সম্প্রতি ফেসবুকে খালেদ মুহিউদ্দিনকে উদ্ধৃত করে কিছু পোস্টে বলা হচ্ছে যে, "হাসনাত আব্দুল্লাহ যে সাহস টা দেখালো, যে প্রলোভন অগ্রাহ্য করল সেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। তার পাশে ছাত্র-জনতাকে দাঁড়াতে হবে।" ফেসবুকে 'সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দিন' নামের একটি আইডি থেকে এই স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে। এই স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে ফেসবুক পোস্ট এবং সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন প্রকাশের ঘটনা ঘটেছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে, এই আইডিটি তার নয়। খালেদ মুহিউদ্দিন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে তার আসল আইডি ও পেজের লিংক শেয়ার করে বলেছেন, "সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দিন পেইজটি আমার নয়, এর কোনো মতামতও আমার নয়।"
খালেদ মুহিউদ্দিনের ফেক আইডি থেকে ছড়ানো ফেসবুক পোস্ট এবং সংবাদ মাধ্যমের এ ধরনের প্রতিবেদনের কয়েকটি এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
২১ মার্চ ‘সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দিন’ নামের একটি আইডি থেকে লাল ব্যাকগ্রাউন্ডের একটি পোস্ট দেওয়া হয়। পোস্টটিতে লেখা- “হাসনাত আব্দুল্লাহ যে সাহস টা দেখালো, যে প্রলোভন অগ্রাহ্য করল সেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। তার পাশে ছাত্র-জনতাকে দাঁড়াতে হবে।” পোস্টটি ফেসবুকে ছড়াতে থাকে ২১ মার্চ থেকে।
এই পোস্টের সূত্র ধরে দৈনিক ইনকিলাব প্রতিবেদন প্রকাশ করে ২১ মার্চ। সময়ের আলো তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে “হাসনাতের পাশে দাঁড়ালেন খালেদ মুহিউদ্দীন”- এই শিরোনামে। এ ধরনের আরও প্রতিবেদন করেছে যায় যায় দিন।
সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দিন পেজটিতে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, এর ইন্ট্রোতে লেখাঃ ‘It’s a Khaled Muhiuddin fan page
এই পেজের কোনো মন্তব্য খালেদ মুহিউদ্দীন স্যারের নিজস্ব মন্তব্য নয়’। পেজ ট্রান্সপারেন্সিতে দেখা যায়, এটি ২০২৪ সালের ১৩ জানুয়ারি তৈরি করা হয়েছে এবং এটি সৌদি আরব থেকে চালানো হয়।
এই পেজ থেকে তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন করা ইনকিলাবের পোস্টটি শেয়ার করে বলা হয়েছে, “আপনাদের আবার এ কেমন সাংবাদিকতা? কোনো কিছু যাচাই-বাছাই না করেই নিউজ করে দিলেন? নিউজের উক্ত মন্তব্যটি খালেদ মুহিউদ্দিন স্যারের নিজস্ব মন্তব্য নয়। পেজের বায়োতেই দেওয়া আছে এটা ফ্যান পেজ। এই পেজের সাথে Khaled Muhiuddin স্যারের নূন্যতম কোনো সম্পর্ক নেই। অনুগ্রহ করে আপনারা ফেসবুক এবং ওয়েবসাইট থেকে ফেক নিউজটি ডিলিট করে দিবেন। ধন্যবাদ।” এই পোস্ট দেওয়ার পরেও এই আইডি থেকে উল্লেখিত পোস্টটি সরানো হয়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, হাসনাত আবদুল্লাহ গত ২১ মার্চ সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে একটি ফেসবুকপোস্ট করেন। মূলত এই পোস্টকে কেন্দ্র করে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়। মূলধারার সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এই ঘটনা নিয়ে।
ওই স্ট্যাটাসে হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন ও তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। ১১ মার্চ সেনানিবাসে হাসনাত আবদুল্লাহসহ দুজনের কাছে এমন একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়, আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদের বলা হয়, ইতিমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা নাকি ভালো।’
এরই পরিপ্রেক্ষিতে “হাসনাত আবদুল্লাহর পাশে ছাত্রজনতাকে দাঁড়াতে হবে” এই বক্তব্য খালেদ মুহিউদ্দিন দিয়েছেন, এ ধরনের পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে।
খালেদ মুহিউদ্দিন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে বলেন, ‘সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দিন’ পেজটি আমার নয়, এর কোনো মতামতও আমার নয়। এই পোস্টে তিনি তার একটি ফেসবুক আইডি, একটি ফেসবুক পেজ এবং ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দিন’ নামের একটি অফিসিয়াল পেজের কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া ফেসবুকে থাকা বাকি প্রোফাইল বা পেজের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই বলে উল্লেখ করেন। তার উল্লেখিত এই সব লিংক অনুসন্ধান করে করে, হাসনাত আব্দুল্লাহকে নিয়ে ভাইরাল পোস্টটিতে উল্লেখিত বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে খালেদ মুহিউদ্দিনের ফেসবুক পোস্ট এখানে।
কাজেই, খালেদ মুহিউদ্দিনের বক্তব্য হিসেবে প্রচারিত বক্তব্যটি তার নয়, আইডিটি ফেক এবং হাসনাত আবদুল্লাহকে নিয়ে আলোচিত মন্তব্যটি তিনি করেননি। ফলে সঙ্গত কারণে বলা যায়, এ ধরনের ফেসবুক পোস্ট এবং প্রতিবেদনগুলো মিথ্যা।
Claim: সম্প্রতি ফেসবুকে খালেদ মুহিউদ্দিনকে উদ্ধৃত করে কিছু পোস্টে বলা হচ্ছে যে, “হাসনাত আব্দুল্লাহ যে সাহস টা দেখালো, যে প্রলোভন অগ্রাহ্য করল সেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। তার পাশে ছাত্র-জনতাকে দাঁড়াতে হবে।" ফেসবুকে 'সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দিন' নামের একটি আইডি থেকে এই স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে। এই স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে ফেসবুক পোস্ট এবং সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন প্রকাশের ঘটনা ঘটেছে।
Claimed By: Facebook Users
Rating: False
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh