যা দাবি করা হচ্ছে : ড. ইউনূসের পদত্যাগ চাইলেন বিএনপি নেতা ইশরাক
যা পাওয়া যাচ্ছে : বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন গত ১৫ই আগস্ট এক বক্তব্যে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেনের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিলেন। এই বক্তব্যটাই কাটছাঁট করে ড. ইউনূসের পদত্যাগের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওতে জনাব ইশরাক হোসেনকে বলতে শোনা যায়, এত সংগ্রাম, এত জীবনদান, এত আন্দোলনের পরে আমরা কি আওয়ামী লীগ যে অবস্থায় বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণের দিকে নিয়ে গিয়েছিল, তাঁর চেয়েও বড় স্বৈরশাসককে কি আমরা এনে ক্ষমতায় বসিয়েছি? অতএব এটাও জনগণ মানেনা। আমার বিশ্বাস যে ছাত্র,জনতা বাংলাদেশের জনগণ উনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। উনার উচিত হবে দ্রুততম সময়ে পদত্যাগ করে চলে যাওয়া। কারণ উনাকে কেউ ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসায় নাই। উনাকে একটা অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেখা গেল, বাংলা নিউজ নামক ফেসবুক পেজ থেকে ১৪ই আগস্ট সকাল ৬টায় প্রকাশিত একটি ভিডিওতে জনাব ইশরাককে উক্ত কথাগুলো বলতে শোনা যায়। এই ভিডিওর ক্যাপশন ছিল , ১৫ ই আগস্টে কঠোর হাতে দমন হবে! ইশরাক হোসেন ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে হুঁশিয়ারি’ bnp ishraque hossain
৫ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে ৩ মিনিট ৫ তম সেকেন্ডে একজন সাংবাদিক ইশরাক হোসেনকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে তাঁর মন্তব্য জানতে চান । জনাব হোসেন তখন বলেন, আমাদের একটা দলীয় বক্তব্য এখানে অবশ্যই আছে। সেই দলীয় বক্তব্যের বাইরে গিয়েও আমি একটা ব্যক্তিগত বক্তব্য দিতে চাই। আমার ব্যক্তিগত বক্তব্য হচ্ছে এই যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়, এই দুইটা মন্ত্রণালয়ের এখন প্রথম দায়িত্ব এই যে গণহত্যা হয়েছে, যত গুম খুন নির্যাতন হত্যাকাণ্ড হয়েছে সেগুলোর তদন্ত শুরু করা, মামলার ব্যবস্থা করা, এবং তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। তো,এই মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে যারা থাকবেন তাদেরকে আগে সেটি প্রাধান্য দিতে হবে । আমরা উনার বক্তব্যে হতাশ হয়েছি ।উনি এখন আওয়ামী লীগকে দ্রুততম সময়ে পুনর্গঠন মানে রিহ্যাবিলিটেশন এর কথা বলেছেন । এটা বাংলাদেশের জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা আমরা মানি না তাঁর এই বক্তব্য। দ্বিতীয়ত, উনি বলেছেন যে রাজনীতি করা আগামী দিনে কষ্টকর হয়ে যাবে। এই বক্তব্যের সাথেও আমি অত্যন্ত জোরালোভাবে দ্বিমত পোষণ করছি। উনার যদি বক্তব্য থাকে যে অপরাজনীতি,চাঁদাবাজির রাজনীতি,সন্ত্রাসের রাজনীতি, তাহলে সেটা বলা উচিত ছিল যে আগামী দিনে সেইসকল অপরাধমূলক কর্মকান্ড করা কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু তিনি যে ভাষায় বলেছেন তাতে মনে হচ্ছে, রাজনীতিবিদদের উপর উনার ক্ষোভ রয়েছে, উনি রাজনীতিবিদদের শায়েস্তা করতে চাচ্ছেন। তাহলে যে এত সংগ্রাম ,এত জীবনদান ,এত আন্দোলনের পরে আমরা কি আওয়ামী লীগ যে অবস্থায় বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরনের দিকে নিয়ে গিয়েছিল, তাঁর চেয়েও বড় স্বৈরশাসককে কি আমরা এনে ক্ষমতায় বসিয়েছি?অতএব এটাও জনগণ মানেনা ।আমার বিশ্বাস যে ছাত্র,জনতা, বাংলাদেশের জনগণ উনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। উনার উচিত হবে দ্রুততম সময়ে পদত্যাগ করে চলে যাওয়া। কারণউনাকে কেউ ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসায় নাই। উনাকে একটা অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে উনাকে খুব পছন্দ করতাম। উনার টকশো এবং বিভিন্ন বিশ্লেষণমূলক কথাবার্তা আমি শুনতাম, ভাল লাগত। কিন্তু ইদানিং উনার বিভিন্ন বক্তব্যের কারণে আমরা মর্মাহত হয়েছি এবং আমরা জোরালো দাবি জানাচ্ছি উনি অতি দ্রুত পদত্যাগ করে এখানে অন্য উপযুক্ত কাউকে বসানো হোক যারা প্রথমেই এই গনহত্যা, আওয়ামী লীগের হত্যার বিচারের দায়িত্বটা আগে পালন করুক। আমরা এইরকম একজনকে চাচ্ছি । আমরা এমন কাউকে চাচ্ছি না যিনি তলে তলে আবারো আওয়ামী লীগ, সেই স্বৈরশাসক প্রতিষ্ঠা করার জন্য—–_(স্লোগানের কারণে বাক্যের শেষ অংশ অস্পষ্ট)
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, ইশরাক হোসেনের বক্তব্যের একটা অংশ কেটে নিয়ে অপ্রাসংগিকভাবে ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে ড. ইউনূসের পদত্যাগের দাবি করা হচ্ছে, যদিও জনাব হোসেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছিলেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১৩ই আগস্ট তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন যে আবার একটা কাউন্টার রেভল্যুশন (প্রতিবিপ্লব) করে আসবেন, এর জন্য হাজার হাজার লোকের রক্তের প্রয়োজন। যদি আপনারা সেই দায়িত্ব নিতে চান, তাহলে আমার কিছু করার নেই। গন্ডগোল পাকিয়ে লাভ হবে না। লোকজন খেপে উঠবে। ব্যক্তিগত স্বার্থে এত বড় একটা দলকে নষ্ট করবেন না। এটা (আওয়ামী লীগ) আমাদের গর্ব। এটা নষ্ট করার কোনো অধিকার নেই।’…‘আমি বরং মনে করি, আপনারা পার্টি অর্গানাইজ করুন। আপনারা গোছান নতুন মুখ, নতুন নেতৃত্বে ও নতুন অঙ্গীকার নিয়ে।’
তাঁর এই বক্তব্যের পরে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ১৬ই আগস্ট তারিখে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দেওয়া একটি প্রজ্ঞাপনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদ থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে সরিয়ে তাকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা করা হয়েছিল। সর্বশেষ ২৭শে আগস্ট তারিখে আরেক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ও দেওয়া হয়েছে।
ড. ইউনূসের পদত্যাগ চাইলেন ইশরাক হোসেন- এমন দাবি ছড়িয়ে পড়ার পরে গত ১৭ই আগস্ট ইশরাক হোসেন এর ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্ট থেকে এক পোস্টে বলা হয়,
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়ে করা মন্তব্য এর ভিডিওতে বিকৃত টাইটেল যোগ করে আওয়ামী পরাজিত শক্তি ডক্টর ইউনূস ও আমাকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এদের ব্যপারে সজাগ থাকুন। আমি বহু বছর আগে থেকেই ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের একজন বড় ভক্ত।
এতে বলা হয়, গত ১৩ আগস্ট রাজধানীর সবুজবাগ বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের খোজখবর নেই এবং তাদের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করি । সেখানে থাকা সাংবাদিকরা সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন এর একটি বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করলে তাঁর প্রতিউত্তরে আমি সে সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়ে মন্তব্য করি। সেদিনের সেই বক্তব্যকে বিকৃত করে এবং বিকৃত টাইটেল যোগ করে আওয়ামী পরাজিত শক্তি ড মুহম্মদ ইউনূস ও আমাকে জড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। প্রফেসর ড ইউনূস সম্পর্কে আমার অবস্থান স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমি বহুবছর আগে থেকেই প্রফেসর ড ইউনূসের একজন বড় ভক্ত।
ইশরাক হোসেন এর এই প্রতিবাদের সংবাদটি স্থানীয় একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। এমন কয়েকটি খবর দেখতে পাবেন এখানে,এখানে,এখানে, এখানে ,এখানে।
সিদ্ধান্ত
সার্বিক বিবেচনায় ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ড. ইউনূসের পদত্যাগ চাইলেন বিএনপি নেতা ইশরাক ক্যাপশনযুক্ত পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।