ঠাকুরগাঁওয়ে মারধরের শিকার জাহাঙ্গীর ধর্ষক পক্ষের আইনজীবী নন 

27
ঠাকুরগাঁওয়ে মারধরের শিকার জাহাঙ্গীর ধর্ষক পক্ষের আইনজীবী নন 
ঠাকুরগাঁওয়ে মারধরের শিকার জাহাঙ্গীর ধর্ষক পক্ষের আইনজীবী নন 

সম্প্রতি ফেসবুকে একটি মারধরের ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে মারধরের শিকার ব্যক্তি ধর্ষকের পক্ষের আইনজীবী। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ঐ ব্যক্তি আইনজীবী নন, ঠাকুরগাঁওয়ের যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর। 

ভুল ক্যাপশনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওসহ পোস্টগুলোর কয়েকটি এখানে, এখানে, এখানে। 

ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান 

ফেসবুকে শেয়ার হওয়া ভিডিওটির বিভিন্ন কি-ফ্রেম এর সাহায্যে রিভার্স ইমেজ সার্চে ইত্তেফাকের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের সঙ্গে ব্যবহৃত ছবিটির সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওরটির সাদৃশ্য রয়েছে। এই সূত্রেই জানা যায় যে, ঘটনাটি ঠাকুরগাঁওয়ের। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,  ৯ মার্চ দুপুরে ঠাকুরগাঁও আদালত চত্বরে ধর্ষণের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছিল। এ সময় তারা জাহাঙ্গীরকে দেখতে পান এবং মুহূর্তেই তাকে ঘিরে ফেলেন। পরে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তাকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চে ঠাকুরগাঁওয়ের শিক্ষক মোজাম্মেল হক কর্তৃক স্কুল ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনাটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের তথ্য পাওয়া যায়। 

মারধরের শিকার জাহাঙ্গীরের উপর শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের কারণ অনুসন্ধানে কালের কণ্ঠের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বরাতে  উল্লেখ করা হয়েছে যে, “গত বছরের ৪ আগস্ট বিক্ষোভ করার সময় রামদা হাতে নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান জাহাঙ্গীর। সে সময় হামলায় গুরুতর আহত হন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী”। গত ৯ মার্চ শহরের চৌরাস্তায় ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সমাবেশে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর। এই প্রতিবেদনেই ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহীদুল ইসলামের বরাতে জানানো হয়, জাহাঙ্গীরকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কি না তা দেখা হচ্ছে। 

এই সূত্র ধরে ফ্যাক্টওয়াচের পক্ষ থেকে ওসি শহীদুল ইসলামকে ফোন করা হয়। তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর আইনিজীবী নন। 

আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ের আইনজীবীদের নামের তালিকার অনুসন্ধান করা হয়। এই তালিকায় জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন আইনজীবীর নাম ও ফোন নম্বর পাওয়া যায়। প্রাপ্ত নম্বরে ফোন করা হলে এই জাহাঙ্গীর আলম নিশ্চিত করেন যে, তিনি মারধরের শিকার হওয়া সেই লোক নন। 

এরপর বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধান চালিয়ে ঠাকুরগাঁও আইনজীবী সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির খোঁজ করা হয়। সম্প্রতি নির্বাচিত ঠাকুরগাঁও আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদিনের নাম পাওয়া যায়। পূর্বের আইনজীবীদের তালিকা থেকে ফোন নম্বর নিয়ে তাকে ফোন করা হলে তিনি ফ্যাক্টওয়াচকে বলেন, শিক্ষার্থীদের হাতে মারধরের শিকার হওয়া জাহাঙ্গীর এবং আইনজীবী জাহাঙ্গীর এক ব্যক্তি নন। 

ফলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে এটা বলা সঙ্গত যে, শিক্ষার্থীদের হাতে মারধরের শিকার হওয়া ব্যক্তি ‘ধর্ষক পক্ষের আইনজীবী’ নন। এ ধরনের পোস্টগুলোকে তাই মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হলো।   

Claim:
সম্প্রতি ফেসবুকে একটি মারধরের ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে মারধরের শিকার ব্যক্তি ধর্ষকের পক্ষের আইনজীবী।

Claimed By:
Facebook Users

Rating:
False

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে

এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে
ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh