যা দাবি করা হচ্ছেঃ সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে, জাতীয় পার্টি আসন্ন দ্বাদশ নিবার্চন বর্জন করেছে এবং হাইকোর্ট থেকে নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওতে আরো দাবি করা হয় যে, জাকের পার্টিও নির্বাচন বর্জন করছে।
ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্তঃ তিনটি দাবিই মিথ্যা। প্রথমত, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হকের বরাতে জানা যায় যে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট থেকে নির্বাচন বাতিলের কোনো ধরনের ঘোষণার তথ্যও খুঁজে পাওয়া যায় নি। তৃতীয়ত, জাকের পার্টির নির্বাচন বর্জনের তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, তারা ১০টিরও কম আসনে প্রার্থী রেখে বাকি আসনগুলো থেকে প্রার্থী সরিয়ে নিচ্ছে। অর্থাৎ, তারাও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলেই জানা যায়।
ফেসবুকে শেয়ারকৃত ভিডিওটির উত্থাপিত দাবিটি সঠিক কি না তা যাচাই করতে প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। প্রাথমিক অনুসন্ধান থেকে এমন কোনো ধরনের আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায় নি যা থেকে বোঝা যেতে পারে ভিডিওতে উত্থাপিত দাবিগুলো যথার্থ ও সত্য।
ভিডিওটিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের যে অংশটুকু ব্যবহার করা হয়েছে সেটি গত ১০ই জুন, ২০২৩ এ এটিএন বাংলার ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিও থেকে নেয়া হয়েছে। তবে, উক্ত ভিডিওতে জি এম কাদের জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের ব্যাপারের কোনো বক্তব্য দেন নি।
পরবর্তীতে, জাতীয় পার্টির নির্বাচন বর্জন সম্পর্কে অনুসন্ধান করা হলে, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা তাদের অফিসিয়াল কোনো মাধ্যম থেকেই কোনো ধরণের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। বরং, জাতীয় পার্টির আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নানা প্রতিবেদন পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ এ প্রকাশিত এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ২৮৩ আসনে প্রাথী মনোনয়ন দেয়ার কথা বলা হয়।
সুতরাং, জাতীয় পার্টির নির্বাচন বর্জনের তথ্যটি মিথ্যা।
অন্যদিকে, হাইকোর্ট থেকে নির্বাচন বাতিল করা হয়েছে কি না জানতে অনুসন্ধান করা হলে, এ সম্পর্কে হাইকোর্ট কিংবা নির্বাচন কমিশনের বরাতে কোনো ধরণের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। এছাড়া মূলধারার গণমাধ্যমেও এর কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় নি।
উল্লেখ্য, শেয়ারকৃত ভিডিওটিতে যেসকল ব্যাক্তির বক্তব্যের অংশ ব্যবহার করা হয়েছে তা সাম্প্রতিক সময়ের কি না জানতে বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে ইউটিউবে সার্চ করা হয়। এবং সেখানে মূলধারার গণমাধ্যমের বিভিন্ন ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
ভাইরাল ভিডিওতে প্রথমে যে ব্যাক্তিদের বক্তব্যের অংশটুকু ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো বায়ান্ন টিভি এবং চ্যানেল ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেল থেকে গত ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ প্রকাশিত দুইটি ভিডিও প্রতিবেদন থেকে নেয়া হয়েছে। বায়ান্ন টিভির এবং চ্যানেল ২৪ এর ভিডিও দুইটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জাকের পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য রবিউল ইসলাম রবি এবং হুমায়ন কবির আসন্ন সংসদ নির্বাচন থেকে তাদের নাম প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য দিচ্ছেন।
এছাড়া জাকের পার্টির নির্বাচন বর্জনের তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, তারা ১০টির কম আসনে প্রার্থী রেখে বাকি আসনগুলো থেকে প্রার্থী সরিয়ে নিচ্ছে। এর আগে জাকের পার্টি ২১৮টি আসনে প্রার্থী দেয়। প্রথম আলো প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে দলের মহাসচিব শামীম হায়দারকে উদ্ধৃত করে বলা হয়,”আমরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি না। কিছু আসনে যাতে পুরো মনোনিবেশ করা যায়, সে জন্য ২০০-এর বেশি আসন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে”।
অর্থ্যাৎ, জাকের পার্টির নির্বাচন বর্জনের তথ্যটিও সঠিক নয়।
সুতরাং, পরিষ্কার ভাবেই বুঝা যাচ্ছে যে, ফেসবুকে শেয়ারকৃত ভিডিওটির তিনটি দাবিই অসত্য। তাই ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত ভিডিওটির দাবিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।