ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন, এখানে,এখানে,এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচেরঅনুসন্ধান
এবারের ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে ব্যবহার করা হচ্ছে আল-রিহলা নামক বল। আল-রিহলা আরবি শব্দ, এর বাংলা অর্থ ভ্রমণ। আল রিহলা বলটি সরবরাহ করছে খেলাধুলার সামগ্রী প্রস্তুতকারী বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান এডিডাস। এডিডাসের অফিশিয়াল পেজে গিয়ে দেখা যায় বর্তমান ফুটবলে কোন আরবী বর্ণ নেই। কোন দেশের পতাকাও ব্যবহার করা হয়নি। তাই বলা যায় সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাল ফুটবলের ছবিগুলো বর্তমান সময়ের না। এবং ভাইরাল হওয়া বলগুলো দিয়ে কাতার বিশ্বকাপ খেলা হচ্ছে না।
তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে কলেমা খচিত ফুটবল তৈরি করা হয়েছিল এবং সেগুলো নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছিল।
lifeinsaudiarabia.net থেকে জানা যাচ্ছে ২০০২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী সব দলের পতাকার ছবি ব্যবহার করে একটি ফুটবল তৈরি করতে চেয়েছিলো। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত সৌদি আরবের আপত্তির কারণে খারিজ হয়ে যায়। কারণ সৌদি আরবের পতাকায় পবিত্র কালিমা তায়্যিবা লেখা থাকে। তাই সৌদি আরবের পতাকাখচিত ফুটবল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
change.org নামক একটি তৎকালীন অনলাইন পির্টিশন সাইটে সৌদি আরবের পতাকা আছে এমন ফুটবলের ছবি দেখা যায়। সেখানে একটা অনলাইন পির্টিশনে সৌদি আরবের পতাকা অথবা কালেমা সরাতে বলা হয়।
২০১৮ সালের বিশ্বকাপে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কমার্শিয়াল বিক্রির জন্য সৌদি আরবের পতাকা খচিত ফুটবল তৈরি করে। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের বিক্ষোভের মুখে সৌদি আরবের পতাকা খচিত সেই ফুটবলের বিপণন বন্ধ করে দেয়।
২০১৮ সালের ৯ জুন The New Arab প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ফুটবলে সৌদি আরবের পতাকা থাকায় মুসলিমদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। উক্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয় ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে সৌদি আরবসহ অংশগ্রহণকারী সব দেশের পতাকা খচিত ফুটবলের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। সৌদি আরবের পতাকায় একেশ্বরবাদী বাণী “আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, এবং হযরত মুহাম্মদ (স) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল” থাকায় এবং তা ফুটবলে ব্যবহার করায় মুসলিমদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
২০০৭ সালের ২৮ আগস্ট Guardian প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায় আমেরিকান সৈন্যরা আফগানিস্তানের খোস্ত প্রদেশের স্থানীয় মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য শিশুদের ফুটবল উপহার দেয়। কিন্তু ফুটবলে সৌদি আরবের পতাকা থাকায় তা নিয়ে বিক্ষোভ এবং সমালোচনা শুরু হয়।
Guardian -এর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে ২০০২ সালে ফিফা অংশগ্রহণকারী সব দেশের পতাকাখচিত ফুটবল তৈরি করতে চেয়েছিলো। কিন্তু ধর্মীয় কারণে সৌদি আরব তার পতাকা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আপত্তি জানায়।
২০০৭ সালের একই ধরণের প্রতিবেদনটি বিবিসি নিউজে ২৬শে আগস্ট প্রকাশ করা হয়। বিবিসি নিউজের প্রতিবেদনে আমেরিকান সৈন্যদের দেওয়া বলের ছবিও দেখানো হয়। সেই বলের ছবিটি দেখুন এখানে-
সাম্প্রতিক সময়ে কাতার বিশ্বকাপে কলেমা খচিত ফুটবলের গুজব নিয়ে অনুসন্ধান করেছিলো বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকিং সাইট রিউমার স্কানারও। তাদের অনুসন্ধানেও দেখা যায় বর্তমানে ভাইরাল হওয়া বলগুলো ২০১৮ সালের। এবং বর্তমান কাতার বিশ্বকাপে ভাইরাল হওয়া পতাকা খচিত বল দিয়ে খেলা হচ্ছে না।
অতএব উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায় বর্তমানে ভাইরাল হওয়া ফুটবলগুলো ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের কমার্শিয়াল বিক্রির জন্য তৈরি করা হয়েছিলো। কিন্তু মুসলিম দেশগুলোর আপত্তির কারণে সেই বলগুলো বিপণন বন্ধ করে দেয়। বর্তমান কাতার ফিফা বিশ্বকাপে এডিডাসের আল-রিহলা নামক বল দিয়ে খেলা হচ্ছে। কিন্তু এই বলের কোথাও আরবি হরফ বা সৌদি আরব বা অন্য কোন দেশের পতাকা ব্যবহার করা হচ্ছে না। এ কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্ট গুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?