পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিলো মুসলিম বাবা-মা?

170
পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিলো মুসলিম বাবা-মা?
পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিলো মুসলিম বাবা-মা?

Published on: [post_published]

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তিন তালাক এবং বহুবিবাহ থেকে বাঁচাতে নিজের মেয়েকে হিন্দু ছেলের সাথে বিয়ে দিলো মুসলিম বাবা মা- এমন শিরোনামে সম্প্রতি একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, মেয়েটি তাদের পালক সন্তান। পালক কন্যাটি হিন্দু ধর্মের অনুসারী এবং তার সাথে যে ছেলেটির বিয়ে হয়েছে সেও হিন্দু। অর্থাৎ, তিন তালাক কিংবা বহুবিবাহ থেকে বাঁচাতে নয়, মেয়েটি যেহেতু হিন্দু — তাই তাকে একজন হিন্দু ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছেন তার অভিভাবক। আবার ঘটনাটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নয়, বরং কেরালায় ঘটেছে।

 

এমন কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ভাইরাল পোস্টে বলা হচ্ছে, “তিন তালাক এবং বহুবিবাহ থেকে বাচাতে নিজের মেয়েকে হিন্দু ছেলের সাথে বিয়ে দিলো মুসলিম বাবা মা। ♥️মুস!লিম বাবা মা সামনে দাঁড়িয়ে তাদের মেয়েকে হিন্দু ছেলের সাথে অগ্নি সাক্ষী করে সাতপাক ঘুরে তাদের বিয়ে দেয় মেয়েকে হিন্দু ধর্মে দিক্ষিত করেন পশ্চিমবঙ্গে বানকূড়া নামে এক জায়গায়।♥️💕💕স্বাগতম দেবী 💕💕মেয়ের বাবা মা কে শতকোটি প্রনাম যে সত্য সারাজীবন গ্যারেন্টি নেই বহুবিবাহের ভয় নেই তালাকের ভয় এমন ধর্মের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছে।♥️

সংগৃহীত

জয় শ্রী রাম

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

 

ভাইরাল এসব পোস্টে যে ছবিটি রয়েছে তার সাহায্যে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। “Kerala: Muslim man marries off his Hindu foster daughter” শিরোনামে ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ এ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে ভাইরাল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মেয়েটির নাম রাজেশ্বরী (Rajeshwari), তার পালক পিতামাতার নাম আবদুল্লাহ আব্দুররহমান ও খাদিজা, এবং তার স্বামীর নাম বিষ্ণুপ্রসাদ। তারা ভারতের কেরালা রাজ্যের কানহাঙ্গা (Kanhangad) উপজেলার বাসিন্দা। রাজেশ্বরীর নিজের বাবার নাম ছিলো সারাভানান, তিনি আবদুল্লাহর বাড়িতে কাজ করতেন। কিন্তু রাজেশ্বরীর ছোটবেলায়ই তার বাবা-মা মারা যায় এবং তার আত্মীয়স্বজন তাকে আবদুল্লাহর কাছে নিয়ে আসে। তখন আবদুল্লাহ মেয়েটিকে নিজেদের কাছে রেখে দেন এবং তার তিন ছেলের সাথে নিজের মেয়ের মত করেই তাকে বড় করেন। পরবর্তীতে মেয়েটি বড় হলে তখন তাকে বিয়ে দেয়ার কথা ভাবেন আবদুল্লাহ এবং তার স্ত্রী। যেহেতু মেয়েটি হিন্দু তাই তারাও বিয়ের জন্য হিন্দু ছেলে খোঁজা শুরু করেন। এরপর বিষ্ণুপ্রসাদের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয় এবং বিষ্ণুপ্রসাদের পরিবার চায় তাদের বিয়েটি কোনো একটি হিন্দু মন্দিরে হোক। কিন্তু আবদুল্লাহ এবং তার পরিবার যেহেতু মুসলমান সেহেতু মন্দিরে তারা ঢুকতে পারবে কি না এ নিয়ে চিন্তা শুরু হয়। তবে পরবর্তীতে মন্দির কর্তৃপক্ষ তাদেরকে মন্দিরে ঢোকার অনুমতি দিলে দুই পরিবারের উপস্থিতিতেই হিন্দু রীতিতে তাদের বিয়ে হয়। এ বিষয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে আবদুল্লাহ বলেন,” আমি আইনগতভাবে মেয়েটিকে দত্তক নেইনি তবে সে আমার এবং আমার স্ত্রী খাদিজার কাছে মেয়ের মতই, তাই একজন ভালো পাত্র খুঁজে পাওয়ার পর খুশি হয়েই আমরা তার বিয়ে দেই”। তিনি আরোও বলেন।“ আমি কখনোই ধর্ম বা বিশ্বাসের কথা ভাবিনি, শুধুমাত্র তার বিয়ের কথাই ভেবেছি কারণ এটি আমার দায়িত্ব”।

তাদের বিয়ের আরোও কিছু ছবি দেখুন এখানেঃ

সূত্র- টাইমস অব ইন্ডিয়া

সূত্র- টাইমস অব ইন্ডিয়া

 

একই বিষয় নিয়ে আরেকটি ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন পড়ুন এখানে

অর্থ্যাৎ, টাইমস অব ইন্ডিয়ার এই প্রতিবেদন থেকে কমপক্ষে দুইটি অসংগতি চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত, এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোনো ঘটনা নয়, বরং কেরালার ঘটনা। দ্বিতীয়ত, ছবিতে থাকা মেয়েটি সেখানে উল্লেখিত বাবা-মায়ের নিজের সন্তান নয়, বরং তাদের পালক সন্তান। মেয়েটির অভিভাবক মুসলমান হলেও মেয়েটি হিন্দু। তাই তার বিয়ে একজন হিন্দু ছেলের সাথেই দেয়া হয়। এর সাথে তিন তালাক বা বহুবিবাহের কোনো সম্পর্ক নেই।

তাই উক্ত ছবির সাথে থাকা অসংগতিপূর্ণ ক্যাপশনটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” চিহ্নিত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.