার ভীড়ে ভারতীয়দের লাঠিপেটার অভিযোগ এসেছে ইউক্রেনের নিরাপত্তারক্ষীদের বিরূদ্ধে । তবে এ সময়ে কোন ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
১লা মার্চ ভিন্ন একটি ঘটনায় খারকিভ শহরে নবীন শেখরপ্পা জ্ঞানগৌদার নামক এক ছাত্র রুশ হামলায় নিহত হয়েছে। এই একটি ঘটনা বাদে অন্য কোনো ভারতীয়’র মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
আলোচ্য ভিডিওর ক্যাপশনে ভারতীয়দের জবাই করে হত্যার কথা বলা হলেও, ১৩ মিনিট ১২ সেকেন্ড এর খবরের বিস্তারিত অংশে এমন কোনো তথ্য জানানো হয়নি। ভিডিওটি একটি টিভি চ্যানেলের খবরের মত সাজানো হয়েছে। একাধিক আন্তর্জাতিক খবরের মধ্যে ভারতীয় নাগরিকদের ইউক্রেন সীমান্তে দূরবস্থা সম্পর্কিত খবরও ছিল। ভিডিওর ১০ মিনিট ৩০ সেকেন্ড থেকে এ সংক্রান্ত তথ্যটি জানানো হয়। খবরে জানানো হয়, পোল্যান্ড সীমান্তে ইউক্রেনের নাগরিকদের সহজেই সীমান্ত পেরুতে দেওয়া হলেও বেছে বেছে ভারতীয় নাগরিকদের সীমান্ত পার হতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে । ভারতীয়রা সীমান্ত পেরোতে না পেরে তীব্র শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। ইউক্রেনের পুলিশ এবং সেনাবাহিনী একজোট হয়ে ভারতীয়দের সীমান্ত থেকে ঠেলে ইউক্রেনের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।লাঠিচার্জ, এমনকি আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য ফাকা গুলিও ছোড়া হচ্ছে।
জবাই করার কোনো প্রসঙ্গ এই খবরে আলোচিত হয়নি।
এছাড়া ভিডিওতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ২ মার্চ দাবি করা হলেও , এই রিপোর্ট আপলোড করার সময় ২রা মার্চ শেষ হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত চলতি সংঘাতকে কেউ ‘বিশ্বযুদ্ধ’ দাবি করেনি।
সার্বিক বিবেচনায় ভুল ক্যাপশনযুক্ত এই ভিডিওগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?