ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করার ঘটনাকে জিহাদী কর্তৃক হিন্দু মেয়েদের হত্যার ভিডিও দাবি

116
ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করার ঘটনাকে জিহাদী কর্তৃক হিন্দু মেয়েদের হত্যার ভিডিও দাবি
ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করার ঘটনাকে জিহাদী কর্তৃক হিন্দু মেয়েদের হত্যার ভিডিও দাবি

Published on: [post_published]

বাংলাদেশে ‘জিহাদী’রা হিন্দু মেয়েদের ধাওয়া করে হত্যা করছে- এমন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কিছু পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে। এসব পোস্টে সংযুক্ত ভিডিওতে একদল তরুণকে লাঠি হাতে অপর কিছু তরুণ-তরুণীকে মারধর করতে দেখা যাচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, গত ১৫ই জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই হামলার ঘটনা ঘটে। সেদিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করেছিল, যার কিছু দৃশ্য এবং ফুটেজ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। এদিনের সংঘর্ষে অনেকে আহত হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কেউ নিহত হননি। তাছাড়া, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে সকল ধর্মের সদস্যই ছিলেন, আর হামলাটি করেছিল সরকার-সমর্থিত ছাত্রলীগ। সুতরাং, ‘হিন্দু মেয়েদের ধাওয়া করে হত্যা করা’র দাবিটি মিথ্যা।

গুজবের উৎস

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখতে পাবেন এখানে,এখানে,এখানে,এখানে,এখানে,এখানে,এখানে,
এখানে, এখানে
অনুসন্ধান

৯ই আগস্ট তারিখে জনৈক ‘হিন্দু বীর নেপাল’ ১মিনিট ৩০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন, জিহাদিরা বাংলাদেশে হিন্দুদের তাড়া করছে এবং হত্যা করছে!*

অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে!* জীবন বাঁচাতে অনেক নারীকে বোরকা পরতে হয়েছে কিন্তু এই জিহাদিরা জেনে গেছে যে তারা হিন্দু, তা না হলে মুসলমানদের তাড়া করে হত্যা করছে কেন?

ভারত ও নেপাল থেকে বাংলাদেশীদের হত্যা করুন, তবেই আমরা আমাদের হিন্দু পরিবারগুলোকে সেখানে জীবিত রেখে যাব।

(Jihadis are chasing and killing Hindus in Bangladesh!*

The situation has become very bad!* Many women have to wear burqas to save their lives but these Jihadis have come to know that they are Hindus, then why are they chasing and killing the Muslims?

Kill Bangladeshis from India & Nepal , only then will we leave our Hindu families alive there.)

সংযুক্ত ভিডিওর ৬ষ্ঠ মিনিটে হিজাব পরিহিত এক তরুণীকে আক্রমণ থেকে বাচার জন্য ফুটপাথে দৌড়াতে দেখা যায়। সম্ভবত ভিডিওর এই অংশ দেখেই পোস্টকারী লিখেছেন, জীবন বাঁচাতে তাকে বোরকা পরে ছদ্মবেশ নিতে হয়েছে, কিন্তু জিহাদীরা তাঁর আসল পরিচয় জেনে গিয়েছে , এ কারণে তাঁর উপর আক্রমণ করছে।

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, এই ভিডিওতে দেখানো টুকরো ঘটনাগুলো গত ১৫ই জুলাই এর ঘটনা। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত একদল শিক্ষার্থী প্রবেশ করতে গেলে তাতে বাধা দেয় ছাত্রলীগ। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর পুরো ক্যাম্পাসে বিভিন্ন জায়গায় কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। হামলায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অনেকে মারধরের শিকার হয়েছেন। আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রী ছিলেন বিধায় এই ছবি এবং ভিডিওগুলো সেদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি আলোচিত হয়।

জনৈক গোলাম মোস্তফা মামুন ইউটিউবে এদিনের ভিডিও আপলোড করে ক্যাপশনে লেখেন, আজ আমরা লজ্জিত। এছাড়া হ্যাশট্যাগ দিয়ে #qota #du #dhakauniversity #15july ইত্যাদি কথাগুলোও লেখেন।

জনৈক সিন্থিয়া বিনতে একই ভিডিও আপলোড করে ক্যাপশনে লেখেন , 15th July, the museum of Dhaka!


এমন আরো কয়েওটি ভিডিও দেখুন এখানে,এখানে, এখানে

এসব ভিডিওর সাথে ‘হিন্দু বীর নেপাল’ এর ভিডিওটি সম্পূর্ণ মিলে যায়। অর্থাৎ এটা নিশ্চিত যে ‘হিন্দু বীর নেপাল’ এর ভিডিওটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ই জুলাই এর ঘটনার ভিডিও।

এদিনে ছাত্রলীগের হামলা সংক্রান্ত খবর একাধিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। যেমন দেখুন এখানে,এখানে। এসন পত্রিকার বিবরণ থেকে জানা যাচ্ছে যে ,কোটা সংস্কারের দাবিতেই এই আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এর ছাত্র সংগঠন, ছাত্রলীগ এখানে বলপূর্বক বাঁধা দিচ্ছে। এখানে জড়িত কোনো পক্ষকেই ধর্ম বা সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়, কারণ উভয় পক্ষেই সকল ধর্মের সদস্য রয়েছেন। আর হামলাকারী এখানে ছাত্রলীগ, কোনো জিহাদী নয়।

তদুপরি, এসব ভিডিওর থাম্বনেইলে যে আহত তরুণীকে দেখা যাচ্ছে,অমি আজাদ নামের ইডেন কলেজের সেই শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুক একাউন্টে একটি পোস্টের মাধ্যমে এই ‘জিহাদী আক্রমণ’ এর দাবি খন্ডন করেছেন। ১১ই আগস্ট তারিখে পোস্ট করা এই স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, দয়া করে গুজব ছড়ানো বন্ধ করুন। …।আমি একজন সাধারণ ছাত্র আন্দোলনকারী এবং মুসলিম। আমার উপরে কোনো সাম্প্রদায়িক হামলা হয়নি। বরং ১৫ই জুলাই তারিখে আমি সাবেক ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন, ছাত্রলীগের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলাম।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে কয়েকশো শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছিল। এই মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছিল ১৬ই জুলাই রংপুরে,আবু সাঈদ এর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। ১৫ই জুলাই কোনো আন্দোলনকারীর মৃত্যুর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ফলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে এই ভিডিওতে যাদেরকে আহত দেখা গিয়েছে, তারা সূস্থ আছেন। ফলে এই ভিডিওর মাধ্যমে মূল পোস্টের অন্যতম দাবির (জিহাদীরা হিন্দুদের হত্যা করছে) কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি।

সিদ্ধান্ত

আলোচ্য ভিডিওতে, এবং ভিডিও সংক্রান্ত খবর অনুসন্ধান করে ‘জিহাদী’দের দ্বারা বাংলাদেশের হিন্দুদের হত্যা করার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এই ফেসবুক পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.