“ব্রেকিং নিউজ, গিনেস বুক ওয়ার্ল্ড রেকর্ড হয়ে গেছে চট্টগ্রামের পবিত্র জশনে জুলুস ঈদে এ মিলাদুন্নবী” — এমন শিরোনামে একটি তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এই তথ্যটির কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। ফ্যাক্ট-ওয়াচের অনুসন্ধানে গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে এমন কোনো ক্যাটাগরির অবস্থান খুঁজে পাওয়া যায়নি অথবা প্রাসঙ্গিক এমন কোনো ক্যাটাগরিতে জশনে জুলুশের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো মূলধারার সংবাদমাধ্যমে চট্টগ্রামের পবিত্র জশনে জুলুসকে গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ কারণে ফ্যাক্ট-ওয়াচ ভাইরাল হওয়া তথ্যটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের ওয়েবসাইট অনুসন্ধান করে বিশ্বের সবথেকে বড় জশনে জুলুস সম্পর্কিত কোনো বিশ্ব রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি, এখানে বিশ্বের সব থেকে বড় জশনে জুলুশ নামক কোনো ক্যাটাগরির অবস্থান খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রাসঙ্গিক এমন কোনো ক্যাটাগরিতেও জশনে জুলুশের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তিতে, বিভিন্ন কী-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা যায়, আনজুমান-এ রাহমদিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম নগরীতে এ জশনে জুলুস অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তাদের মতে, জশনে জুলুস বলতে বোঝায় আনন্দ মিছিল বা আনন্দ শোভাযাত্রা। মহানবী(সা.)- এর জন্মদিন তথা ঈদে মিলাদুন্নবিকে আনন্দ মিছিল বা শোভাযাত্রার মাধ্যমে উদযাপন করাই জশনে জুলুস নামে পরিচিত। ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর ১২ রবিউল আউয়াল চট্টগ্রামের পবিত্র জশনে জুলুস ঈদে এ মিলাদুন্নবী পালন হয়ে আসছে। গত ৯ অক্টোবর ঈদে মিলাদুন্নবি উপলক্ষে একটি জাঁকজমকপূর্ণ র্যালি “জশনে জুলুস” এর সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করা হয়েছে। এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ। এই র্যালীতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন অগণিত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। চট্টগ্রামের পবিত্র জশনে জুলুস ঈদে এ মিলাদুন্নবী ৫০ বছর যাবত পালন হয়ে আসছে।
কিন্তু এটি গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় র্যালি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্যের উল্লেখ আনজুমান-এ রাহমদিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি।
গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে বিশ্বের সবথেকে বড় মিছিল বা শোভাযাত্রা সংক্রান্ত কোনো রেকর্ড আছে কি না এ সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিশ্বের সবথেকে বড় নাগরিক অধিকারের দাবির র্যালি, এবং বিশ্বের সবথেকে বড় যুদ্ধবিরোধী র্যালি নামক দুইটি রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
মার্টিন লুথার কিং, জুনিয়রের নেতৃত্বে ২৮ আগস্ট ১৯৬৭ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনের সমাবেশটিতে ২৫০,০০০ এর থেকে অধিক আমেরিকান নাগরিক উপস্থিত হয়েছিলেন। উক্ত সমাবেশটি এখনো পর্যন্ত গিনেজ বুক রেকর্ডে বিশ্বের সবথেকে বড় নাগরিক অধিকারের দাবির র্যালি হিসেবে নথিভুক্ত হয়ে আছে। গিনেজ বুকের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত তথ্য দেখুন এখানে।
এবং, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০০৩ সালে ইতালির রোমে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিরোধী একটি সমাবেশ হয়েছিল, যেখানে তিন মিলিয়ন জনতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরাকে আক্রমণ করার হুমকির প্রতিবাদে উপস্থিত হয়েছিল। এটি গিনেজ বুকে বিশ্বের সবথেকে বড় যুদ্ধবিরোধী সমাবেশ হিসেবে নথিভুক্ত হয়ে আছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
তাছাড়া, উইকিপিডিয়ায় বিশ্বের সব থেকে বড় শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সমাবেশের তালিকায় বেশ কিছু দেশের সমাবেশের নাম নথিভুক্ত থাকলেও সেখানে চট্টগ্রামের জশনে জুলুসের নাম নথিভুক্ত হয়নি।
এছাড়া জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো মূলধারার সংবাদমাধ্যমে গণমাধ্যমে চট্টগ্রামের জশনে জুলুশ বিশ্ব রেকর্ড করেছে কি না এ সম্পর্কিত কোন খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থ্যাৎ, বিষয়টি নিশ্চিত যে, চট্টগ্রামের জশনে জুলুস গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পেয়েছে– দাবিটি সঠিক নয়। এর পক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গিনেস বুকে রেকর্ডের জন্য আবেদন করা হয়েছে?
অন্যদিকে, বেশকিছু সংবাদ মাধ্যমের এমন প্রতিবেদন পাওয়া যায় যেখানে বলা হচ্ছে,এই জুলুস বিশ্বের সবচেয়ে বড় জশনে জুলুস হিসেবে গিনেস বুকে রেকর্ড করার জন্য আবেদন করা হয়েছে।
নিচে মূলধারার সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন দেখে নেয়া যাক যেখানে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের ধর্মীয় র্যালিটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে গিনেস বুকে আবেদন করা হয়েছে। প্রতিবেদন গুলো দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
কিন্তু গিনেস বুকে আবেদন করা নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে বলে মনে করছে, বাংলাদেশের অন্য একটি তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার। এ নিয়ে তাদের প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) উপলক্ষে চট্টগ্রামের ৫০ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুস আয়োজিত হয়ে আসছে। তবে, এটি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় র্যালি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য গিনেস বুকের ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি মূলধারার সংবাদমাধ্যম গুলোতেও এমন কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি যেটা দাবি করে যে, চট্টগ্রামের জশনে জুলুশ বিশ্বের সবথেকে বড় ধর্মীয় র্যালি হিসেবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখিয়েছে।
সঙ্গত কারণে, তথ্য প্রমাণহীন এই দাবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?