যা দাবি করা হচ্ছেঃ “৭০ উইকেটের বিনিময়ে অর্জন ৪০% তার মধ্যে ৩৮% জাল ২% কাস্ট গত ১৫ বছরে এটাই তাদের অর্জন! সাংবাদিক হিসেবে আমি লজ্জিত।” খালেদ মুহিউদ্দীন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরে এমন একটি বক্তব্য দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছে: দাবিটি মিথ্যা। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোষ্টগুলোতে খালেদ মুহিউদ্দীনের গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিনের একটি লাইভ ভিডিওর অংশ ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে দাবি করা হচ্ছে আলোচিত মন্তব্যটি সেই লাইভ ভিডিও চলাকালীন খালেদ মুহিউদ্দীন করেছিলেন। কিন্তু, লাইভ ভিডিওতে তাকে আলোচিত উক্তিটির মত কোনো কিছু বলতে শোনা যায়নি। বরং ঐ লাইভের ৩ মিনিট ১০ সেকেন্ড থেকে ৩ মিনিট ১৭ সেকেন্ড অংশে তাকে বলতে শোনা যায়, “জাহাঙ্গীর কবীর নানক এবং জনাব ইলিয়াস মোল্লার আসন বাদে আমরা যে সকল স্থানে ঘুরেছি, তাতে ২% এর মত ভোট পড়েছে ১২ টা পর্যন্ত”। তাছাড়া, যোগাযোগ করা হলে খালেদ মুহিউদ্দীন নিজেও ফ্যাক্টওয়াচকে নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি এই মন্তব্যটি করেননি।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কিত মন্তব্যটি সত্যিই খালেদ মুহিউদ্দীনের কি না— এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুরুতেই ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। কিন্তু সেখানে তাকে “৭০ উইকেটের বিনিময়ে অর্জন ৪০% তার মধ্যে ৩৮% জাল ২% কাস্ট গত ১৫ বছরে এটাই তাদের অর্জন! সাংবাদিক হিসেবে আমি লজ্জিত” — এরকম কিছু বলতে শোনা যায়নি। সেখানে মূলত তিনি ঢাকার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি সম্পর্কে বলছিলেন।
পরবর্তিতে এই ভিডিওর উৎস খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে ডয়চে ভেলে বাংলার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে গত ৭ জানুয়ারি শেয়ার করা একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে ডয়চে ভেলে বাংলার প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীন, সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম এবং যুবায়ের আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। তারা তিনজনেই মূলত ঢাকার পল্লবী থেকে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি সম্পর্কে বলছিলেন। খালেদ মুহিউদ্দীন নির্বাচনের দিন ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখে সেখানকার ভোটারদের উপস্থিতি ভোট প্রদানের হাঁর ইত্যাদি সম্পর্কে বলছিলেন। কিন্তু লাইভ ভিডিওর কোথাও তিনি বা তার সঙ্গে থাকা অন্য দুইজন সাংবাদিক “৭০ উইকেটের বিনিময়ে অর্জন ৪০% তার মধ্যে ৩৮% জাল ২% কাস্ট গত ১৫ বছরে এটাই তাদের অর্জন! সাংবাদিক হিসেবে আমি লজ্জিত” এ জাতীয় কিছুই বলেননি। বরং মূল ভিডিওর ৩ মিনিট ১০ সেকেন্ড থেকে ৩ মিনিট ১৭ সেকেন্ড অংশে বলেছেন, “জাহাঙ্গীর কবীর নানক এবং জনাব ইলিয়াস মোল্লার আসন বাদে আমরা যে সকল স্থানে ঘুরেছি, তাতে ২% এর মত ভোট পড়েছে ১২ টা পর্যন্ত”। তাছাড়া, এই লাইভ ভিডিওটি দুপুর ১টা ৫৩ মিনিটে শেয়ার করা হয়েছিল যখন ভোটগ্রহণ চলমান ছিল। ভোটগ্রহণ চলাকালীন নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়া বা মন্তব্য কর সম্ভবও নয়।
খালেদ মুহিউদ্দীন নির্বাচন পরবর্তী কোনো সময় এমন কোনো মন্তব্য দিয়েছিলেন কি না এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করেও নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম থেকে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই এ ব্যাপারে খালেদ মুহিউদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি নিজে ফ্যাক্টওয়াচকে নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি এই মন্তব্যটি করেননি।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ এ সংক্রান্ত ভাইরাল পোস্টগুলোকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।