বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন- এমন একটি গুজব ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। খালেদা জিয়ার ছবিযুক্ত একটি ফটোকার্ডের সাথে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার এই দাবি বিভিন্ন ফেসবুক পেজে দেখা যাচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতির বাইরে রয়েছেন । আদালতের দেয়া সাজার কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্যতাও হারিয়েছেন । সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নেননি। এবার,২০২৪ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে তাঁর দল, বাংলাদেশ জাতীয়াতাবাদী দল অংশ নিচ্ছে না। এছাড়া ,দলের পক্ষ থেকে ,কিংবা স্বতন্ত্রভাবে খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোনো খবরও গণমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই খবরকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।
ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডে বেগম খালেদা জিয়াকে একটি শিশুকে সাথে নিয়ে ব্যালটবাক্সে ব্যালট ফেলতে (অর্থাৎ ভোট প্রদান করতে) দেখা যাচ্ছে। ছবির নিচে লেখা রয়েছে , গোপনসূত্রে জানা গেছে বোতল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন ম্যাডাম ।
ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনেও একই বাক্য রয়েছে ।
ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বেগম জিয়ার ভোটদানের এই ছবি গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছিল। বিবিসিতে প্রকাশিত ছবিটি দেখতে পাবেন এখানে। এছাড়া , আনভেরিফাইড কয়েকটি ফেসবুক পেজ থেকে দাবি করা হচ্ছে, শিশুটি ছিল খালেদা জিয়ার নাতনী।
আরটিভি’র এই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রথমে ৫ বছরের এবং পরবর্তীতে সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়। এরপর থেকে তার কারাজীবন শুরু হয়। মাত্র ৭ মাসের মাথায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাতেও সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর। এই মামলায় তাকে আদালত ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সরকার ২০২০ সালের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসায় অবস্থান এবং দেশ ত্যাগ না করার শর্তে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়। এরপর থেকে দফায় দফায় তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ছে। গত ৯ অগাস্ট থেকে তিনি বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গত ২৩শে অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানিয়েছিলেন , হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি সেলিমসহ সাজাপ্রাপ্ত কেউই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
তিনি আরো বলেন, খুরশীদ আলম খান বলেন, হাইকোর্ট গতকালকের প্রকাশিত রায়ে বলেছেন, সাজা কখনও স্থগিত হয় না। উপযুক্ত আদালতে সাজা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নাই। এই রায়ের আলোকে খালেদা জিয়া, হাজি সেলিমসহ দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিই আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কারণ তাদের সাজা বাতিল হয়নি। যদি হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ সংশোধন করেন বা বাতিল সেটা ভিন্নকথা।
একই কারনে , বেগম খালেদা জিয়া ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় এবং ৭টি সংসদীয় আসনে জয়লাভ করে।
এদিকে, ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বয়কট করেছে বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো। ফলে দলের পক্ষ থেকে অর্থাৎ দলীয় প্রতীকে বিএনপি’র কোনো নেতাকর্মীর এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।
এছাড়া, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ৩০শে নভেম্বর। ফলে বর্তমান সময়ে নতুন করে কারো নির্বাচনে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়।
সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এই পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।