সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, বিশ্বের যে কোন দেশের নাগরিক আয়ারল্যান্ডের দ্বীপগুলোতে গিয়ে বসবাসের ইচ্ছা প্রকাশ করলে এবং শর্তগুলো পূরণ করলে প্রায় এক কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনা পাবে। আয়ারল্যান্ড সরকার তাদের পলিসিতে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেনি কোন কোন দেশের নাগরিকরা এই প্রণোদনাটির জন্য উপযুক্ত বলে গণ্য হবে। তবে, হিন্দুস্তান টাইমস ভারতে অবস্থিত আইরিশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে যে, “আওয়ার লিভিং আইল্যান্ডস” পলিসির অধীনে প্রণোদনার জন্য আবেদন কেবল আয়ারল্যান্ডের অধিবাসীরাই করতে পারবেন এবং আয়ারল্যান্ডের বাইরে বসবাস করেন এমন কারও জন্য এই প্রণোদনার আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির দাবিকে “আংশিক মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
জনশক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত পলিসির আওতায় বিশ্বের যে কোন দেশের নাগরিক আয়ারল্যান্ডের দ্বীপগুলোতে বসবাস করতে চাইলে প্রায় এক কোটি টাকা প্রণোদনা পাবেন – এরকম একটি দাবির যথাযথতা যাচাই করতে আমরা প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে গুগল সার্চ করি এবং আয়ারল্যান্ড সরকারের গৃহীত দশ বছর মেয়াদী (২০২৩ – ২০৩৩) “আওয়ার লিভিং আইল্যান্ডস” পলিসি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। মূলত আয়ারল্যান্ডের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোতে ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যা ঠেকাতে, দ্বীপের বাসিন্দাদের জীবনমানের উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে উক্ত পলিসিটি গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া, দর্শনার্থীরা যাতে দ্বীপগুলোর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং প্রাকৃতিক প্রাচুর্য উপভোগ করতে পারে সেটাও উক্ত পলিসির একটি লক্ষ্য। তাছাড়া, দ্বীপের অধিবাসীদের টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য পাঁচটি কৌশলগত লক্ষ্য (Strategic Objectives) অর্জন করাও উক্ত পলিসির অন্তর্গত। এই পাঁচটি কৌশলগত উদ্দেশ্যসমূহ হচ্ছে: (১) দ্বীপগুলোর জনসংখ্যাকে পুনরুজ্জীবিত করা, (২) দ্বীপগুলোর অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করে তোলা, (৩) স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বৃদ্ধি করা, (৪) দ্বীপগুলোর অধিবাসীদের ক্ষমতায়ন, এবং (৫) টেকসই ভবিষ্যৎ তৈরি করা। “আওয়ার লিভিং আইল্যান্ডস” পলিসিটি বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
ইউরোনিউজ.ট্রাভেল এর একটি নিবন্ধ থেকে জানা গেছে যে, আওয়ার লিভিং আইল্যান্ডস পলিসির একটি অংশ হিসেবে আয়ারল্যান্ড সরকার সমুদ্রতীর থেকে দূরবর্তী দ্বীপগুলোতে নতুন অধিবাসীদের আশি হাজার ইউরো বা প্রায় এক কোটি টাকা প্রদান করবে। তবে, এই টাকাটা পাওয়ার জন্য বেশকিছু শর্তও আরোপ করে দেওয়া হয়েছে। সম্ভাব্য অধিবাসী বা যারা দ্বীপগুলোর নতুন বাসিন্দা হতে চান তাদেরকে ঐ দ্বীপগুলোর মধ্যে যে কোন একটি দ্বীপে গিয়ে এমন একটি বাড়ি বা স্থাপনা কিনতে হবে যা ১৯৯৩ সালের পূর্বে তৈরি করা হয়েছে এবং ন্যূনতম দুই বছর যাবত খালি পড়ে আছে। তবে, ঐ আশি হাজার ইউরো পাওয়ার পর তা কিভাবে এবং কোন কোন খাতে ব্যয় করতে হবে সেটাও বলে দেওয়া হয়েছে। দ্বীপে ক্রয়কৃত বাড়ি বা স্থাপনার অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং পুনরায় সাজানোর জন্য প্রাপ্ত টাকাটা খরচ করা যাবে।
Image: Excerpt from the Euronews.travel’s article
যদিও সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটিতে ইউরোনিউজ.ট্রাভেল এর প্রকাশিত নিবন্ধটির শিরোনামের একটি স্ক্রিনশট ব্যবহার করা হয়েছে এবং দাবি করা হয়েছে, বিশ্বের যে কোন দেশের নাগরিক উপরিউক্ত শর্তগুলো পূরণ করলে পেয়ে যাবেন আয়ারল্যান্ডের দ্বীপে বসবাস করার সুযোগ এবং প্রায় এক কোটি টাকা। তবে, ইউরোনিউজ.ট্রাভেল এর ঐ নিবন্ধটিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়নি কারা দ্বীপে বসবাস এবং আশি হাজার ইউরোর জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তাছাড়া, “আওয়ার লিভিং আইল্যান্ডস” পলিসিতেও কারা উক্ত সুবিধাগুলো পাবেন তা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
তবে, আয়ারল্যান্ড সরকারের নতুন পলিসিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকে ভিসা সম্পর্কিত অনেক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে – এই মর্মে ভারতে অবস্থিত আয়ারল্যান্ড দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে জানান। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রকাশিত “Ireland’s Our Living Islands policy offers citizens to move to offshore communities” শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে ঐ দূতাবাস কর্মকর্তা বলেন, “আওয়ার লিভিং আইল্যান্ডস পলিসির অধীনে নির্দিষ্ট অনুদানের জন্য যথাযথ অভিবাসন অনুমতিপত্র নিয়ে কেবল আয়ারল্যান্ডের অধিবাসীরাই আবেদন করতে পারবে। তাছাড়া, যারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইউরোপিয়ান ইকোনোমিক এরিয়া এর অধীনস্থ কোন দেশের নাগরিক নন এবং আয়ারল্যান্ডের বাইরে বসবাস করছেন তাদের জন্য উক্ত পলিসি উন্মুক্ত নয়।” তিনি আরও বলেন, “দয়া করে প্রতারক থেকে সাবধান থাকবেন যারা কিনা নতুন পলিসিটির একটি ভুল ধারণা তৈরি করে আইরিশ ‘স্থানান্তর ভিসা (Relocation Visas)’ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেবে। ভিসা সংক্রান্ত তথ্যের জন্য সবসময় আয়ারল্যান্ড সরকারের অফিসিয়াল উৎসসমূহ, বিশেষ করে আইরিশ ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটের হোমপেইজটি চেক করবেন।”
Image: Excerpt from the Hindustan Times news article
অতএব, আয়ারল্যান্ডের দ্বীপে বসবাসের জন্য যে কোন দেশের নাগরিক আবেদন করতে পারবে এবং অনুদান বা প্রণোদনা হিসেবে আশি হাজার ইউরো পাবে – এই দাবিটি সঠিক নয়।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির দাবিকে “আংশিক মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।