সম্প্রতি “ফেসবুকে না লেখার শর্তে জামিন পেল ঝুমন দাস” এমন শিরোনামে একটি পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায় এমন কোন পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট না-করার শর্তে হাইকোর্ট ঝুমন দাসকে মুক্তি দিয়েছে।ফেসবুকে ভাইরাল পোস্টগুলোর দাবির সাথে মূল সংবাদের মিল না থাকায় ফ্যাক্ট–ওয়াচ ভাইরাল পোস্ট গুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
২৩শে নভেম্বর, ২০২২সালে কালের কণ্ঠ প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে ঝুমন দাস আপন ২৩শে নভেম্বর সুনামগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে ছয় মাসের জামিনে মুক্তি পান।গত ১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট দিতে পারবেননা এই শর্তে আদালত তাকে জামিন দিয়েছিলেন।জামিনের ১০ দিন পর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
গত ১৩ই নভেম্বর আজকের পত্রিকা প্রকাশিত একটা প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ঝুমন দাসকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেয় হাইকোর্ট।ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায় ফেসবুকে এমন কোনো পোস্ট করবেননা—এমন শর্তে রোববার বিচারপতি মোহাম্মদ সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজউদ্দিন খানের বেঞ্চ তাঁকে ছয় মাসের জামিন দেন।ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল শর্ত সাপেক্ষে ঝুমন দাসের জামিনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
১৩ই নভেম্বর NEWSBANGLA24 ইউটিউব চ্যানেলে ঝুমন দাসের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বলের ১ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের একটা ভিডিও পাওয়া যায়।উক্ত ভিডিও্রর পুরো সময় ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল কি বলেছেন তা লিখিত রূপে দেওয়া হলো-
“ঝুমন দাস আপন, সুনামগঞ্জ শাল্লার বাসিন্দা।আপনারা জানেন যে, গত ৩০শে আগস্ট, আবার ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে তাকে আটক করা হয়েছিলো।এর আগে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে ডিজিটাল সিকুউরিটি এক্টে একবার এরেস্ট হয়েছিলেন এবং সেটাতে তিনি জামিন লাভ করেছিলেন মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ থেকে।একইভাবে আজকে যে নতুন আইনটাতে, যে নতুন মামলায় তাকে এরেস্ট করা হয়েছিলো সেই মামলাটিতেও তাকে শর্ত সাপেক্ষে জামিন দেওয়া হয়েছে।তাকে একটি বন্ড সম্পাদন করতে হবে এই ধরনের (ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায় এমন) কোন স্ট্যাটাস তিনি স্যোশাল মিডিয়াতে দেবেন না।এই শর্তে তাকে আবারো জামিন দেওয়া হয়েছে।এই নতুন মামলাটিতে তিনি মূলত বাংলাদেশের একটি হাজার বছরের পুরানো মন্দিরের গাঁয়ে একটি মসজিদের দান-বাক্স সংক্রান্ত একটি মন্তব্য করেছিলেন।সেই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে এই মামলাটি হয়েছিলো।এইখানে পুলিশ দাবী করছে যে তার এই মন্তব্যের ফলে, এলাকার বাসিন্দারা তার ফেসবুকে এই মন্তব্যটি পড়ে যে ধর্মীয় বিদ্বেষ এবং ধর্মীয় উত্তেজনা সেটি বিরাজ করছিল এবং তার উদ্দেশ্য ছিলো যে এই উত্তেজনা সৃষ্টি করা সেই কারণে তিনি এই পোস্টটা দিয়েছিলেন।এই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মূলত এই মামলাটি করা হয়েছিল।”
অর্থ্যৎ গণমাধ্যম এবং ঝুমন দাসের আইনজীবীর বক্তব্য থেকে জানা যাচ্ছে হাইকোর্ট ঝুমন দাস কে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায় এমন পোস্ট করবেন না এই শর্তে জামিন দিয়েছে।তবে কোথাও বলা হয়নি ঝুমন দাস কে ফেসবুকে না লেখার শর্তে জামিন দেওয়া হয়েছে।ফেসবুকে না লেখার শর্ত বোঝায় তিনি ফেসবুকে কোন পোস্টই করতে পারবেন না।তবে হাইকোর্ট বলেছে তিনি শুধু ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায় এমন পোস্ট করতে পারবেন না।অন্য সব ধরণের পোস্ট করতে তার বাঁধা নেই।
উল্লেখ্য ১৩ই নভেম্বর সময়ের কণ্ঠস্বরের প্রকাশিত একটা প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের নবরত্ন মন্দিরের গেটে ঝোলানো মসজিদের দানবাক্সের একটি ভাইরাল ছবি ঝুমন দাস ফেসবুকে পোস্ট করেন।৩০শে আগস্ট ঝুমন দাস কে ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট শেয়ার দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করে সুনামগঞ্জের শাল্লা থানা পুলিশ।৫ই সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জের চিফ জুডিসিয়াল আদালতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহানের কাছে ঝুমন দাসের আইনজীবী তার জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর হয়।
এর আগে গত বছরের ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ‘শানে রিসালাত সম্মেলন’ নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম।এতে হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বক্তব্য দেন।
এই সমাবেশের পরদিন ১৬ মার্চ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ঝুমন দাস।স্ট্যাটাসে তিনি মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন।
পরদিন কয়েক হাজার লোক লাঠি সোঁটা নিয়ে মিছিল করে হামলা চালায় নোয়াগাঁও গ্রামে।তারা ঝুমন দাসের বাড়ি সহ হাওর পারের হিন্দু গ্রামের বাড়ি, মন্দির ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
এরপর ২ মার্চ ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম।ঝুমন গ্রেপ্তার হওয়ার ছয় মাস পর গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর শর্ত সাপেক্ষে হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান।
ফেসবুকে ভাইরাল পোস্টে বলা হয়েছে ঝুমন দাস কে ফেসবুকে না লেখার শর্তে মুক্তি দিয়েছে হাইকোর্ট।কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে,হাইকোর্ট ঝুমন দাসকে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায় এমন পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে না-করার শর্তে মুক্তি দিয়েছে।ফেসবুকে ভাইরাল পোস্টগুলোর দাবির সাথে মূল সংবাদের মিল না থাকায় ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?