ফিলিস্তিনি নারীর ওপর কুকুর লেলিয়ে দেয়ার ঘটনা সত্য, কিন্তু ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

29
ফিলিস্তিনি নারীর ওপর কুকুর লেলিয়ে দেয়ার ঘটনা সত্য, কিন্তু ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি ফিলিস্তিনি নারীর ওপর কুকুর লেলিয়ে দেয়ার ঘটনা সত্য, কিন্তু ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

Published on: [post_published]

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি কুকুর একজন বৃদ্ধার উপরে আক্রমণ করছে। মূল ঘটনা হলো, ইসরায়েলি সৈন্য ফিলিস্তিনি এক নারীকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর লেলিয়ে দেয়। কুকুরের আক্রমণের দৃশ্য ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। যদিও ভিডিওটি খুব বেশি পরিষ্কার নয়। তবে তা দেখে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে সেখানে কুকুরের আক্রমণ ঘটেছে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী বৃদ্ধা একথা গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে জানিয়েছেন। তবে ভাইরাল যে ছবিতে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে তা ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। ঘটনার ভয়াবহতা তুলে ধরতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি ছবিটি গণমাধ্যমগুলো তাদের প্রতিবেদনে ব্যবহার করেছে।

ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট দেখতে পাবেন এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

ভাইরাল ছবিটির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হয়। সেখান থেকে এ বিষয়ে মরক্কো নিউজ নামের সাইট থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। “Israeli Police Dog Attack on Elderly Palestinian Woman Sparks Outrage” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির বিস্তারিত অংশ থেকে জানা যায়, ইসরায়েলি সৈন্য ফিলিস্তিনি এক নারীকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে সাময়িক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর লেলিয়ে দেয়। কুকুরের আক্রমণে উক্ত নারী হাত এবং কাঁধে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। উল্লেখ্য, মরক্কো নিউজ উক্ত সংবাদের সাথে একটি ফিচার ইমেজ ব্যবহার করেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে ক্ষিপ্ত কুকুর তীব্র আক্রমণ করেছে একজন নারীকে। তবে ফিচার ইমেজটির  ক্যাপশনে উল্লেখ করা আছে “Illustration depicting the attack” অর্থাৎ ফিলিস্তিনি নারীর উপরে ইসরায়েলি সৈন্য যে অমানবিক আচরণ করেছে প্রতীকী ছবির মাধ্যমে গণমাধ্যমটি তা তুলে ধরেছে।

মরক্কো নিউজ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে আলজাজিরার বরাতে। জানা যায়, ফিলিস্তিনি বৃদ্ধার উপরে ইসরায়েলি সৈন্যের কুকুর লেলিয়ে দেবার ঘটনা নিয়ে আলজাজিরা ৫৬ সেকেন্ডের ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেখানে উক্ত বৃদ্ধার সাক্ষাৎকার রয়েছে। ভিডিও প্রতিবেদনটি শুরুতে দেখা যাচ্ছে সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত  একটি কুকুর কোনো একজন মানুষকে আক্রমণ করতে ছুটে যাচ্ছে। প্রাণভয়ে আর্তনাদ করছেন একজন নারী। আলজাজিরার তথ্যমতে কুকুরের গায়ে যেই বডিক্যামেরা লাগানো ছিল তাতেই ফুটেজটি ধারণ হয়েছে। উল্লেখ, কুকুরের আক্রমণ করতে ছুটে যাওয়া এবং নারীর আর্তনাদ পরিষ্কার কোনো ভিডিও নয়। বরং তা বেশ অস্পষ্ট ফুটেজ।

ভিডিও প্রতিবেদনের ১৯ সেকেন্ড অংশে উক্ত নারীর সাক্ষাৎকার রয়েছে। দাওলাত আবদুল্লাহ আল তানানি (Dawlat Al Tanani) নামের নারী নিজেকে জাবালিয়া রিফিউজি ক্যাম্পের বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যের অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, “ইসরায়েলি সৈন্যরা আমাকে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলেন। তবে আমি তাতে রাজি হইনি এবং প্রতিবাদ করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইসরায়েলি সৈন্যরা আমাকে আক্রমণ করতে তাদের সাথে থাকা পোষা কুকুর লেলিয়ে দেয়। প্রাণভয়ে এক রুম থেকে অন্য রুমে আমি ছুটে যাই। কুকুরটিও আমার পিছনে ছুটে যায় এবং  আক্রমণ করে। আমার হাতে কুকুর কামড় দিয়েছে। কুকুরের আক্রমণে আমার কাধ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আশেপাশে কোনো হাসপাতাল নেই। এখনো পর্যন্ত আমি  চিকিৎসা করাতে পারিনি”।

বলা বাহুল্য, উক্ত ছবিটি ইসলাম নুর নামের একজন ডিজাইনার তৈরি করেছেন। তার ইন্সট্রাগ্রাম একাউন্ট in.visualart এ ছবিটি পোস্ট করেছিলেন। যা তৈরি করতে তিনি ফটোশপ এবং এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নিজ একাউন্টে পোস্ট করেছেন।

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, এই ঘটনার মূল যে ফুটেজ তা অস্পষ্ট। সুতরাং সেখান থেকে কোনো স্থিরচিত্র নেয়া হয়নি। মরক্কো নিউজ নামের গণমাধ্যমটি ঘটনার ভয়াবহতা তুলে ধরতে ইসলাম নুরের তৈরি তৈরি ছবি প্রতিবেদনে ব্যবহার করেছে।

সুতরাং কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি ছবিকে বাংলাদেশে বাস্তবিক ছবি ভাবা হচ্ছে। যে কারণে ছবিগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.