যশোরে মাদ্রাসার ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ভিডিও নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা

107
যশোরে মাদ্রাসার ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ভিডিও নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা
যশোরে মাদ্রাসার ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ভিডিও নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা

১৮ ডিসেম্বর রাতে যশোর জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। অস্ত্র হাতে মুখ ঢাকা দুই দেহরক্ষীর মাঝখানে মুখ ঢাকা এক ব্যক্তি আরবিতে বক্তব্য দিচ্ছেন, এ রকম ভিডিওতে ‘জিহাদের ডাক’, ‘দেশে অবাধে জঙ্গি চাষবাস' এ ধরনের ক্যাপশন জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন অনেকেই।এছাড়া ভারতীয় রিপাবলিক বাংলা এই খেলনা বন্দুককে একে-৪৭ নাম দিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করেছে। বাংলাদেশের মূলধারার বিভিন্ন গণমাধ্যম পর্যালোচনা করে জানা যায়, প্রতিবছরের মতো এবারও চলতি মাসের ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর এই মাদ্রাসাতে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে গজল, বাংলা, আরবি, হামদসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হয়। ঐ অনুষ্ঠানে ইসরাইল যেভাবে ফিলিস্তিন মুসলমানের উপর নির্যাতন করছে সেটা নিয়ে একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। কিতাব বিভাগের তিন শিক্ষার্থী নাটকটি মঞ্চায়ন করেন। ওদের মধ্যে একজন ফিলিস্তিন নেতা সেজে আরবিতে বক্তব্য দেয়। কিন্তু এই মঞ্চায়নে সত্যিকারের বন্দুক বা সামগ্রিকভাবে 'জিহাদের ডাক' দেওয়ার মত কোনো বিষয় ছিলো না।

এ ধরনের কয়েকটি পোস্ট এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে । 

ঢাকা মেইলের প্রতিবেদন সঙ্গে ডামি অস্ত্র দুটির ছবি আছে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় সাদা ককশিট দিয়ে বানানো বন্দুক দুটিতে কালো রং করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে,  ভিডিওটির ব্যানারে দেখা যাচ্ছে, যশোরের রাজারহাটে জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুফতী লুৎফুর রহমান ফারুকী। প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যশোর জামিয়া ইসলামীয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও শিক্ষা সচিব জানিয়েছেন, বার্ষিক আঞ্জুমানের (প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান) সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের লড়াই-সংগ্রামের বিষয়টি অভিনয় করে উপস্থাপন করেছেন। তিনি আরোও বলেন, “এটি শুধুমাত্র অভিনয়, কোনোভাবেই এর সঙ্গে বাস্তবিক কিছু নেই”।

ইত্তেফাক তাদের প্রতিবেদনে ওই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের বক্তব্যকে সূত্র ধরে উল্লেখ্য করেছে যে, ‘এই ভিডিওটি অনেকেই ভিন্ন উদ্দেশ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আসলেই তেমন কিছু বিষয় না।’ 

ভারতের রিপাবলিক বাংলা তাদের প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে বাংলাদেশী ইউটিউবার আসাদ নূরের বয়ানে, যশোরে জঙ্গিরা হাতে AK47 নিয়ে মুখ ঢেকে গাজওয়াতুল হিন্দের ঘোষণা করছে। এই জঙ্গিদের না থামাতে পারলে সাধারণ মানুষরা মারা যাবে। 

ফেসবুকের ভিডিও পর্যালোচনা করে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আশাপাশের কেউ কেউ ভিডিও করছেন, একটা অনুষ্ঠান মঞ্চের আবহ চারদিকে।  

যমুনা টিভির প্রতিবেদনে পুলিশের বরাতে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, বন্দুক দুটি ককশিট ও কাঠ দিয়ে বানানো। হামাস বা আইসিস বা কোন জঙ্গি তৎপরতা নয়, এটা মাদ্রাসা ছাত্রদের অভিনয়ের মাধ্যমে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ দেখানো হয়েছে। 

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, পুলিশের ব্রিফিং এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্ট যে, মাদ্রাসার ভিডিওটিতে কোন জঙ্গি তৎপরতা চলছিল না, এটি একটি মঞ্চ নাটকের দৃশ্য। ফলে সঙ্গত কারণে, ফ্যাক্টওয়াচ ভিডিওর সঙ্গে জিহাদি বা জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগগুলোকে ‘বিভ্রান্তিকর’ হিসেবে চিহ্নিত করছে।

No Factcheck schema data available.

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে

এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে
ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh