২৭ নভেম্বর ২০২১ তারিখে “বাংলাদেশের ভাইরাল ভিডিও” নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে “রাষ্ট্রপতির কাছে খালেদা জিয়ার ক্ষমা! যে কোন সময় বিদেশ যাচ্ছেন খালেদা জিয়া” ক্যাপশনে ৩ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। বাস্তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে রাষ্ট্রপতির কাছে খালেদা জিয়া কোনো ক্ষমা চান নি। ভূয়া ক্যাপশনটি জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে বিবেচনায়, ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে।
ফ্যাক্টচেক:
অনুসন্ধানে দেখা যায়, “রাষ্ট্রপতির কাছে খালেদা জিয়ার ক্ষমা! যে কোন সময় বিদেশ যাচ্ছেন খালেদা জিয়া, যে সিদ্ধান্ত নিল পরিবার!!” শিরোনামে একটি ভিডিও ২৭ নভেম্বর ২০২১ তারিখে Bangla Viral News নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছিল। ৮ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের সেই ভিডিওটির প্রথম ৩ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড “রাষ্ট্রপতির কাছে খালেদা জিয়ার ক্ষমা! যে কোন সময় বিদেশ যাচ্ছেন খালেদা জিয়া” ক্যাপশনে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। যদিও ভিডিওর বিস্তারিত অংশে বলা হয়নি রাষ্ট্রপতির কাছে খালেদা জিয়া ক্ষমা চাইবেন বা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ভিডিওর থাম্বনেইলে দেখা যাচ্ছে, বাঁয়ে অসুস্থ খালেদা জিয়া হুইল চেয়ারে বসে আছেন যার অদূরেই রয়েছে উড়োজাহাজ। এর ডানে দেখা যাচ্ছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সাথে করমর্দন করছেন। বাস্তবে এটি ফটোশপের কাজ। থাম্বনেইলে দৃশ্যমান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছবিটি এবছরের এপ্রিল মাসে তোলা হয়েছে, যখন তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
অন্যদিকে করমর্দনের মূল ছবিটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। ছবিটি তোলা হয়েছিল ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। ছবিটিতে নরেন্দ্র মোদীর মুখমন্ডলের স্থানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরেরর মুখ ফটোশপের মাধ্যমে যোগ করা হয়েছে।
ছবি: ভাইরাল ভিডিওর থাম্বনেইল
ছবি: এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়া
ছবি: বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
বিতর্কের সূত্রপাত:
২৬ নভেম্বর ২০২১ তারিখে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ মন্তব্য করেছিলেন,
“বিএনপি থেকে বলছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে। এই মুহূর্তে বিদেশে পাঠানো জরুরি। তাঁর কিছু হলে সরকার দায়ী থাকবে। আমি মনে করি, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সবচেয়ে বড় বাধা বিএনপি নিজেই। কারণ, যদি সত্যিকার অর্থেই বিএনপি মনে করে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রয়োজন, যথাযথ চিকিৎসা এখানে হচ্ছে না, আরও উন্নত চিকিৎসা দরকার; তাঁদের উচিত ছিল রাজনীতি না করে তাঁর জীবন বাঁচানোর জন্য আইনের যে একটা পথই এখন খোলা আছে, তা অনুসরণ করা। উনি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। যদি দণ্ড মওকুফ হয়ে যায়, তখন তিনি স্বাধীনভাবে যেকোনো জায়গায় যেতে পারেন।“
তবে বিএনপি ও পরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবার বিষয়টিকে নাকচ করে দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন,
“খালেদা জিয়া জলে পড়ে যাননি যে তাকে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। প্রয়োজনে খালেদা জিয়া মারা যাবে, তবুও রাষ্ট্রপতির কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করব না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ক্ষমতার অতিরিক্ত অপব্যবহার করছে। তিলে তিলে মারতে চাইছে খালেদা জিয়াকে। আমরা এর বিচারের ভার দেশের সাধারণ মানুষের ওপর ছেড়ে দিলাম।“
এর আগে গত ২২ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা বাতিল করে তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের আদেশ দিতে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছিলেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের একাংশ। সুপ্রিম কোর্টের ১১ আইনজীবী এই আবেদনে স্বাক্ষর করেছিলেন। সেই আবেদনে বলা হয়, সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা আপনার আছে। যে ক্ষমতা সংবিধান আপনাকে দিয়েছে। দেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জীবন রক্ষায় সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বাতিল করে বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করে বাঁচার সুযোগ দিন।
উল্লেখ্য যে, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদটি মূলত ক্ষমা প্রদর্শনের অধিকার যেখানে উল্লেখ রয়েছে, “কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে−কোন দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে−কোন দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।“
রাষ্ট্রপতির কাছে করা ঐ আবেদনটি নিষ্পত্তি করতে ২ ডিসেম্বর আবারও আবেদন করেন সেই ১১ জন আইনজীবী। সেখানে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে করা আবেদনটি সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মানবিক দিক বিবেচনায় নিষ্পত্তির জন্য অনুরোধ করা হয়।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে ভর্তি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আরও অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ (বুধবার) গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?