মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে চাঁদপুরের ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী জহিরুল ইসলাম এর একটি পুরনো ছবি ভাইরাল হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, বিরল রোগে আক্রান্ত জহিরুল ইসলামের সাথে গত বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত হয়েছে । তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের ২০শে মার্চ বুধবার রাতে এই সাক্ষাতের ঘটনা ঘটেছিল এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তখন জহিরুল ইসলামের সুচিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
গুজবের উৎস
৮ই জানুয়ারি সকাল থেকে এই ছবি এবং ক্যাপশন ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপে দেখা যায়। এমন কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে ।
Supporters of Bangladesh Awami League গ্রুপে জনৈক Md Shahinur Rahman এই ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ঘড়ির কাটায় তখন রাত ১১টার বেশি। গণভবনে তখনও ব্যস্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ছবিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশে যিনি বসে আছে দেখছেন তিনি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম। ২৭ বছর বয়সী জহিরুল এক বিরল রোগে আক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গত বুধবার রাত ১১টার পর দেখা করার সুযোগ হয় জহিরুলের।এসময় জহিরুল তার রোগের বর্ণনা ও চিকিৎসার জন্য পর পর ৬ বার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রত্যাখানের বিষয়টি তুলে ধরেন।প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২০ মিনিট কথা হয়। সব কথা বলার পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি ছবি তোলার প্রস্তাব দিয়ে উঠার চেষ্টা করলে,প্রধানমন্ত্রীই উঠে এসে তার চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,তোমার উঠার দরকার নেই। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জহিরুলের মাথায় হাত দিয়ে বলেন, “তোমার পাশে আমি আছি,ভয়ের কোনো কারণ নেই। তোমার সার্বিক দায়িত্ব আমার।”
ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান
একটি শীর্ষস্থানীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিং সফটওয়ারের সাহায্যে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের ২৫শে মার্চ তারিখে এই ছবিটি প্রথম ভাইরাল হয়েছিল। সে সময়ে এই পোস্ট এর শিরোনাম ছিল – ❝ তোমার ওঠার দরকার নেই… ❞
‘ফ্যাসিও স্ক্যাপন্টো হিউম্যারাল মাসকুলার ডিসট্রোফি’ (Facioscapulohumeral muscular dystrophy) নামের বিরল রোগে আক্রান্ত ছাত্রলীগ নেতা জহিরুল ইসলামের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বুধবার (২০শে মার্চ ২০১৯) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি তাকে অভয় দিয়ে বলেন, ‘তোমার পাশে আমি আছি, ভয়ের কোনো কারণ নেই। তোমার সার্বিক দায়িত্ব আমার।’এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের জহিরুল ইসলাম বলেন, অনেক মানুষের ভিড়ে প্রধানমন্ত্রী আমার সব কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন। আমার রোগের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলেছি। প্রায় ২০ মিনিট তিনি আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন।
জহিরুল বলেন, গণভবনে প্রবেশের কিছুক্ষণ পরেই ডাক পরে আমার। এরপর ঠিক প্রধানমন্ত্রীর সামনে আমাকে একটি চেয়ারে বসানো হয়। সেখানে সমস্ত ডকুমেন্ট দেখে আমার কাছে রোগের বিষয়টি শুনতে চান তিনি। সব কথা বলার পর আপার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে একটি ছবি তোলার প্রস্তাব দিয়ে আমি উঠার চেষ্টা করলে, প্রধানমন্ত্রীই উঠে এসে আমার চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, তোমার উঠার দরকার নেই। এরপর তিনি আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, তোমার পাশে আমি আছি ভয়ের কোনো কারণ নেই। তোমার সার্বিক দায়িত্ব আমার। এত বড় একজন মানুষকে পাশে পেয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর দেখা পেয়েছি, আমার বিশ্বাস উনার সহযোগিতায় সুচিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে উঠবো।
Facioscapulohumeral muscular dystrophy রোগ সম্পর্কে কি জানা যাচ্ছে ?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগী ২ পায়ে হাটতে পারে। প্রায় ২০% ক্ষেত্রে রোগীকে হুইলচেয়ারের সাহায্য নিতে হয়। অন্য স্বাভাবিক ছেলে-মেয়েদের মতই FSHD রোগীদের আয়ু একই রকম থাকে, তবে দীর্ঘ পথ হাঁটা, সিড়ি দিয়ে ওথানামা এবং অন্যান্য কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়। যেহেতু জেনেটিক রোগ, তাই একে চিরতরে নির্মূল করার মত কোনো চিকিৎসা নেই। তবে উপসর্গগুলো দূর করার জন্য ডাক্তাররা বিভিন্ন চিকিৎসা দেন। ফিজিওথেরাপি , হাঁটাচলার সুবিধার জন্য লাঠি বা হুইলচেয়ার , স্পষ্ট কথা বলার জন্য স্পিচ থেরাপি, পেশীর ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ, হার্ট বা চোখে জটিলতা সৃষ্টি হলে সেটার জন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। আমেরিকায় গড়ে ২০ হাজার জনের মধ্যে ১ জন এই রোগে আক্রান্ত।
জাগোনিউজ এর এই ভিডিওতেও দেখা যাচ্ছে, জহিরুল ইসলাম এর পা বেশ দুর্বল। তার নিজের উঠে দাঁড়াতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে , এবং অন্যের সাহায্য নিয়ে দাড়াচ্ছেন।
২০১৯ সালের ২০শে মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের সময় জহিরুল ইসলাম কষ্ট করে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে উঠে দাঁড়াতে নিষেধ করেন এবং নিজেই তার পাশে চলে এসে ছবি তুলতে সহযোগিতা করেন।
ফ্যাক্টওয়াচ টিম জহিরুল ইসলাম এর ফেসবুক একাউন্ট খুজে পেয়েছে । আনভেরিফাইড এই একাউন্ট থেকে সাম্প্রতিক সময়ে ঘরের বাইরে তার ঘোরাঘুরির কিছু পাবলিক ছবি দেখা যাচ্ছে। এসব ছবি দেখে অনুমান করা যেতে পারে, তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ফ্যাক্টওয়াচ টিম জহিরুল এর সাথে যোগাযোগ করে তার শারীরিক অবস্থার প্রকৃত চিত্র জানার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে।
২০২০ সালেও একই গুজব ভাইরাল
২০২০ সালের জুলাই মাসেও এই ছবি এবং খবর ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল । যেমন দেখুন– এখানে , এখানে , এখানে , এখানে।
সে সময় এসব পোস্ট ভাইরাল হলে এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি জহিরুল ইসলাম হিমেল নামক আনভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্ট থেকে ২রা জুলাই তারিখে সবাইকে ভুল তথ্য না ছড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছিলেন।তিনি লিখেছিলেন, আমার এই ছবিটি এবং মাননীয় নেত্রীর সাথে আমার সাক্ষাৎ টি ছিলো গতবছরের।আরেকটা বিষয় আমার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি মাননীয় নেত্রীর নির্দেশে প্রসেসিং এর সর্বোচ্চ পর্যায় রয়েছে।দয়া করে কেউ ভুল তথ্য দিবেন/ছড়াবেন না।সবাই ভালো থাকুন, সুস্হ থাকুন, নিরাপদে থাকুন।আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।
সম্প্রতি তার পুরনো ছবি এবং ঘটনা আবারো ভাইরাল হওয়ার পরে তার কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো জানা যায়নি।
২০১৯ সালের পুরনো ছবি এবং ঘটনা ৩ বছর পরে এসে আবার ভাইরাল হওয়ার কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টকে বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?